নিউজ ডেস্ক: নিয়ন্ত্রণরেখায় আবারও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তানি সেনা। গতকালে রাতে নিয়ন্ত্রণরেখার ভারতীয় চৌকিতে ‘বিনা উস্কানিতে’ গুলি চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। দু’রাতের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ‘উস্কানোর’ চেষ্টা করেছে পাকিস্তানি সেনা। পড়শি দেশ ‘বিনা উস্কানিতে’ গুলি চালানোর পাল্টা যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীও। অন্যদিকে, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শনিবার সকালের মধ্যে আরও ৩ জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। এই নিয়ে গত ৩৬ ঘণ্টায় পাঁচ জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। অন্য ৩ সক্রিয় জঙ্গিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অর্থাৎ একেবারে অ্যাকশন মোডে রয়েছে ভারতীয় সেনারা।
নিয়ন্ত্রণরেখায় আবারও যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন পাকিস্তানি সেনার
গতকালে রাতে নিয়ন্ত্রণরেখার ভারতীয় চৌকিতে ‘বিনা উস্কানিতে’ গুলি চালিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। যদিও এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি এখনও। দু’রাতের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ‘উস্কানোর’ চেষ্টা করেছে পাকিস্তানি সেনা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর একাধিক পাক-সেনা চৌকি থেকে গুলি চালানো হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে আলাদা করেছে যে সীমানা, নিয়ন্ত্রণরেখার সেই অংশ বরাবর পাকিস্তানের দিক থেকে গুলি চালানো হয়েছে। পাকিস্তানি সেনা তাদের একাধিক চৌকি থেকে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গুলি চালানোর পর চুপ থাকেনি ভারতীয় সেনাও। যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে প্রতিবেশী দেশের সেনাবাহিনীকে। তবে এই ঘটনায় দু’পক্ষের তরফেই কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় সেনা।
কাশ্মীরজুড়ে সেনার অ্যাকশন
পহেলগাঁওয়ের বদলা নিতে ফুঁসছে দেশ। কাশ্মীরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, শুক্রবার রাত থেকে ৩ লস্কর জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনা। শুক্রবার রাতেই পুলওয়ামার মুরানে লস্করের সক্রিয় জঙ্গি ইশান উল হকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। একইভাবে কুলগাঁওয়ে ২০২৩ সাল থেকে সক্রিয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত জাঁকির আহমেদ গানিয়ার বাড়ি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে শোপিয়ানে সক্রিয় জঙ্গি শহিদ আহমেদ কুতায়ের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনা। ২০০২ সাল থেকে লস্করের সঙ্গে যুক্ত এই জঙ্গি। ঘটনাচক্রে ৩ জঙ্গিই পলাতক। পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে এদের কোনও যোগ ছিল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই নিয়ে গত ৩৬ ঘণ্টায় পাঁচ জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। শুক্রবার বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় পহেলগাঁওয়ে হামলা চালানো জঙ্গি আসিফ শেখের বাড়ি। মঙ্গলবার দুপুরে বৈসরণ ভ্যালি রিসর্টে হামলা চালায় চারজন। তার মধ্যে দু’জন পাকিস্তানি। বাকি দুজন কাশ্মীরের বাসিন্দা। সেই কাশ্মীরি জঙ্গিদের মধ্যে অন্যতম আসিফ শেখ। পহেলগাঁও হামলায় যুক্ত আর এক জঙ্গি আদিল ঠোকর ওরফ আদিল গুরির অনন্তনাগের বাড়িও ধ্বংস করা হয়। সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিল আদিল। দীর্ঘ ট্রেনিংয়ের পর গত বছর সে কাশ্মীরে ফেরে। মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদেরকে পথ দেখিয়েছিল এই আদিল।
জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৩
এদিকে বেছে বেছে জঙ্গিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ধরপাকড়ও চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। শুক্রবার রাত থেকেই সক্রিয় জঙ্গি সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে এদের মধ্যে দুজন পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে যুক্ত। এরা হামলাকারী জঙ্গিদের সহযোগী। সংবাদ সংস্থা এএনআই স্থানীয় পুলিশ সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, জঙ্গিদের দুই সহযোগী কুলগাঁওয়ে লুকিয়ে আছে বলে গোপন সূত্রে খবর মিলেছিল। সেই অনুযায়ী রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় ওই দু’জনকে।
চাপের মুখে সীমান্তে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা পাক সেনার
এমত অবস্থায় কার্যত প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনার তৎপরতায় হাঁটু কাঁপছে পাক সেনার। সূত্রের খবর, কাশ্মীর উপত্যকায় সেনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে চলেছে সরকার। স্যাটেলাইট থার্মাল ইমেজের উপর নজর রাখছে ভারতীয় সেনা। পাক সেনার গতিবিধি সম্পর্কে ইন্টেলিজেন্স ইনপুট বিশ্লেষণ করে পা ফেলছে ভারতীয় সেনা। অ্যান্টি ড্রোন নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। কোনওভাবেই যাতে শত্রুপক্ষের লোকজন এপারে আড়ি পাততে না পারে, কোনওভাবেই যাতে মেঘের আড়ালে থেকে নজরদারি চালাতে না পারে সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে ভারত যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে তা হারেহারে টের পাচ্ছে পাকিস্তান। তাই নজরদারিতে খামতি রাখতে রাজি নয় পাক সেনাও। প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই LAC-তে ব্যাপক হারে সেনা মোতায়েন পাকিস্তানের। সূত্রের খবর, LAC-তে পাকিস্তানের তরফে আগে যে পরিমাণ সেনা মোতায়েন ছিল তা বর্তমানে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় আফগানিস্তানের সীমান্ত থেকে পর্যন্ত পাক সেনাকে সরিয়ে আনা হচ্ছে পূর্ব সীমান্ত বা লাই অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের দিকে। সোজা কথায়, ভারতের চাপে যে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই দরদর করে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে তা তাঁদের গতিবিধি থেকেই স্পষ্ট। এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশের।
যুদ্ধ বা আক্রমণের ক্ষেত্রে কোন দেশ বেশি শক্তিশালী?
