নিউজ ডেস্ক: চলতি বছরের ৩০ শে এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে উত্তরাখণ্ডের চারধাম যাত্রা (Uttarakhand Char Dham Yatra)। গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রী ধামের দরজা খোলার মাধ্যমে শুরু হবে এই যাত্রা। প্রতি বছর লক্ষাধিক ভক্ত এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এই যাত্রার সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি জোরদার করেছে। এবার যাত্রীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই আজ শুক্রবার উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ঋষিকেশের ট্রানজিট ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এদিন চারধাম যাত্রার রেজিস্ট্রেশন, অপেক্ষা কক্ষ, পানীয় জল, শৌচাগার, চিকিৎসা সুবিধা এবং ভ্রমণকারী সহায়তা কেন্দ্রের ব্যবস্থা সহ সব দিক পর্যালোচনা করেন তিনি।
এই ট্রানজিট ক্যাম্পটি চারধাম যাত্রা ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগসূত্র, যা ভক্তদের একটি মসৃণ, নিরাপদ এবং সুসংগঠিত ভ্রমণ অভিজ্ঞতা প্রদানের লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে। ভক্তদের যাতে কোনও রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়, সেই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি। আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, সমস্ত ব্যবস্থা সুসংগঠিত, ভক্ত-কেন্দ্রিক এবং সময়সীমাবদ্ধ হতে হবে।
কবে থেকে শুরু হেলিকপ্টার পরিষেবা?
অন্যদিকে প্রতিবারের মত এবারেও উত্তরাখণ্ডের চারধাম যাত্রার জন্য হেলিকপ্টার সার্ভিসের আয়োজন করা হয়েছে। বদ্রীনাথ ধামের দরজা খোলার ঘোষণার পর এই ‘হেলি-সার্ভিস’ শুরু হবে ৫ই মে ২০২৫ থেকে। এই বছর, অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষে ৩০ এপ্রিল চারধাম যাত্রা শুরু হবে এবং বদ্রীনাথের দরজা ৪ মে খোলা হবে। রুদ্রাক্ষ বিমান সংস্থার একজন আধিকারিক নিশ্চিত করেছেন যে তারা এখনও পর্যন্ত হেলিকপ্টার সার্ভিসের জন্য ৪০ টি বুকিং পেয়েছেন।
রুদ্রাক্ষ এভিয়েশনের হেলিকপ্টার সার্ভিস
হেলি কোম্পানি রুদ্রাক্ষ এভিয়েশনের হেলিকপ্টারগুলি জলি গ্রান্ট হেলিপ্যাড থেকে বদ্রীনাথ এবং কেদারনাথে ৫ মে থেকে ওড়া শুরু করবে৷ এই কোম্পানিটি ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে উভয় ধামের জন্য বুকিং শুরু করেছে৷ এখনও পর্যন্ত, প্রায় ৪০ জন ভক্ত বুকিং করেছেন এবং আরও অনেকে প্রতিদিন সংস্থার কাছ থেকে যাত্রা সম্পর্কিত তথ্য চাইছেন। এই বছরও, চারধাম যাত্রার প্রস্তুতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি উভয় ধামের জন্য বুকিং শুরু করেছে। ৪ মে বদ্রীনাথের দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে পরের দিন রুদ্রাক্ষ এভিয়েশনের হেলিকপ্টার পরিষেবা শুরু হবে।
রুদ্রাক্ষ এভিয়েশন গত দুই বছর ধরে বদ্রীনাথ ও কেদারনাথে এমআই ১৭ (MI 17) হেলিকপ্টার চালাচ্ছে। এই বছরও, চারধাম যাত্রার প্রস্তুতি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি উভয় ধামের জন্য বুকিং শুরু করেছে। বদ্রীনাথের দরজা ৪ মে খুলছে, তাই রুদ্রাক্ষ এভিয়েশনের হেলিকপ্টার পরিষেবা ৫ মে থেকে শুরু হবে। হেলিকপ্টারগুলি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে জলি গ্রান্ট হেলিপ্যাডে রাখা হবে।
রুদ্রাক্ষ এভিয়েশন-উভয় মন্দির পরিদর্শনের জন্য দুটি প্যাকেজ
প্রথম প্যাকেজে একই দিনে বদ্রীনাথ ও কেদারনাথের দর্শন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জনপ্রতি এটির দাম ১,২০,০০০। তীর্থযাত্রীরা সকাল ৭ টায় উড়ে যাবেন এবং উভয় মন্দিরে দর্শনের পরে বিকেল ৫ টার মধ্যে জলি গ্রান্ট হেলিপ্যাডে ফিরে আসবেন। দ্বিতীয় প্যাকেজটি হল ৪-দিনের, ৩-রাত্রির ট্রিপ, যার খরচ জনপ্রতি ১,৪০,০০০ টাকা।
তবে জলি গ্রান্ট থেকে উভয় ধামের জন্য বুকিং ২০ জুন ২০২৫ পর্যন্ত খোলা থাকে। এর পরে, যখন বর্ষাকাল শুরু হবে, তখন হেলিকপ্টার পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে এবং বৃষ্টির পরে ফের পরিষেবা চালু হবে। কোম্পানির আধিকারিকদের মতে, অনেক ভক্ত ইতিমধ্যে দুটি ধাম সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন। বিগত বছরের তুলনায় এই বছর চরধাম যাত্রায় আরও বেশি ভক্তের সমাগম হবে বলে আশা করছে এই সংস্থা।
অনলাইন বুকিং ব্যবস্থা আরও সহজ
এবছর চার ধাম যাত্রার জন্য অনলাইন বুকিং ব্যবস্থা আরও সহজ করা হয়েছে। দেহরাদুন আরটিও (প্রশাসন) সুনীল শর্মা লোকাল ১৮-কে জানিয়েছেন যে এক মাস আগে চারধাম যাত্রার জন্য গ্রিন কার্ড দেওয়া হবে। রাজ্যের হোক বা বাইরের হোক, হলুদ প্লেটের সব গাড়ির জন্যই সবুজ কার্ড লাগু করতে হবে। বাস চলাচলের জন্য ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে রোটেশন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে ভক্তদের বাস সরবরাহ করা বিভাগটির প্রথম কর্তব্য।
উল্লেখ্য, এই বছরও যাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ভক্তদের আধার কার্ড, ছবি এবং মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সুবিধা উত্তরাখণ্ড পর্যটন বিভাগের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। যে সমস্ত ভক্তরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না তাঁদের জন্য হরিদ্বার, ঋষিকেশ এবং অন্যান্য বড় স্টপেও অন-সাইট রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়াও ভক্তদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফিটনেস পরীক্ষা করেই বাসগুলোকে যাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়াও, প্রতিটি গাড়িতে জিপিএস সিস্টেম এবং মেডিকেল কিট বাধ্যতামূলকভাবে পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, মে-জুন এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সময়টি চারধাম যাত্রার জন্য সবচেয়ে অনুকূল হিসাবে বিবেচিত হয়। এই সময়ের মধ্যে আবহাওয়া মনোরম থাকে, যা ভ্রমণকে আনন্দদায়ক করে তোলে। জানা গিয়েছে, পর্যটন বিভাগ এবং পরিবহণ দফতর যে হাই-টেক ব্যবস্থা করছে, তা ভক্তদের অভিজ্ঞতাকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে। আর এখনও অব্দি ভক্তদের যা উৎসাজ, তা দেখে এই বছর চারধাম যাত্রা নতুন রেকর্ড গড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।