নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত ছাব্বিশ জন পর্যটকের মধ্যে ছিলেন বাংলার তিনজন। তাঁর মধ্যে দু’জন আবার কলকাতার। শনিবার সেই বিতান অধিকারী ও সমীর গুহর বাড়িতে পৌঁছল এনআইএ (NIA)-র টিম। তাঁরা গিয়ে গোটা বিষয়টি শুনবে। তদন্ত করবে বলেও জানা যাচ্ছে।
এখনও পরিবারের শোক কাটেনি। তার মধ্যেই আজ, শনিবার সমীর গুহ এবং বিতান অধিকারীর বাড়িতে গিয়ে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গোটা ঘটনাটি শুনতে চান। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? এই প্রশ্ন ছিল তদন্তকারীদের বলে সূত্রের খবর। শনিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বেহালায় সমীর গুহর বাড়িতে পৌঁছয় এনআইএ (NIA) আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারি ছিলেন তিনি। এ দিন বাড়িতে পৌঁছে সমীরবাবুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা। এরপর তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে পাটুলিতে অবস্থিত বিতান অধিকারীর বাড়িতেও যান। জানা গিয়েছে এদিন, নিহত সমীর গুহের মেয়ে, স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সমস্ত তথ্য জেনে নেন তদন্তকারীরা। বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনীর কাছ থেকেও সব জেনে নেন তাঁরা। এবার শুরু হবে তদন্ত।
সূত্রের খবর, তবে শুধু বিতান বা সমীরের বাড়ি নয় পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্রের বাড়িতেও গোয়েন্দারা পৌঁছবেন বলেও জানা যাচ্ছে।
জানা গিয়েছে এদিন জঙ্গিদের কথোপকথন কী ছিল থেকে শুরু করে তখন যা ঘটেছিল সবটা মনে করতে বলেন তদন্তকারী অফিসাররা। সেখান থেকেই খুঁজে বের করতে চান আসল তথ্য। যেটা পরবর্তী ক্ষেত্রে কাজে আসবে। যে সব তথ্য মিলবে তার উপর কাজ শুরু হবে। যেগুলি মিলবে না সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। জঙ্গিদের ধরতে গেলে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে এই তথ্যগুলি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলা নিয়ে এনআইএ টিম ভূস্বর্গের পুলিশকে সাহায্য করছে। গোটা দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির দল যেসব পর্যটকদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছেছে। গতকাল কেন্দ্রীয় এজেন্সির টিমের দু’জন অফিসার পুণের বাসিন্দা সন্তোষ জগদলের বাড়িতেও যান। আজ কলকাতায় কাজ শুরু করেন তদন্তকারীরা।
উল্লেখ্য, বেহালার সমীর গুহ (Samir Guha) স্ত্রী শবরী ও মেয়ে কৃশার সঙ্গে গিয়েছিলেন কাশ্মীর বেড়াতে। ফিরে আসার কথা ছিল বুধবার। তার আগেই সব শেষ। শবরী দেবীর বর্ণনায়, ঘটনার কিছুক্ষন আগে পরিবার ছবি তুলছিল। হঠাৎ গুলির শব্দ আসে। স্থানীয়রা শুয়ে পড়তে বললেও, এরই মধ্যে মুখে মাস্ক পরে সামনে আসে জঙ্গিরা। সমীর গুহকে টেনে নিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় তারা।
অন্যদিকে আইটি কর্মী বিতান অধিকারীও (Bitan Adhikari) স্ত্রী ও সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে। পহেলগাঁও হিল স্টেশন থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন তিনি। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহতদের মরদেহ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার মণীশ রঞ্জনও (Manish Ranjan) ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে। পরিবারের সামনেই ঘটে যায় নারকীয় কাণ্ড। জানা গিয়েছে, গত দু’বছর হায়দরাবাদে কর্মরত ছিলেন তিনি।
হামলার টার্গেট হিন্দুরাই
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল বিকেলে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় ঘোরার সময়ে আচমকাই জঙ্গি হামলা ঘটে। উপত্যকা বেষ্টিত এলাকায় গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চার জঙ্গি গুলিবৃষ্টি শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, পর্যটকদের ধর্ম পরিচয় জেনে তবেই নিকেশ করা হয়। বেছে বেছে হিন্দুদের হত্যা করেছে জঙ্গিরা। আবার হামলা থেকে বেঁচে ফেরা কারও কারও বক্তব্য, ধর্মপরিচয় জানতে চায়নি জঙ্গিরা। ফলে এনিয়ে বিভ্রান্তি থাকছে। তবে বাস্তব এই যে, নিহত ২৬ জনের মধ্যে একজন বাদে সকলেই হিন্দু। জঙ্গি হামলা রুখতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন উপত্যকারই বাসিন্দা, টুর গাইড সইদ আদিল হোসেন। এই হামলার টার্গেট যে হিন্দুরাই, তাতে কোনও সংশয় নেই।