নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁও, কাশ্মীরের মিনি সুইজারল্যান্ড বলে পরিচিত। আর ছবির মতো সুন্দর এই জায়গায় দলে দলে আসেন পর্যটকরা। সম্প্রতি সন্ত্রাসের ‘রক্তাক্ত নজর’ পড়েছিল কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়া সেই পর্যটকদের উপর। একের পর এক পর্যটককে গুলি করা হয়েছিল। আতঙ্কে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল পর্যটকরা।
ওই ঘটনার পর পর্যটকদের অনেকেই কাশ্মীর ছেড়ে জম্মুতে চলে গিয়েছিলেন। যাঁদের জম্মু থেকে কাশ্মীর যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, তাঁদের অনেকে সেই পরিকল্পনা বাতিল করে দ্রুত ফেরার চেষ্টা করেছেন। এর জেরে এক ধাক্কায় পর্যটকদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছে উপত্যকায়। যেখানে প্রত্যেক দিন পাঁচ থেকে সাত হাজার পর্যটকের আনাগোনা, সেখানে পর্যটকের সংখ্যা একধাক্কায় নেমে গিয়েছিল ৫০-১০০ জনে। জম্মু-কাশ্মীর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাবর চৌধরি বলেন, ‘‘পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর অন্তত ১৩ লাখ বুকিং বাতিল হয়েছে।’’
তবে ধীরে ধীরে কাটছে আতঙ্ক। আবারও ভিড় জমতে দেখা যাচ্ছে ভূস্বর্গে। শনিবার ওই এলাকায় ফের কয়েকজন পর্যটকের দেখা মিলেছে। পহেলগাঁওয়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় সেলফি পয়েন্টে তাঁরা ছবি তুলছিলেন বলে খবর। লিডার নদীর ধারেই এই সেলফি পয়েন্ট। সেখানেই তাঁরা ছবি তুলছিলেন। বেশিরভাগ পর্যটকই বলেছেন, পহেলগাঁও যাওয়ার ক্ষেত্রে যেহেতু কোনও বাধা নেই সেক্ষেত্রে ছুটি পেয়েই তাঁরা পহেলগাঁওতে এসেছেন। অন্যদিকে হোটেলগুলির তরফে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য স্পেশাল কিছু ডিসকাউন্টও দেওয়া হচ্ছে। এমনকী কিছু রেস্তরাঁতে একটি করে ফ্রি মিলও দেওয়া হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ দোকানপাট এখনও বন্ধ রয়েছে। চারদিকে সেনার কড়া নজর। অন্যদিকে, পর্যটকরা যাতে পহেলগাঁওতে আসেন সেব্যাপারে বার বার আবেদন করেছেন সেখানকার সাধারণ মানুষ। তাঁরা মিছিল বের করেছেন এই জঙ্গি হানার বিরুদ্ধে। তাঁরা বার বার বলেছেন আমরা প্রাণ দিয়ে এই জঙ্গিদের মোকাবিলা করব।
গত এক সপ্তাহে কাশ্মীরে ঘটে গেছে অনেক কিছু। নড়ে গিয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কও। আজকের এই প্রতিবেদনে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিগত দিনগুলির ঘটনাক্রম।
ফিরে দেখা পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা
গত ২২ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা ২ থেকে ৩ জন সন্ত্রাসী বৈসরণ এলাকায় এসে ঘোড়ায় চড়ে আসা পর্যটকদের উপর গুলি চালায়। সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে মারা যান ২৬ জন পর্যটক।
ভাইরাল ভিডিও
