নিউজ ডেস্ক: পরীক্ষা শেষের ৭০ দিনের মাথায় আজ মাধ্যমিকের ফল (Madhyamik Result 2025)ঘোষণা হল। এদিন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় প্রকাশ করলেন মাধ্যমিকের ফলাফল। উল্লেখ্য, এবছর পাশের হারে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর। এই জেলায় পাশের হার ৯৬.৪৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে কালিম্পং। পাশের হারে তৃতীয় স্থানে কলকাতা। রাজ্যে মোট পাশের হার ৮৬.৫৬ শতাংশ। গত বছর পাশের হার ছিল ৮৬.৩১ শতাংশ।
এবছর মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে আদৃত সরকার। রায়গঞ্জের করনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্র পেয়েছে ৬৯৬। পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছেন, এ বছর মাধ্যমিকে প্রথম দশে রয়েছে ৬৬ জন ছাত্রছাত্রী। তবে প্রথম স্থানে রয়েছে এই একজনই। যুগ্মভাবে দ্বিতীয় মালদহের রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের অনুভব বিশ্বাস ও বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের সৌম্য পাল। তাঁদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৪। তৃতীয় স্থানে কোতুলপুর সরোজবাসিনী স্কুলের ইশানী চক্রবর্তী। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৪। তবে এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানাধিকারি অনুভব দিল্লিতে রয়েছে তার বাবার কাছে। তার সঙ্গেই যোগাযোগ করেছে আমাদের প্রতিনিধি। একান্ত সাক্ষাৎকারে কী জানাল অনুভব? আসুন জেনে নি।
মাধ্যমিকে দ্বিতীয় মালদহের অনুভব বিশ্বাস
ভাল ফলের আশা থাকলেও দ্বিতীয় হবে, ভাবেনি অনুভব। তাই স্বাভাবিকভাবেই ফলাফলের পর উচ্ছ্বসিত সে। এ প্রসঙ্গে অনুভব বলে, ”কিছুটা ভাগ্যের ব্যাপার আছে। কেমন শিক্ষকের কাছে খাতা যাচ্ছে, তিনি কী ভাবে খাতা দেখছেন, তার উপর অনেকটা নির্ভর করে। তবে ভালো ফল হবে সেটা আশা করেছিলাম।”
কিন্তু কোন পথে এমন সাফল্য?
আজকের দিনে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা কোচিং ও নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়ায় অভ্যস্ত, সেখানে অনুভব ব্যতিক্রম। এদিন অনুভব জানায়, ঘড়ি ধরে সে পড়ত না। বরং যতটুকু পড়ত, মন দিয়ে পড়ত। প্রতিটি বিষয়েই গৃহশিক্ষক ছিল অনুভবের। তাঁরা যে ভাবে গাইড করতেন, সেটাই অনুসরণ করতো সে। শিক্ষকদের দেখানো পথেই এই ফলাফল বলে তার দাবি। পড়ার ফাঁকে গোয়েন্দা গল্পে মগ্ন হয়ে খানিক বিরতি নিত।
ছেলের সাফল্যে কী জানাল মা?
অনুভবের সাফল্যে অনুভবের মতোই অনুভবের মা ও জানায় যে, ছেলের পড়াশোনা করার কোনো বাঁধা ধরা সময় ছিলনা, যখন যেমন প্রয়োজন হয়েছে সেই অনুযায়ী অনুভব পড়াশোনা করেছে। এদিন ছেলের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে অনুভবের মা বলেন, “ছেলে বরাবরই ছোট থেকে খুবই শান্ত, বাধ্য ছেলে, পড়াশোনায় বরাবরই মনোযোগ ছিল। আমি যেরকম ভাবে ওকে তৈরি করেছি ও ঠিক সেভাবেই তৈরি হয়েছে। আমাকে কখনো ওকে বলতে হতো না পড়াশোনার কথা, ও নিজের সময় মত সবটা করে নিত। ”
এছাড়া এদিন অনুভব জানায়, ক্রিকেট ও ছবি আঁকার প্রতি তার আলাদা ভালোবাসা রয়েছে, তবে সময়ের অভাবে এখন আর সেভাবে ছবি আঁকার ফুরসৎ পায়না অনুভব। অন্যদিকে, অনুভবের এই সাফল্যে তার স্কুল রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের অধ্যক্ষ তপোহারানন্দ মহারাজ জানিয়েছেন, আগামী দু’বছর অনুভব দিল্লিতেই পড়াশোনা করবে। অনুভবের পাশাপাশি এবছর এই স্কুলের দুই ছাত্র সৃজন প্রামাণিক এবং অরিত্র সাহা মাধ্যমিকে যুগ্মভাবে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৮। এদিন তিনি বলেন, ”আমাদের ছেলেরা সারা বছর ধরে পরিশ্রম করে। যেটা তাদের বলা হয়, সেটা মেনে চলে। এরা সকলেই খুব সচেতন। মনযোগ দিয়ে পড়াশোনার জন্যেই এই ফলাফল হয়েছে।”
অনুভবের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা অনুভবের মা গৃহবধূ। বাবা ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার সেল্স ম্যানেজার। ছেলের কৃতিত্বে খুশি তারাও। তার বাবা এখন দিল্লি কর্মরত। তাই অনুভবের পরিবারকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হতে হয়েছে। সেখান থেকেই পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যাবে অনুভব। অনুভবের লক্ষ্য ডাক্তার হওয়ার। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার পর মেডিক্যাল লাইনে যাওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে অনুভব।
উল্লেখ্য, এদিন সাক্ষাৎকারের সময় পেহেলেগাঁও জঙ্গি হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে অনুভব বও, ”দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক ঘুরতে গিয়ে মারা গেছেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা, এই বিষয়ে ভারত সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং এখনো যারা এখনও এই বিষয়টি সমর্থন করছে তাদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।” অন্যদিকে এরাজ্যের দুর্নীতি ও হিংসা প্রসঙ্গে অনুভব বলে, ”রাজনীতি সবকিছুকেই খারাপ করছে। সব বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ঢুকছে বলেই এত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। সব বিষয়ে রাজনীতি আনলে হবে না, দেশের উন্নতি ও রাজ্যের উন্নতির কথা ভেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে হবে।”