এ প্রসঙ্গে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ২০২৫ এর প্রতিবেদন উঠে এসেছে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা। এই প্রতিবেদন অনুসারে, ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির তালিকায় ভারত চতুর্থ স্থানে রয়েছে, যেখানে পাকিস্তান ১২তম স্থানে রয়েছে।
ভারত
ভারতের শক্তি ভূমি থেকে শুরু হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ১৪.৪৪ লক্ষ সক্রিয় সৈন্য রয়েছে, যেখানে ১১.৫৫ লক্ষ রিজার্ভ বাহিনী এবং ২৫.২৭ লক্ষ আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে। সেনাবাহিনীর যুদ্ধশক্তিতে আধুনিক এবং দেশীয় প্রযুক্তির এক চমৎকার মিশ্রণ রয়েছে। ভারতের মোট ৪২০১টি ট্যাঙ্ক রয়েছে। এতে অর্জুন ট্যাঙ্ক, টি-৯০ ভীষ্মের মতো বিপজ্জনক ট্যাঙ্কগুলি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে অজেয় করে তোলার ক্ষমতা রাখে। অর্জুন ট্যাঙ্কটি ভারতে তৈরি করা হয়েছে, অন্যদিকে টি-৯০ ভীষ্ম রাশিয়ার তৈরি, যা পরে ভারত দ্বারা আপগ্রেড করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে পিনাকা রকেট সিস্টেম, ব্রহ্মোস মিসাইল, বোফর্স এবং হাউইটজার কামান রয়েছে। এই অস্ত্রগুলি সহজেই শত্রুকে পরাজিত করতে পারে।
পাকিস্তান
আর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কথা বলতে গেলে, তাদের ৬.৫৪ লক্ষ সক্রিয় সৈন্য এবং প্রায় ৩৭৪২টি ট্যাঙ্ক, ৫০৫২৩টি সাঁজোয়া যান এবং ৭৫২টি স্ব-চালিত আর্টিলারি ইউনিট রয়েছে। এছাড়াও ৬৯২টি রকেট লঞ্চার রয়েছে। পাকিস্তানের ট্যাঙ্ক সংখ্যা ২৬২৭, যা ভারতের অর্ধেক।
বিমান বাহিনী-অন্যদিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর মোট ২২২৯টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৬০০টি যুদ্ধবিমান, ৮৩১টি সহায়তা বিমান, ৮৯৯টি হেলিকপ্টার এবং ৫০টিরও বেশি ইউএভি। এর পাশাপাশি, ভারতের কাছে সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাফালে যুদ্ধবিমান, সুখোই সু-৩০এমকেআই, মিরাজ-২০০০, মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। এছাড়াও, ভারতীয় বিমান বাহিনী ব্রহ্মোস, অস্ত্র, রুদ্রম এবং আকাশের মতো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা দিয়ে সজ্জিত। পাকিস্তানের ১৩৯৯টি বিমান রয়েছে, যার মধ্যে ৩২৮টি যুদ্ধবিমান, ৬৪টি পরিবহন বিমান, ৫৬৫টি প্রশিক্ষণ বিমান এবং ৩৭৩টি হেলিকপ্টার। এতে ৫৭টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার এবং ৪টি বিমানবাহী ট্যাঙ্কারও রয়েছে। এখানেও, ভারতীয় বিমান বাহিনী কেবল সংখ্যায় নয়, যুদ্ধক্ষমতা এবং পরিসরের দিক থেকেও অনেক এগিয়ে।
নৌবাহিনী- ভারতের সামুদ্রিক সীমান্তে নিরাপত্তা-ভারতীয় নৌবাহিনী দ্রুত সম্প্রসারণ করছে এবং আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের ১৫০টি যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্যের মতো বিমানবাহী জাহাজ এবং পারমাণবিক সাবমেরিন, যেখানে ধানুশ এবং কে-১৫-এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। ভারতীয় নৌবাহিনীতে মোট ১,৪২,২৫২ জন সক্রিয় সৈনিক রয়েছেন। পাকিস্তান নৌবাহিনীর ১১৪টি জাহাজ, ৮টি সাবমেরিন এবং ৯টি ফ্রিগেট যুদ্ধজাহাজ রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাকিস্তান তার নৌশক্তি বৃদ্ধি করেছে, তবুও ভারতের নৌবাহিনী পাল্লা, নেটওয়ার্কিং এবং পারমাণবিক সক্ষমতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়েছে পহেলগাঁওয়ের বৈসারন উপত্যকায়। পর্যটকদের ধর্মীয় পরিচয় জেনে, বেছে বেছে হিন্দু পুরুষদের টার্গেট করে, মাথায় গুলি করেছে জঙ্গিরা। কাশ্মীরের এই জঙ্গি হানায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। কেউ চোখের সামনে শেষ হতে দেখেছেন বাবাকে। কোথাও স্ত্রী, সন্তানের সামনে শেষ করে দেওয়া হয়েছে পরিবারের কর্তাকে। তবে মহিলা এবং শিশুদের ছেড়ে দিয়েছে জঙ্গিরা। আর এই হামলার পরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নেমেছে ভারত।