হামলার পরে একটি ভাইরাল ভিডিওতে (Jammu Kashmir Attack Viral Video) দেখা যায়, এক মহিলা ভেঙে পড়েছেন কান্নায়। গলা বুজে আসছে তাঁর। কাতর স্বরে বারবার বলছেন, ‘আমার স্বামীকে বাঁচান প্লিজ।’ ভিডিওয় দেখা গেছে, তাঁর পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন দুই ব্যক্তি। দেখে বোঝা যাচ্ছে, তাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক। অন্য এক মহিলা জানান, তিনি ভেলপুরি খাচ্ছিলেন, সেই সময়েই এক বন্দুকধারী এসে তাঁর স্বামীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। তিনি বলেন, ‘ওরা আমার স্বামীকে বলছিল, তুমি মুসলিম নও, তারপরেই গুলি চালায়।’ আরও একজন আহত পর্যটককে সাহায্য করতে গিয়ে এক মহিলা বারবার বলতে থাকেন, ‘স্যার, প্লিজ প্লিজ সাহায্য করুন, কাউকে ডাকুন।’ ঘটনার পরেই চারপাশে আতঙ্ক, রক্তপাত ও হাহাকার যেন ছড়িয়ে পড়ে। ওই এলাকায় পর্যটকদের ভিড়ে মিশে ছিল জঙ্গিরা। পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।
ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে পর্যটকদের মধ্যে
যে এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে, সেই বাইসারান প্রথমসারির পর্যটন কেন্দ্র। কাশ্মীরে ঘোরার জায়গা হিসেবে প্রথমেই আসে পহেলগাঁওয়ের নাম। সেই পহেলগাঁওয়ে রয়েছে এই বাইসারান। প্রতি বছর সেখানে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসেন। এমন ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে পর্যটকদের (Tourists) মধ্যে।
অমিত শাহকে পহেলগাঁওয়ে যেতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
কাশ্মীরের এই জঙ্গি হামলার খবর পেতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকী প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশও দিয়েছিলেন।
প্রায় দু’দশকের ব্যবধানে কাশ্মীর উপত্যকার এত বড় হামলার শিকার হলেন পর্যটকেরা। স্থানীয় সূত্রের দাবি, জঙ্গিরা এসেছিল সেনার পোশাক পরে। সব মিলিয়ে ৪০ রাউন্ড গুলি চলেছে। মূলত আক্রমণ করা হয় অমুসলিমদের। ইতিমধ্যেই হামলার দায় স্বীকার করেছে লস্করের টিআরএফ বা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। জানা যাচ্ছে, এই হামলার যুক্ত থাকা জঙ্গিদের বেশিরভাগই বিদেশি।
প্রকাশ্যে মৃতের তালিকা
ইতিমধ্যেই এই ভয়ংকর জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রকাশ্যে এসছে মৃতের তালিকা। মঙ্গলবার রাতে সরকারিভাবে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে এই জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। মৃতের তালিকায় রয়েছেন, ২৬ বছর বয়সি নৌসেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। গত ১৬ এপ্রিল বিয়ে হয়েছিল তাঁর স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। প্রাণ হারিয়েছেন এক আইবি আধিকারিক। এছাড়া, নেপাল ও আরব আমিরশাহীর বাসিন্দা দুই বিদেশিকেও হত্যা করেছে জঙ্গিরা।
এছাড়াও নিহতদের মধ্যে ওড়িশার বালাসোর জেলার রেমুনা এলাকার বাসিন্দা প্রশান্ত সৎপথী নামে এক পর্যটকও রয়েছেন। জানা গিয়েছে, প্রশান্ত তার স্ত্রী ও ছেলের সাথে পহেলগামে ঘুরতে গিয়েছিলেন, তবে গতকাল জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় তার। যদিও তার স্ত্রী ও ছেলে নিরাপদে আছেন বলে জানা গেছে।
এর পাশাপাশি তালিকায় দেখা যাচ্ছে, মৃতের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ুর বাসিন্দারা। যদিও বেসরকারি মতে এই জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের।
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় বাংলার কে কে মারা গেলেন?
