নিউজ ডেস্ক: কূটনৈতিকভাবেও পাকিস্তানকে কোনঠাসা করতে শুরু করেছে দিল্লি। বুধবারই ঘোষণা করা হয়, রবিবারের মধ্যেই সব পাকিস্তানী নাগরিককে ভারত ছাড়তে হবে। পহেলগাঁওয়ে নাশকতার পরই পাক নাগরিকদের ফেরা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে নজর রাখতে নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই পরিস্থিতিতে ডেডলাইনের শেষ দিনে দেখা গেল, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পারাপারের ভিড়। রিপোর্ট অনুসারে, বৃহস্পতিবার থেকে প্রায় ৭০০ জন আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়েছে ইতিমধ্যেই। জানা গিয়েছে, এঁদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন পর্যটক এবং চিকিৎসার জন্য ভারতে এসেছিলেন অনেকে।
হামলার পর ভারত সরকার ১২টি স্বল্পমেয়াদী ভিসাধারীদের জন্য ‘ভারত ছাড়ো’ নোটিশ জারি করে। সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, সার্ক ভিসাধারীদের জন্য চলে যাওয়ার সময়সীমা ছিল ২৬ এপ্রিল। চিকিৎসা ভিসাধারীদের জন্য তা ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১২টি ভিসা ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে — ভিসা অন অ্যারাইভাল, ব্যবসা, চলচ্চিত্র, সাংবাদিক, ট্রানজিট, সম্মেলন, পর্বতারোহণ, ছাত্র, দর্শক, পর্যটক দল, তীর্থযাত্রী এবং দলীয় তীর্থযাত্রী ভিসা।
এদিন সীমান্ত পার হওয়ার আগে একজন মহিলা বলেছিলেন যে তিনি মহারাষ্ট্রের নাগপুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন যে তিনি অন্যের পাপের জন্য ‘শাস্তি’ পাচ্ছেন। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ফিরে যাচ্ছি, কিন্তু অন্য কারও কাজের জন্য অন্য কাউকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। পহেলগাঁওয়ে যা ঘটেছে তা ভুল ছিল… নিরপরাধদের হত্যা করা হয়েছে’। তিনি বলেন, বন্দুক-যুদ্ধ, বোমা হামলা এবং সন্ত্রাসী হামলার চেয়ে শান্তি, সম্প্রীতি এবং বাণিজ্য বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক থাকা ভালো।
অন্যদিকে, সীমান্ত পার হওয়ার এই ঘটনায় গভীর আঁচ পড়েছে মায়ের সঙ্গে ভারতে আসা দুই পাকিস্তানি শিশুর মনেও। ভিসা বাতিলের জেরে ভারতীয় পাসপোর্টধারী মা-কে দিল্লিতে রেখেই কাঁদতে কাঁদতে এ দেশে ছাড়লেন দুই পাকিস্তানি শিশু। ১১ বছর বয়সী জয়নব এবং ৮ বছর বয়সী জেনেশ মায়ের সঙ্গে অসুস্থ দিদিমাকে দেখতে দিল্লিতে এসেছিল। এই দুই শিশুর বাবা পাকিস্তানি। তাদের মা ভারতীয়। কিন্তু থাকেন স্বামীর বাড়িতেই। ফলে শিশু দু’টিও পাকিস্তানেরই নাগরিক। তাদের কাছে একমাসের ভিসা ছিল।
এসবের মধ্যেই গত মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটে। এরপরই ভারত, পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করে। ভারত সরকারের এই পদক্ষেপেই ঘোর বিপদে পড়ে জয়নব ও জেনেশ। আদেশ মেনে এই দুই শিশু মাকে এ দেশে রেখেই বাধ্য হয়ে পাকিস্তানে ফিরছে।
অন্যদিকে, পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা যে শুধু ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে তাই নয়, এর জেরে আমূল বদলে যেতে চলেছে প্রচুর সাধারণ মানুষের জীবন। তাঁদের মধ্যে একজন সারদা বাই। পাকিস্তানের নাগরিক। বিয়ে হয়েছিল ভারতে। ৩৫ বছর ধরে এদেশেই সংসার তাঁর। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার পরবর্তী ভারত সরকার যে কয়েকটি কড়া পদক্ষেপ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিয়েছে, সেই অনুসারে বাতিল করা হয়েছে সারদা বাইয়ের ভিসা। এবার তাঁকে ফিরে যেতে হবে পাকিস্তানে। বর্তমানে সারদা বাই ওড়িশার বাসিন্দা। সেখানকার পুলিশ ইতিমধ্যেই বৃদ্ধাকে জানিয়েছেন যে তাঁকে ফিরে যেতে হবে পাকিস্তানে।
একই অবস্থা, মহম্মদ ইমরানের। তাঁর স্ত্রী শারমিন এবং মেয়েদের সঙ্গে এসেছিলেন এ দেশে। কিন্তু, এখন তাঁদের অবস্থা হৃদয়বিদারক বাস্তবতার মুখোমুখি। ইমরান বলেন, “আমি আমার মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু এখন আমার স্ত্রী শারমিনকে ভারতীয় পাসপোর্ট থাকায় পাকিস্তানে ফিরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।” তাঁর সংযোজন, “আমার স্ত্রী গত ১৮ বছর ধরে পাকিস্তানে ছিলেন কিন্তু নাগরিকত্ব পাননি।” ইরফান এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন। অনুরোধ করে বলছেন, “মোদিকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। শিশুরা মা ছাড়া বাঁচতে পারে না।”
রাজ্যের জেলে বন্দি পাকিস্তানিদের কি ফেরত পাঠানো হবে?
এত গেল সাধারণ পাকিস্তানিদের কথা, কিন্তু প্রশ্ন হল রাজ্যের জেলে বন্দি পাকিস্তানিদের কি ফেরত পাঠানো হবে? ইতিমধ্যেই এই নিয়ে কারা দফতরেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যের জেলগুলিতে ৬-৭ জন পাকিস্তানি বন্দি রয়েছেন। তাঁদের নিয়ে বাড়তি সতর্ক কারা দফতর। রাজ্যের জেলে বন্দি পাকিস্তানি নাগরিকদের কি সেদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে? এক্ষেত্রে দুটি মত উঠে এসেছে কারা আধিকারিকদের তরফে।
কারা দফতরের একাংশের বক্তব্য, যেহেতু বন্দি। তাই তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। আর একটি অংশ জানাচ্ছেন, আদালত সাজা ঘোষণা করেছে। ফলে ওই বন্দিদের বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি পাকিস্তানি বন্দিদের বিষয়ে।