নিউজ ডেস্ক: ১৮৯৭ সালের আজকের দিনে অর্থাৎ পয়লা মে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন স্বামী বিবেকানন্দ। আজ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস। বেলুড় মঠ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৯৭ সালের ১ মে স্বামী বিবেকানন্দের নেতৃত্বে উত্তর কলকাতায় বলরাম বসুর বাড়িতে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হয়। তাই ওই দিনটিকেই রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে মনে করা হয়।
ইতিহাস
উত্তর কলকাতার যে বাড়িতে স্বামী ব্রহ্মানন্দ মহারাজ কে মিশন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথম অধ্যক্ষ নির্বাচিত করা হয়েছিল, তা হয়েছিল বাগবাজারের বলরাম বসুর বাড়ির হলঘরেই। এই বাড়ি পরবর্তী কালে বলরাম বসু মিশনকে দান করেন। বাড়ির নাম হয় বলরাম মন্দির। এরপর সহ অধ্যক্ষ স্বামী যোগানন্দ কে সঙ্গে নিয়ে এই বাড়ি থেকেই মিশনের জয়যাত্রা শুরু হয়। যা সন্যাসীর পাশাপাশি বিশ্বের কোটি কোটি গৃহী ভক্তকেও পরবর্তী কালে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করেছে।
কোন উদ্দেশ্য নিয়ে স্বামীজি রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন?
মানবসেবার মাহাত্ন্য ঘোষণা, শিক্ষার্থীর জন্য অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থানের ব্যবস্থা ও হিন্দুধর্ম প্রচার করা ছিল রামকৃষ্ণ মিশনের মূল কাজ। রামকৃষ্ণ মন্দির রামকৃষ্ণ ভাব-আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। ভারতীয় জাতির প্রাণে নবপ্রেরণার জোয়ার এনে জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে ঈষ্বর জ্ঞানে মানব সেবার আদর্শ স্থাপনের জন্যই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন। ধর্ম, সেবা ও শিক্ষা এই তিনটি মূল কর্মসূচি নিয়ে রামকৃষ্ণ মিশনের যাত্রা শুরু। হিন্দু ধর্ম ও ঐতিহ্যের আশ্রয়ে স্থাপিত হলেও এর মধ্যে মিলন ঘটেছে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যর। ঈশ্বরে বিশ্বাস ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মানবসেবা ও মানুষ তৈরির আদর্শ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই মিশনের উদ্দেশ্যগুলি ছিল।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের গুরুত্ব
ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলতেন খালি পেটে ধর্ম হয়না। আর বিবেকানন্দ বলতেন ঈশ্বরের কোনো গণ্ডি হয়না। এই দুটি ভাবধারা কে সামনে রেখে অভুক্ত মানুষের জন্য অন্ন সেবা এবং সর্বস্তরের সমস্ত মানুষের মধ্যে আর্তের সেবার মন্ত্র বীজ বপন করার কাজ চলছে সেই ১৮৮৭ সাল থেকেই। সঙ্গে ভগিনী নিবেদিতার সেবা ধর্ম যোগ হয়ে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন আজ বিশ্বের অন্যতম বড় এনজিও হিসেবে কাজ করে চলেছে আর্তের সেবায়। বাগবাজারের এই দু কাঠা জমির দোতলা কোঠা বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিল বিশ্বজনীন ভাবধারার বিপ্লব।
মিশনের বৈশিষ্ট্য
রামকৃষ্ণ মিশনে বেদান্তের আদর্শ অনুসরণ ও মূর্তিপুজো স্বীকৃত। মিশনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল,
কোনও স্বতন্ত্র ধর্মীয় মতবাদ গড়ে তোলেনি। এই প্রতিষ্ঠান মঠ ব্যবস্থার মাধ্যমে সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শে বিশ্বাসী।
এই প্রতিষ্ঠান সকল ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সমাজসেবার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। ত্রাণকার্য, গ্রামোন্নয়ন, আদিবাসী কল্যাণ, বুনিয়াদি ও উচ্চশিক্ষা এবং সংস্কৃতির প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
এই প্রতিষ্ঠানের কোনও গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সকল গোষ্ঠীর ঊর্ধ্বে সমগ্র মানবজাতির সেবায় নিয়োজিত রয়েছে এই মিশন।
শুধু ভারতেই নয়, ভারতের বাইরেও ভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি বিস্তারের উদ্দেশ্যে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শতাধিক শাখা স্থাপিত হয়েছে। আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মন্দিরেই রামকৃষ্ণ মিশনের সদর কার্যালয়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হাওড়া শহরের বেলুড় অঞ্চলে হুগলি নদীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত বেলুড় মঠ কলকাতা-সন্নিহিত অঞ্চলের অন্যতম দ্রষ্টব্যস্থল। বেলুড় মঠের রামকৃষ্ণ মন্দির রামকৃষ্ণ ভাব-আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। ৪০ একর জমির উপর অবস্থিত মূল মঠপ্রাঙ্গণে মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনের সদর কার্যালয় অবস্থিত। এছাড়াও স্বামী ব্রহ্মানন্দ মন্দির ও রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ইতিহাসকে তুলে ধরার লক্ষ্যে একটি সংগ্রহশালাও এখানে স্থাপিত হয়েছে।
বেলুড় মঠ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, নারীকল্যাণ, শ্রমিক ও অনগ্রসর শ্রেণীর স্বার্থে গ্রামোন্নয়ন, ত্রাণ, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। রামকৃষ্ণ পরমহংস, সারদা দেবী, স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম ও প্রয়াণতিথি, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বড়দিন উৎসব উদ্যাপন করে এই কেন্দ্র। দুর্গাপূজা, বিশেষত মহাষ্টমীর কুমারীপূজা দেখতে এখানে প্রতি বছর প্রচুর জনসমাগম হয়।