১। মণীশরঞ্জন মিশ্র
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় মৃতদের মধ্যে পুরুলিয়ার এক ব্যক্তি রয়েছেন। মৃতের নাম মণীশরঞ্জন মিশ্র। তাঁর বাড়ি ঝালদা পৌরসভা এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরোনো বাঘমুন্ডি রোডে। তিনি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো(IB) অফিসার ছিলেন। বর্তমানে কর্মসূত্রে পরিবার নিয়ে হায়দরাবাদে থাকতেন। জানা গিয়েছে, গতকালই পরিবার নিয়ে পহেলগাঁওতে বেড়াতে গিয়েছিলেন মণীশ। সেখানেই স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে তাঁর মৃত্যু হয়।
২। বিতান অধিকারী
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় কলকাতার এক যুবকেরও মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম বিতান অধিকারী। বেহালার বৈশালী পার্কের বাসিন্দা তিনি। স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে কাশ্মীরের বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানেই গতকাল জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
৩। সমীর গুহ
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত হয়েছেন বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ।
পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত-সংযুক্ত সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র
সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওে (Kashmir Terror Attack) ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন। তদন্তে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত-সংযুক্ত সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র প্রকাশ পাওয়ায় দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা, ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস), পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে।
জম্মু এবং কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের হত্যালীলার পর গোটা দেশে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রত্যাঘাতের দাবি উঠছে দেশের সর্বত্র। বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় বৈঠক চলেছে নয়াদিল্লিতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কাশ্মীর উপত্যকার বাস্তব চিত্র দেখে এসেছেন। শেষে সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে বৈঠকের পর ‘প্রত্যাঘাত’ করল ভারত।
পাকিস্তানিদের ‘সার্ক’ ভিসা বাতিল, সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা-সহ ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া বন্ধ না করা পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। তবে হামলায় জড়িত জঙ্গিদের এখনও সন্ধান মেলেনি। তাঁদের খোঁজে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা জুড়ে অভিযান চালাচ্ছে বাহিনী।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন পদক্ষেপ
১। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল
বুধবার বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি জানান, এই মুহূর্ত থেকে সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করা হল। যতদিন না পর্যন্ত পাকিস্তান সীমান্ত সন্ত্রাস থামাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত এই চুক্তি কার্যকর থাকবে না।
২। বন্ধ করা হবে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত
এছাড়াও অবিলম্বে বন্ধ করা হবে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত। বৈধ কারণে যাঁরা ওই পথ দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের ১মে’র মধ্যে ভারতে ফিরতে হবে।
৩। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল
আগামী দিনে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করল ভারত। বর্তমানে যেসব পাকিস্তানিরা ভারতে রয়েছেন তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।
৪। দুই দেশের হাই কমিশন থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে সামরিক পরামর্শদাতাদের
এছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান-দুই দেশের হাই কমিশন থেকেই সরিয়ে নেওয়া হবে সামরিক পরামর্শদাতাদের। পাক হাইকমিশনের এই পদগুলি ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ বলে ঘোষণা করল নয়াদিল্লি।
৫। হাইকমিশনের সামগ্রিক লোকবল কমানোর সিদ্ধান্ত
হাইকমিশনের সামগ্রিক লোকবল ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা ১ মে এর মধ্যে কার্যকর হবে।
পর্যটকদের উপর হামলার পরেই বৈঠকে বসে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে এই বৈঠক চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ছিলেন এই বৈঠকে। দীর্ঘ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদেশ সচিব। সেখানেই তিনি জানান, পহেলগাম হামলার তীব্র প্রতিবাদ করে ভারত এই সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে।
হামলার পর ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলি চার সন্দেহভাজন জঙ্গির স্কেচ, নাম-পরিচয় প্রকাশ করেছে। হামলায় যুক্ত চার জঙ্গি হল- আদিল, আসিফ ফুজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা। মূলচক্রী সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি এই জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম মাথা। ভারতের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত সইফুল্লা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই চার জঙ্গিই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-এর সদস্য। তবে জঙ্গিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করলেও তাদের টিকি এখনও ছুঁতে পারেনি নিরাপত্তা বাহিনী। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান থেকে এসে হামলা চালিয়ে তারা আবার সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার চাদরে মোড়া জম্মু-কাশ্মীরে তারা কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকল, সেনা-পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পহেলগাঁওয়ের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছে গেল, বৈসরনের মতো নামী পর্যটনকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না কেন, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এতজনকে খুন করে তারা আবার নির্বিঘ্নে কীভাবে পালিয়ে গেল, এমন বহু প্রশ্নের এখনও কোনও উত্তর নেই।
কাশ্মীর হামলার পর জঙ্গিদের খোঁজে উপত্যকা তোলপাড় করে ফেলছে নিরাপত্তা বাহিনী। আর এরইমধ্যে এক জঙ্গির সম্পর্কে জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য। পহেলগাঁওয়ের হামলাকারীদের মধ্যে এক জঙ্গি আসিফ। এই আসিফ খচ্চরের সহিস সেজেছিল। এক পর্যটকের ফোনেই মিলল জঙ্গির ছবি। তিনিই জানালেন কীভাবে তাদের ধর্ম জানার চেষ্টা করা হচ্ছিল।
ফোনেই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা?
