নিউজ ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-তে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই ভয়ংকর জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রকাশ্যে এসছে মৃতের তালিকা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বাংলার তিনজন। এর মধ্যেই একজন হল পাটুলির বাসিন্দা বিতান অধিকারী।
কে এই বিতান অধিকারী?
কাশ্মীর ভ্রমণের আনন্দ যে এমন ভাবে সব শেষ করে দেবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি বিতান অধিকারী। ফ্লোরিডায় কর্মরত বিতান সম্প্রতি দেশে ফিরেছিলেন স্ত্রী সোহিনী ও সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে ছুটি কাটাতে। উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির কোলে কাশ্মীর দর্শন। কিন্তু সেই স্বপ্নময় সফর পরিণত হল এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে।
আমেরিকায় থাকতেন বিতান, ঘুরতে গিয়েছিলেন কাশ্মীরে
জানা গিয়েছে যে, বিতান অধিকারী, আমেরিকায় থাকতেন। বৈশাখ মাসের গোড়ায় তাঁরা কলকাতায় আসেন। সেখান থেকেই তাঁরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। গত ১৬ এপ্রিল স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাশ্মীর ঘুরতে যান দক্ষিণ কলকাতার পাটুলির বাসিন্দা বিতান। আপাতত কর্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁরা কাশ্মীর থেকে ফেরার কথা ছিল আগামী ২৪ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই ২২ এপ্রিল সকালে পহেলগাঁওয়ের বাইসরান উপত্যকায় ঘটে যায় জঙ্গি হামলা। সেসময় পরিবার নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিতান। গুলির আঘাতে গুরুতর জখম হন তিনি। দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসারণ উপত্যকায় বেলা আড়াইটে নাগাদ, একেবারে সাধারণ পোশাকে ওই এলাকায় এসে পর্যটকদের উপর গুলি ছুড়তে শুরু করেছিল জঙ্গিরা। জঙ্গিদের গুলিতে প্রথমে গুরুতর জখম হয়েছিলেন বিতান। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। বিতানের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পাটুলি। স্ত্রী সোহিনী অধিকারীর চোখে এখন শুধুই কান্না আর অসহায়তা। ছোট ছেলেটিও যেন দিশাহারা।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজন
বিতানের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। কথা বলতে পারছেন না। বিতানের মামার ছেলে বারবার বলছেন যে ‘আমি কীভাবে বাঁচব?’ তারইমধ্যে এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন, বিতানের বৃদ্ধ বাবা এবং মা’ও ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন।
বিতানের স্ত্রীর নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক
অন্যদিকে, বিতানের মৃত্যুর পর থেকেই সদ্য বিধবা বিতানের স্ত্রী সোহিনী অধিকারীকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। তাতে বাদ যায়নি রাজনীতিও। এই প্রেক্ষিতে ‘বৌমা’কে ‘বাংলাদেশি’ বলে দাবি করেছে বিতানের পরিবার। যদিও সোহিনীর দাদার দাবি, তাঁর বোনকে নিয়ে যে সমস্ত অভিযোগ করা হচ্ছে, তার সবই মিথ্যা।
নিহত বিতানের নামে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’
অন্যদিকে, নিহত বিতানের নামে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করা এবং সেখানে ‘বেনিফিশিয়ারি’ হিসাবে সোহিনীর নাম থাকা নিয়ে আড়াআড়ি ভাগ হয়েছেন নেটাগরিকেরা। এবং তার মাঝেই বিতানের দাদা বিভু দাবি করেছেন তাঁর ভ্রাতৃবধূ আদতে এ দেশের নাগরিকই নন! পেশায় আইনজীবী বিভুর মন্তব্য, ‘‘ওঁর (সোহিনীর) পরিচয় দিতে গেলে ইতিহাস হয়ে যাবে।’’ এমনকি, ভ্রাতৃবধূকে ‘ইন্টারন্যাশনাল জালিয়াত’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বিভু জানান, বছর দুয়েক আগে সোহিনী এবং তাঁর মা ভারতী রায়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই মামলা এখনও চলছে। ভারতী বাংলাদেশ চলে গিয়েছেন। তবে এ দেশে থেকে যান তাঁর মেয়ে। বিভুর আরও দাবি, পরিচয় গোপন করে তাঁর ভাই, পেশায় আইটি কর্মী বিতানকে বিয়ে করেছিলেন সোহিনী। বিভু বলেন, ‘‘সোহিনীর দুটো জন্ম শংসাপত্র রয়েছে। উনি আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। পরে ওঁরা এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ইত্যাদি বানিয়েছিলেন। পরে প্রমাণ হয়েছে, সেগুলো ভুয়ো।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উনি (সোহিনী) আগে বিতানের সঙ্গে আমেরিকায় ছিলেন। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এখনও এ দেশে আছেন। কারণ, ফেব্রুয়ারি মাসে সোহিনীর ভারতীয় পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।’’ বস্তুত, দক্ষিণ কলকাতার পাটুলিতে একটি বাড়িতে থাকেন বিতানের বাবা-মা। অন্য একটি বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী-পুত্র। বিতানের পরিবারের দাবি, সোহিনী যেখানে থাকেন সেই বাড়ির ‘অবৈধ মালিক’ তিনি। কারণ, ভুয়ো কাগজপত্র দিয়ে তাঁর মা ওই বাড়িটি কেনেন। পরে সেটি মেয়েকে উপহার দেন। যদিও এই বিতর্ক প্রসঙ্গে সোহিনীর তরফে কিছু জানা যায়নি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২২ এপ্রিল দুপুর আড়াইটা নাগাদ পহেলগাঁও হিল স্টেশন থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে বৈসরন উপত্যকায়,হামলা চালায় জঙ্গিরা। রিসর্টে ঢুকেও গুলি চালায় তারা। জখম পর্যটকদের মধ্যে অধিকাংশ গুজরাতের বাসিন্দা।তাছাড়াও মহারাষ্ট্র,ওড়িশা, কর্ণাটক, তামিলনাড়ুর পর্যটকরাও রয়েছেন। ইতিমধ্যেই এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাক ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সহযোগি সংগঠন TRF। অভিযোগ, পর্যটকদের নাম-পরিচয় জানতে চাওয়ার পর নিশানা করা হয় তাদের।