নিউজ ডেস্ক: ভারত পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে যখন উত্তেজনার পারদ চড়ছে ঠিক তখনই পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার লন্ডনে পাক হাই কমিশনের বাইরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল প্রবাসী ভারতীয়রা। কিন্তু সেই বিক্ষোভ সহ্য করতে পারেনি পাকিস্তান। জানা গিয়েছে সেসময় লন্ডনের পাক হাইকমিশনার অফিসের বারান্দা থেকে এক পাক সেনাকর্তা বেরিয়ে এসে রীতিমতো সর্বসমক্ষে গলা কেটে নেওয়ার হুমকি দেন বিক্ষোভকারীদের। যার ছবি ধরা পড়েছে ভিডিয়োয়।
ভাইরাল ভিডিও
ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে যে সেনাকর্তাকে দেখা গিয়েছে সূত্রের খবর তাঁর নাম কর্নেল তৈমুর রাহত। এই মুহূর্তে তিনি লন্ডনে পাকিস্তান হাই কমিশনের সেনা ও বায়ুসেনা উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত। বিক্ষোভ চলাকালীন বাইরে এসে হাত দিয়ে গলা কেটে নেওয়ার ভঙ্গী করেন তিনি। তাঁর ওই ভঙ্গী থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সামাজিক মাধ্যমে এই ভিডিও ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। ক্ষোভ উগরে দেন নেটিজেনরা।
মানিকন্ট্রোল সূত্রে খবর, লন্ডনের পাক হাইকমিশনার অফিসের বারান্দা থেকে এই সামরিক অফিসার বের হয়ে আসেন। তার হাতে ছিল অভিনন্দন বর্তমানের পোস্টার। এই ভারতীয় বায়ুসেনার অফিসারকেই পাকিস্তান থেকে কূটনৈতিক চাল দিয়ে ফেরত নিয়ে এসেছিল ভারত। এদিন সামরিক অফিসারটি অভিনন্দন বর্তমানের পোস্টার হাতে নিয়ে এসে বারান্দা থেকে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করেন।
ভিডিও লিঙ্ক-
https://x.com/Cyber_Huntss/status/1915924602066506093?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1915924602066506093%7Ctwgr%5Ebb9c9f342e90aa1595a15cea34a5e87129f77437%7Ctwcon%5Es1_&ref_url=https%3A%2F%2Ftv9bangla.com%2Fworld%2Fvideo-goes-viral-of-pakistan-officials-in-uk-seen-making-throat-slit-gesture-towards-pahalgam-attack-protestors-1188832.html
জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল প্রবাসী ভারতীয়রা
মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ দেখান সেখানকার প্রবাসী ভারতীয়রা। সূত্রের খবর সেই দলে মূলত ছিলেন হিন্দুরাই। এছাড়াও ভারতীয়দের পাশাপাশি ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০০ প্রতিবাদকারী এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের দাবি পাকিস্তান আসলে সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়। ভারতের পতাকা, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ছিল বিক্ষোভকারীদের হাতে। পাকিস্তান বিরোধী স্লোগানও শোনা যায় তাঁদের মুখে। ইতিমধ্যেই হামলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই নিয়ে চলছিল বিক্ষোভ।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ
বিক্ষোভকারীরা জানান, বাইরে যখন তাঁরা প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন, ভিতরে তখন তারস্বরে গান বাজছিল। প্রতিবাদীরা জানান, সবচেয়ে লজ্জাজনক বিষয় হল, ন্যায়বিচারের দাবিতে যখন প্রতিবাদ চলছে, পাকিস্তান হাই কমিশনের কর্মীরা ভিতরে তখন জোরে গান বাজিয়ে উসযাপনে মত্ত। আমাদের ক্ষততে আরও বেশি করে অবমাননার আঘাত হানছেন। সারা বিশ্ব যখন শোকপ্রকাশ করেছে, তখন পাকিস্তান হাই কমিশনের এই আচরণ তাদের সহানুভূতি এবং মানবিক শিষ্টাচারের অভাবকেই তুলে ধরে। এই অসংবেদনশীল আচরণকে ধিক্কার।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবাদে সামিল এক ইহুদী বলেন, যেভাবে জঙ্গিরা হামলা করেছে তার প্রতিবাদে তারা সরব হয়েছেন। ভারতের পাশে তারা থাকবেন। যে কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করা হয়েছে তাতে আরেক প্রতিবাদী বলেন, এটি একটি নোংরা মানসিকতার পরিচয়। এর থেকে বোঝা যায় পাকিস্তান কী চায়। এক নেটিজেন লেখেন, এই ধরণের ব্যবহার প্রমাণ করে পাকিস্তানের শিক্ষা কোন দিকে।
সুর নরম পাক প্রধানমন্ত্রীর, বলছেন ‘শান্তি চাই’
এদিকে যখন লন্ডনে পাকিস্তান হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ চলছে অন্যদিকে তখন ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে মুখ খুললেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার বিষয়ে তিনি জানান, ‘পাকিস্তান নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত’। তবে তার সঙ্গে সতর্কবার্তাও দিয়ে দেন তিনি। জানান, ‘আমরা সবসময় শান্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছি। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও আপস নয়’।
উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারান ২৬ জন পর্যটক। হামলার পিছনে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার একটি শাখার নাম উঠে আসার পর থেকে ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এই ঘটনার জন্য ভারত দায়ী করে পাকিস্তানকেই। তবে পাকিস্তানের মন্ত্রী ও নেতারা হামলাটিকে ভারতের ‘চাল’ বলে দাবি করেন। তাদের মতে, এটি একটি ‘ভুয়ো ঘটনা’। যার উদ্দেশ্য ‘অঞ্চলে সঙ্কট তৈরি করা’।
তবে শাহবাজ শরিফের বক্তব্যের পর মনে করা হচ্ছে আগ্রাসন থেকে কিছুটা হলেও সরে এসেছে পাকিস্তান। পাক প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, ‘পাকিস্তান চায় শান্তি। তবে দেশের সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে কখনও আপস করা হবে না। কেউ ভুল করলে তার তদন্ত হোক, কিন্তু সেটা হোক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ’।