পহেলগাঁওতে বেছে বেছে হিন্দু নিধন করা হয়েছে। গুলি চালানোর আগে জঙ্গিরা জেনেছে নাম পরিচয় ও ধর্ম। পরিচয় নিশ্চিত করতে পুরুষদের প্যান্ট খোলানো হয়। তারপরই মাথায় গুলি। একতা তিওয়ারি নামক এক পর্যটক মুখোমুখি হয়েছিলেন আসিফের। তাঁর সঙ্গে বচসাও হয়। তবে তখনও তারা জানতেন না কিছুক্ষণ পর এই আসিফই গুলি করে হত্যা করবে। একতা জানান, তাঁর কাছে যখন ধর্ম জানতে চাওয়া হয়েছিল, তখনই তিনি আসিফের ছবি তুলে রাখেন ফোনে। আসিফ নামের ওই জঙ্গি কাছে লুকানো ছিল মোবাইল। সেই ফোনেই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলছিল বলেও জানান তিনি।
একতা আরও বলেন, “এই সময়ই জঙ্গি আসিফের কাছে ফোন আসে। পায়ে মোজায় লুকানো ছিল ওই মোবাইল। ফোনে কথা বলার সময় আসিফ বলে, ২০ জনের গ্রুপ আসছে। ব্রেক ফেল হয়নি, প্ল্যান বি। ৩৫টা বন্দুক আমি ঘাঁটিতে পাঠিয়ে দিয়েছি, আর পুরো বাক্স পাঠাচ্ছি।” আর এই খবর প্রকাশ্যে আসার কিছু সময়ের মধ্যেই এই জঙ্গির বাড়ি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, প্রশাসনের তরফেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
জঙ্গি আসিফ ও আদিলের বাড়িই বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিল সেনা
উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হানায় যে চারজন জঙ্গি যুক্ত ছিল, তার মধ্যে দুইজন কাশ্মীরেরই বাসিন্দা। একজনের নাম আদিল গুরে ও অন্যজনের নাম আসিফ শেখ। আদিল অনন্তনাগের বাসিন্দা। আসিফের বাড়ি জম্মু-কাশ্মীরের ত্রালে। বৃহস্পতিবার রাতে আসিফ শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনী। তল্লাশি চলাকালীনই তাদের নজরে আসে যে বাড়িতে বিস্ফোরক জাতীয় কিছু মজুত করা রয়েছে। সেনাবাহিনীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে, এটা আশঙ্কা করেই তড়িঘড়ি সেনারা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। বাড়ি থেকে বেরতেই বিস্ফোরণ হয়।
আসিফের পর আরেক লস্কর-ই-তৈবা জঙ্গি আদিল ঠোকারের বাড়িও বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়। দক্ষিণ কাশ্মীরের বিজবেরায় বাড়ি ছিল তাঁর। পহেলগাঁওয়ের বৈসরণে জঙ্গিহানায় তাঁর ভূমিকা সামনে আসতেই প্রশাসনের তরফে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়।
রাতভোর ভারতে লক্ষ্য করে গুলি, পাল্টা জবাব দিচ্ছে সেনাও
তবে এত কিছুর পরেও থামছেনা পড়শি দেশ। বেড়েই চলেছে বেয়াদপি। জম্মু-কাশ্মীরের জঙ্গি হানার পর ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ভারত। কিন্তু এরপরেও বৃহস্পতিবার রাতভর নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে পাকিস্তানি পোস্টগুলি থেকে ভারতে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। তবে চুপ করে থাকেনি ভারতীয় সেনাবাহিনীও। গুলির জবাব গুলি দিয়েই দিয়েছে তারা।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল রাতভর পাকিস্তানের দিক থেকে গুলি উড়ে এসেছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর যে পাকিস্তানি পোস্ট বা ঘাঁটি রয়েছে, সেখান থেকেই গুলি চালানো হয়েছে। ভারতীয় সেনাও পাল্টা জবাব দিয়েছে পাকিস্তানকে। গুলির লড়াইয়ে ভারতের দিকে কোনও হতাহতের খবর মেলেনি। পাকিস্তানে কোনও প্রাণহানি হয়েছে কি না, তা এখনও জানা যায়নি।
কাশ্মীরজুড়ে সেনার অ্যাকশন
পহেলগাঁওয়ের বদলা নিতে ফুঁসছে দেশ। কাশ্মীরের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, গত শুক্রবার রাত থেকে ৩ লস্কর জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনা। শুক্রবার রাতেই পুলওয়ামার মুরানে লস্করের সক্রিয় জঙ্গি ইশান উল হকের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। একইভাবে কুলগাঁওয়ে ২০২৩ সাল থেকে সক্রিয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত জাঁকির আহমেদ গানিয়ার বাড়ি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শনিবার সকালে শোপিয়ানে সক্রিয় জঙ্গি শহিদ আহমেদ কুতায়ের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনা। ২০০২ সাল থেকে লস্করের সঙ্গে যুক্ত এই জঙ্গি। ঘটনাচক্রে ৩ জঙ্গিই পলাতক। পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে এদের কোনও যোগ ছিল কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই নিয়ে পাঁচ জঙ্গির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। শুক্রবার বিস্ফোরণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় পহেলগাঁওয়ে হামলা চালানো জঙ্গি আসিফ শেখের বাড়ি। মঙ্গলবার দুপুরে বৈসরণ ভ্যালি রিসর্টে হামলা চালায় চারজন। তার মধ্যে দু’জন পাকিস্তানি। বাকি দুজন কাশ্মীরের বাসিন্দা। সেই কাশ্মীরি জঙ্গিদের মধ্যে অন্যতম আসিফ শেখ। পহেলগাঁও হামলায় যুক্ত আর এক জঙ্গি আদিল ঠোকর ওরফ আদিল গুরির অনন্তনাগের বাড়িও ধ্বংস করা হয়। সূত্রের খবর, ২০১৮ সালে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিল আদিল। দীর্ঘ ট্রেনিংয়ের পর গত বছর সে কাশ্মীরে ফেরে। মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদেরকে পথ দেখিয়েছিল এই আদিল।
জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার ৩
এদিকে বেছে বেছে জঙ্গিদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ধরপাকড়ও চালাচ্ছে ভারতীয় সেনা। শুক্রবার রাত থেকেই সক্রিয় জঙ্গি সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছে এদের মধ্যে দুজন পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে যুক্ত। এরা হামলাকারী জঙ্গিদের সহযোগী। সংবাদ সংস্থা এএনআই স্থানীয় পুলিশ সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, জঙ্গিদের দুই সহযোগী কুলগাঁওয়ে লুকিয়ে আছে বলে গোপন সূত্রে খবর মিলেছিল। সেই অনুযায়ী রাতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। শনিবার সকালে গ্রেপ্তার করা হয় ওই দু’জনকে।
জঙ্গি হামলার তদন্তে এনআইএ
এখনও পরিবারের শোক কাটেনি। তার মধ্যেই গত শনিবার সমীর গুহ এবং বিতান অধিকারীর বাড়িতে গিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গোটা ঘটনাটি শুনতে চান। ঠিক কী হয়েছিল সেদিন? এই প্রশ্ন ছিল তদন্তকারীদের বলে সূত্রের খবর। শনিবার বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ বেহালায় সমীর গুহর বাড়িতে পৌঁছয় এনআইএ (NIA) আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারি ছিলেন তিনি। এ দিন বাড়িতে পৌঁছে সমীরবাবুর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির আধিকারিকরা। এরপর তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে পাটুলিতে অবস্থিত বিতান অধিকারীর বাড়িতেও যান। জানা গিয়েছে এদিন, নিহত সমীর গুহের মেয়ে, স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার সমস্ত তথ্য জেনে নেন তদন্তকারীরা। বিতান অধিকারীর স্ত্রী সোহিনীর কাছ থেকেও সব জেনে নেন তাঁরা। এবার শুরু হবে তদন্ত। সূত্রের খবর, তবে শুধু বিতান বা সমীরের বাড়ি নয় পুরুলিয়ার ঝালদার বাসিন্দা মণীশরঞ্জন মিশ্রের বাড়িতেও গোয়েন্দারা পৌঁছবেন বলেও জানা যাচ্ছে।
জানা গিয়েছে এদিন জঙ্গিদের কথোপকথন কী ছিল থেকে শুরু করে তখন যা ঘটেছিল সবটা মনে করতে বলেন তদন্তকারী অফিসাররা। সেখান থেকেই খুঁজে বের করতে চান আসল তথ্য। যেটা পরবর্তী ক্ষেত্রে কাজে আসবে। যে সব তথ্য মিলবে তার উপর কাজ শুরু হবে। যেগুলি মিলবে না সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। জঙ্গিদের ধরতে গেলে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ করার ক্ষেত্রে এই তথ্যগুলি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলা নিয়ে এনআইএ টিম ভূস্বর্গের পুলিশকে সাহায্য করছে। গোটা দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির দল যেসব পর্যটকদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছেছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় এজেন্সির টিমের দু’জন অফিসার পুণের বাসিন্দা সন্তোষ জগদলের বাড়িতেও যান।
পহেলগামের এই হামলার ষড়যন্ত্রের মূল মাথা কে?
