নিউজ ডেস্ক: শেষমেশ এসএসসি ভবনের সামনে থেকে অবস্থান প্রত্যাহার চাকরিহারাদের। সোমবার থেকে তারা ফিরবেন স্কুলে। ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত যাবেন স্কুলে। তবে এসএসসি ভবনের সামনে থেকে অবস্থান তুলে নিলেও তাঁদের অবস্থান চলবে শহিদ মিনারে। জানা গিয়েছে, আংশিক দাবি পূরণ হওয়ায় গরমের ছুটির আগে পর্যন্ত স্কুলে যাবেন যোগ্য শিক্ষকেরা। তবে যোগ্য হয়েও যাঁদের নাম এসএসসির তালিকায় আসেনি, তাঁদের অধিকারের জন্য আন্দোলন জারি থাকবে বলে জানালেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দু’দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি পূরণ না হলে তাঁরা এবার বিকাশ ভবন অভিযান করবে বলে জানিয়েছে।
আগে কী ঘটেছিল?
যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশের দাবিতে গত সোমবার থেকে এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। তবে সেদিন তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। পরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, এভাবে তালিকা প্রকাশ সম্ভব নয়। সেই থেকে এসএসসি ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন চাকরিহারারা। কমিশন ভবনের ভিতরে আটকে রাখা হয় এসএসসি-র চেয়ারম্যানকে। দফায় দফায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে সল্টলেকে। তবে পরে কারা স্কুলে যোগ দিতে পারবেন, সেই তালিকা ডিআই-দের পাঠানো হয়। তারপরই এদিন এসএসসি ভবনের সামনে থেকে অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার কথা জানান চাকরিহারা শিক্ষকরা।
এ প্রসঙ্গে চাকরিহারা শিক্ষকদের তরফে মেহবুব মণ্ডল বলেন, “বেশ কয়েকদিন ধরে এখানে অবস্থান চালাচ্ছিলাম। যে দাবিগুলি নিয়ে অবস্থান চালাচ্ছিলাম, তার আংশিক পূরণ হয়েছে। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত একটা গন্ডগোল রয়েছে। আমরা যোগ্যদের একটা তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছিলাম। সেই তালিকা ডিআই অফিসগুলিতে গিয়েছে। কিন্তু, এই তালিকা যে দায়িত্বের সঙ্গে করা উচিত ছিল, তা হয়নি। শিক্ষকদের রেকর্ড রাখে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। স্কুল সার্ভিস কমিশনকে সেই কাজ করতে বলা হয়েছে, কারণ তারা সুপারিশ করে। সেখানে কিছু ভুল রয়েছে। কারণ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের সুপারিশের পরও হয়তে কেউ চাকরি করেননি, তাঁর নামও চলে এসেছে। অযোগ্য হিসেবে পরিচিত হয়েছে, তাঁর নামও চলে এসেছে। আবার যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে। অনেকে স্কুল পরিবর্তন করেছিলেন, তাঁদের নামও বাদ গিয়েছে। ফলে একটা বড় অংশের শিক্ষক-শিক্ষিকার নাম নথিভুক্ত করা হয়।”
পাশাপাশি এই বিষয়ে চাকরিহারা শিক্ষক সুমন বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনকারী চিন্ময় মণ্ডলকে মারধর করা হয়েছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এই অবস্থান সাময়িকভাবে স্থগিত করেছি। এটা শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য তুললাম।’ একইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী শিক্ষকদের একদিনের জন্য হলেও স্কুলে ফেরা উচিত। আমি সোমবার স্কুলে যাব। রাজ্য সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে। সুপ্রিম কোর্টের যে রায় সেটাকে মান্যতা দেবো’।
আন্দোলনরত আরও এক শিক্ষক বৃন্দাবন ঘোষ, জানান, ‘গতকাল অযোগ্যরা এখানে এসে মিছিল করে অবস্থান শুরু করেছেন এবং যোগ্যদের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়েছে আমাদের যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিরাপত্তার কারণে এবং আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপাতত এখান থেকে অবস্থান প্রত্যাহার করে শহীদ মিনার ফিরে যাচ্ছি। চিনময় মন্ডলকে গতকাল রাতে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ অযোগ্যদের সঙ্গে আমাদের কোন বোঝাপড়া নেই তারা নিজেদের আক্রোশ মেটাতে আমাদের উপর চড়া হয়েছে এটা একেবারেই কাঙ্খিত নয়। গতকালের ঘটনা তীব্র নিন্দা করছি। এসএসসির বেশ কিছু আইনি কাজ রয়েছে আমাদের মামলার বিষয়ে তাই সে কাজ যাতে বাধা প্রাপ্ত না হয় সেই কারণে আন্দোলন থেকে তোলার সিদ্ধান্ত’।
কিন্তু কেন অবস্থান তুলে নেওয়ার কথা জানালেন তাঁরা?
সুপ্রিম রায়ের পর স্কুলে স্কুলে পড়াশোনা প্রায় লাটে উঠছে। শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন প্রায় বন্ধের মুখে। তাই এবার তাঁরা অবস্থান তুলে স্কুলে যোগ দেবেন বলে জানাচ্ছেন। পাশাপাশি, সাংবাদিক বৈঠক থেকে তারা জানান, আদালতের নির্দেশ রয়েছে সেই কারণে আমরা স্কুলে ফিরছি।