নিউজ ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্ট এসএসসির ২০১৬ সালের পরীক্ষার পুরো প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে। আদালতের রায়ের পর থেকেই চলছে আন্দোলন। এবার চাকরিহারা ‘অযোগ্য’ শিক্ষকদের আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয় হাজরা মোড়। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবি করে এ দিন মিছিল করেন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকরা। হাজরা মোড়ে গিয়ে বসে পড়েন তাঁরা। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় হাজরা মোড়ে। রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কলেজ-অফিস যাত্রীদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি
আন্দোলনকারীদের দাবি, আদালতে ওএমআর-এ কারচুপির বিষয়টি এখনই প্রমাণিত হয়নি। ফলত, ওএমআর-এ সমস্যা থাকার জন্য তাঁদের কেন ‘অযোগ্য’ বলা হবে, সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের মধ্যে এক শিক্ষক বলেন, ‘আদালতে সিবিআই আমাদের অযোগ্য বলে প্রমাণ করতে পারেনি। তা হলে এসএসসি আমাদের অযোগ্য কেন বলছে? আমাদের এ ভাবে রাস্তায় কেন বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে?’
কী কারনে বিক্ষোভ?
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে চাকরিহারাদের অনেকের নাম ডিআইয়ের তালিকায় নেই। ফলে তারা স্কুলে যেতে পারছেন না। এরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। সোমবার সেই সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা রীতিমত রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গোটা বিষয়কে হস্তক্ষেপ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পথের রাস্তা ব্যারিকেডের পর ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ। হাজরা মোড়ে গিয়ে বসে পড়েন তাঁরা। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আন্দোলনকারীদের। তাঁরা বলছেন, অযোগ্য বলে চিহ্নিত করে তাঁদের দেওয়া হচ্ছে ! কিন্তু তাঁরা অযোগ্য নন। তারা রাস্তায় শুয়ে পড়ে বলেন, ‘পুলিশকে বলুন গুলি করতে…। পরিস্থিতি সামাল দিতেই বিক্ষোভকারীদের টেনেহিঁচড়ে প্রিজন ভ্যানে তোলে পুলিশ।
উল্লেখ্য, এর আগে শনিবারও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে জড়ো হয়েছিলেন চাকরিহারারা। এর পরেই মন্ত্রীর বাড়ির সামনে ধর্নায় বসে পড়েন তাঁরা। সোমবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে কালীঘাটে তাঁর বাড়ির দিকে মিছিল করে যাচ্ছিলেন চাকরিহারারা। তখনই শুরু হয় ধস্তাধস্তি।
‘যোগ্য’দের তালিকায় এ বার জুড়ল চিন্ময়ের নাম
অন্যদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) দেওয়া ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের তালিকায় নাম ছিল না আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডলের। এ বার ১৫,৪০৩ জনের সেই তালিকায় নাম যুক্ত হল তাঁর। সংশোধিত তালিকায় চিন্ময় ছাড়াও নাম রয়েছে আরও কয়েক জন শিক্ষকের। শীঘ্রই ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের সকলের নাম যুক্ত করে তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে আশাবাদী চাকরিহারারা।
গত বুধবার এসএসসির প্রকাশিত ‘যোগ্য’দের তালিকায় থেকে নাম বাদ গিয়েছিল চিন্ময়ের। বৃহস্পতিবার সে সংক্রান্ত ব্যাখ্যাও দেন তিনি। এ নিয়ে এসএসসির চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের সঙ্গে কথা বলার পর চিন্ময় জানান, কমিশনের ভুলেই তাঁদের নাম বাদ গিয়েছে। শুধু তাঁর নয়, ‘যোগ্য’ বলে নিজেদের দাবি করছেন, এমন অনেক শিক্ষকের নামই এসএসসির নতুন তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে জানান চিন্ময়। চিন্ময় বলেন, ‘‘এসএসসির তালিকায় আমাদের অনেকের নাম নেই। এটা এসএসসির ভুল। ভুলটা ২০১৮-১৯ সালে হয়েছিল। আমার নামের পাশে ‘নন-জয়েন্ড’ (চাকরিতে যোগ দেওয়া হয়নি) বলে লেখা আছে। সেই কারণেই নাম আসেনি তালিকায়।’’ শুধু তা-ই নয়, এই বাদ পড়া তালিকায় ‘যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের’ প্রায় ৪০০ জন রয়েছেন বলেও জানান তিনি।এর পরেই ‘ভুলে’র ব্যাখ্যা দেয় কমিশন। জানানো হয়, যাঁরা পরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের তথ্য আর সার্ভারে আপডেট করা হয়নি। সে কারণেই এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। চিন্ময়-সহ বাকি শিক্ষকদের কাছ থেকে এই সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে যাচাই করে নতুন তালিকা আবার ডিআইদের পাঠানো হবে বলে জানায় এসএসসি। সেই সংশোধিত তালিকাই প্রকাশিত হল ছ’দিন পর। তবে নতুন তালিকায় সকলের নাম রয়েছে কি না, তা এখনও জানা যায়নি।
ফলে আগামী দিনে এই মামলা কোন দিকে মোড় নেবে, এবং চাকরিহারাদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটাই প্রশ্ন। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১ মে।