মুখ বন্ধ রাখলেও পহেলগাওঁয়ের বৈসরণে নৃশংস জঙ্গি হামলার দায় অস্বীকার করতে পারবে না পাকিস্তান। জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকদের উপরে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে পাক মদতপ্রাপ্ত লস্কর-ই-তৈবার শাখা সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। বেছে বেছে হিন্দু নিধন করা হয়েছে। এই হামলার যোগ্য জবাব দিতে ইতিমধ্যেই সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করেছে ভারত সরকার। কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে- কার নির্দেশে এই হামলা চালানো হয়েছিল? পাকিস্তানের একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজরই বোমা ফাটালেন এই নিয়ে। আঙুল তুললেন সোজা পাক সেনা প্রধানের দিকেই।
পাকিস্তান সেনার প্রাক্তন মেজর আদিল রাজা, যিনি এক সময়ে যুদ্ধক্ষেত্রেও লড়েছেন, তিনিই নিজের দেশের সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে বোমা ফাটিয়েছেন। তাঁর দাবি, পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল আসিম মুনির হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-কে। পহেলগামের এই হামলার ষড়যন্ত্র করেছেন তিনিই। গোয়েন্দা সূত্রেই খবর পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাক প্রাক্তন মেজর।
তবে এই একই দাবি করেছেন ভারতীয় সেনা আধিকারিকরাও। এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন সেনা কর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল দেবেন্দ্র প্রতাপ পাণ্ডে সরাসরি জেনারেল আসিম মুনিরের দিকেই আঙুল তোলেন। তিনি বলেন,”আমি পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করি যে আসিম মুনির এর (পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা) পিছনে রয়েছে। পাকিস্তানি সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীই সন্ত্রাসবাদের পরিচালক। সন্ত্রাসবাদের তিনটে স্তর রয়েছে। একটি স্তরে জঙ্গি ক্যাম্প ও পরিকাঠামো রয়েছে। তবে এর পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আসিম মুনির ও আইসিস।” তাহলে সত্যিই কি পাক সেনা প্রধান আসিম মুনিরই নির্দেশ দিয়েছিলেন পহেলগাঁওয়ে বেছে বেছে হিন্দু নিধনের? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
চাপের মুখে সীমান্তে ল্যাজে-গোবরে অবস্থা পাক সেনার
এমত অবস্থায় কার্যত প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় প্রহর গুনছে পাকিস্তান। ভারতীয় সেনার তৎপরতায় হাঁটু কাঁপছে পাক সেনার। সূত্রের খবর, কাশ্মীর উপত্যকায় সেনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে চলেছে সরকার। স্যাটেলাইট থার্মাল ইমেজের উপর নজর রাখছে ভারতীয় সেনা। পাক সেনার গতিবিধি সম্পর্কে ইন্টেলিজেন্স ইনপুট বিশ্লেষণ করে পা ফেলছে ভারতীয় সেনা। অ্যান্টি ড্রোন নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। কোনওভাবেই যাতে শত্রুপক্ষের লোকজন এপারে আড়ি পাততে না পারে, কোনওভাবেই যাতে মেঘের আড়ালে থেকে নজরদারি চালাতে না পারে সেদিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে ভারত যে কোনও সময় হামলা চালাতে পারে তা হারেহারে টের পাচ্ছে পাকিস্তান। তাই নজরদারিতে খামতি রাখতে রাজি নয় পাক সেনাও। প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই LAC-তে ব্যাপক হারে সেনা মোতায়েন পাকিস্তানের। সূত্রের খবর, LAC-তে পাকিস্তানের তরফে আগে যে পরিমাণ সেনা মোতায়েন ছিল তা বর্তমানে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় আফগানিস্তানের সীমান্ত থেকে পর্যন্ত পাক সেনাকে সরিয়ে আনা হচ্ছে পূর্ব সীমান্ত বা লাই অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের দিকে। সোজা কথায়, ভারতের চাপে যে পাকিস্তান ইতিমধ্যেই দরদর করে ঘামতে শুরু করে দিয়েছে তা তাঁদের গতিবিধি থেকেই স্পষ্ট। এমনটাই মত ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশের।