নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলায় স্পষ্ট হল পাকিস্তানের হাত? বর্বরোচিত হামলার সাতদিন পর সেই তথ্যই সামনে আসছে। যারা হামলা চালিয়েছে, সেই সন্ত্রাসবাদীদের ছবি যাচাই করে জানা যাচ্ছে, ওই হামলায় সরাসরি যুক্ত হয়েছিল হাশিম মুসা।
কে এই হাশিম মুসা?
হাসিম মুশা একজন লস্কর জঙ্গি। এখন সে লস্করে থাকলেও এর আগে ছিল পাক সেনাবাহিনীতে। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। হাশিম একসময় ছিল পাক সেনার কমান্ডো। সে পাকিস্তান সেনায় যোগ দিয়ে কমান্ডো ট্রেনিং নিয়েছিল। পরে যোগ দিয়েছিল লস্কর এ তৈবায়।
কোন দায়িত্বে ছিল হাশিম মুসা?
জানা যাচ্ছে, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা ও নন-কাশ্মীরিদের উপর হামলা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় হাশিম মুসাকে। এই প্রথম নয়, এর আগেও এমন অ্যাকশনে নেমে ছিল কট্টর এই পাক জঙ্গি। হাসিম মুশা ওরফে সুলেমান ভারতে ঢুকেছিল ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। পহেলগাঁওয়ের আগে গত বছর বারামুল্লা সহ কাশ্মীরের ২ জায়গায় হামলা চালিয়েছিল সে। পাক সেনায় প্যারা কমান্ডার ট্রেনিং থাকায় সবকিছুতেই দক্ষ হাশিম। যে কোনও পরিস্থিতিতে কীভাবে লড়াই করতে হবে, কীভাবে সামনা সামনি লড়তে হবে, এবং সবকিছু করে পালাতে হবে, সবকিছুই ট্রেনিং দেওয়া হয় এই কমান্ডোদের। আর তাই এমন কমান্ডোকেই বেছে নিয়েছিল লস্কর।
হামলায় কীভাবে যুক্ত আইএসআই?
হাশিম যাতে ভারতে হামলা চালাতে পারে, তার জন্য প্রথম থেকেই ছক কষেছিল আইএসআই। তাই পাক সেনাবাহিনী থেকেই হাশিমকে পাঠানো হয়েছিল লস্করের ডেরায়। কিছু সূত্রে জানা যাচ্ছে, শুধু লস্কর নয়, বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেই যোগ ছিল তার। এই প্রাক্তন সেনা কমান্ডোকে নানা ভাবে কাজে লাগানোর ছক থেকেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ফলে সামনে আসছে, জঙ্গি, আইএসআই আর পাক সেনার যোগসূত্র।
হামলায় কীভাবে নাম উঠল হাশিমের?
পহেলগাঁও হামলার পর সন্ত্রাসবাদীদের স্কেচ প্রকাশ করে গোয়েন্দারা। জেরা করা হয় এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহভাজন ১৫ জনকে। তারা সন্ত্রাসবাদীদের নানারকম লজিস্টিক সরবরাহ করেছিল। ১৫ জনকে নানা অ্যাঙ্গেলে জেরা করার পরই সামনে আসে হাশিমের নাম। শুধু হাশিম নয়, এই হামলায় জড়িত ছিল আর এক পাকিস্তানি। তার নাম আলি ভাই ওরফে তালহা। টাইমস অব ইন্ডিয়া সূত্রে খবর, এই দুই পাকিস্তানির সঙ্গে যুক্ত ছিল কাশ্মীরি আদিল হুসেন ঠোকর। তার বাড়ি অনন্তনাগে। এই তিনজনের মাথার দাম ২০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছে জম্মু কাশ্মীর পুলিশ।
আর কোন হামলায় জড়িত হাশিম?
২০২৪ সালে গান্ডেরবালের গগনগিরে জঙ্গি হামলা হয়। সেই হামলায় ছয় পরিযায়ী শ্রমিক এবং এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছিল। ওই বছরেই বারামুলার বুতা পাথরিতে আরও একটি হামলা হয়। সেই হামলায় সেনার চার জওয়ান নিহত হয়েছিলেন। গত বছরের ওই দুই হামলার সঙ্গে পহেলগাঁওয়ে হামলার যোগ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। পহেলগাঁওয়ে হামলার আগে সোপোরে বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়েছিল মুসা। তবে ওই সংঘর্ষে আরও দুই জঙ্গি আরবাজ় মীর এবং জুনেইদ ভাটের মৃত্যু হয়েছিল।
কীভাবে ছক লস্করের?
সূত্রের খবর, জম্মু-কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি জায়গায় হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মুসাকে। বিশেষ করে নিরাপত্তাবাহিনী এবং কাশ্মীরি নন, এমন ব্যক্তিদের উপরই হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয় এই পাক জঙ্গিকে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যে জঙ্গিদের ছবি প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে মুসা ছাড়াও রয়েছে আলি ভাই ওরফে তালহা এবং স্থানীয় জঙ্গি আদিল ঠোকর। সন্দেহ করা হচ্ছে, প্যারা কমান্ডোর প্রশিক্ষণ থাকায় মুসাকে হামলা চালানোর দায়িত্ব দিয়েছে লশকর।
কেন সন্দেহ পাক সেনাকে?
একজন প্রাক্তন কমান্ডো যখন সেনাবাহিনী থেকে জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখায়, তখন স্পষ্ট হয়ে যায়, এর নেপথ্যে রয়েছে পাক সেনা। কারণ, লস্কর তার যাবতীয় কাজ চালায় পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তান থেকে। লস্কর প্রধান হাফিজ সঈদ আবার বসে আছে খোদ পাকিস্তানে। তাকে নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে পাক সেনা। যেমন নিরাপত্তা পাচ্ছে দাউদ ইব্রাহিম।
বিতর্কে পাক সেনা প্রধানও
পহেলগাঁও হামলার সাথে সাথেই বিতর্কে নাম জড়িয়েছে পাক সেনা প্রধান আসিফ মুনির। হামলার আগে তাঁকে যে ধরণের মন্তব্য করতে শোনা গেছে, তা রীতিমত ইন্ধন দেওয়ার মতো। পহেলগাঁও হামলার ৫ দিন আগেই প্রবাসী পাকিস্তানিদের এক সম্মেলনে তিনি সামনে আনেন দ্বিজাতি তত্ত্বের কথা। সেখানে হিন্দু বিরোধী কথা বলতে শোনা যায় তাঁকে। তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্য, ধর্ম, রীতিনীতি, চিন্তাভাবনা , উচ্চাকাঙ্ক্ষা সবই আলাদা। কাশ্মীর নিয়ে তিনি বলেন, কাশ্মীর আমাদের ঘাড়ের শিরা ছিল, ঘাড়ের শিরা থাকবে। কাশ্মীরের প্রতি সমর্থন সর্বদাই থাকবে। হামলার আগে সেনা প্রধানের এমন বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়, কী চাইছে পাকিস্তান। কীভাবে অস্থিরতা ছড়াতে চাইছে কাশ্মীরে।
পাক প্রশাসনের ভূমিকা
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের ইন্ধনেই যে কাশ্মীরে এমন হামলা হয়েছে, তার ফলে যে পাকিস্তানকে ভুগতে হবে, তা চেপে রাখতে পারছে না সেখানকার প্রশাসনিক প্রধানরাও। এরমধ্যেই সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের কথা জানিয়েছে ভারত। ফলে ইসলামাবাদ বুঝতে পারছে, শিয়রে শমন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে আতঙ্কিত পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও। আবেতাবাদ মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ২৬ এপ্রিল ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, যে কোনও ধরনের নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি পাকিস্তান। তবে সিন্ধুর জল বন্ধ করা কোনও ভাবেই মানা হবে না।
তবে কি যুদ্ধ আসন্ন?
পহেলগাঁও হামলায় পাক হাত স্পষ্ট হওয়ার পরই জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাঁকে সব রিপোর্ট দিয়েছেন। পাক সীমান্তের কাছে এরমধ্যেই অনুশীলন তীব্র করেছে ভারতীয় সেনা। স্থল বাহিনী, বিমান বাহিনী থেকে নৌবাহিনী, একযোগে চলছে অনুশীলন। পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার সবরকম তোড়জোর চলছে। শুধু সরকার নয়, পহেলগাঁওয়ে ৬৬ জনকে হত্যার বদলা নিতে তৈরি গোটা ভারতও। সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর পাকিস্তানকে কীভাবে উচিত শিক্ষা দেওয়া যায়, তার জন্যই তাল ঠুকছে আপামর ভারতবাসী।