নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ওপর হামলার জেরে বাংলার ৩ জন-সহ ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলার যে তিন জন মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বেহালার বাসিন্দা সমীর গুহ। গত ১৬ এপ্রিল স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে কাশ্মীর রওনা দিয়েছিলেন তিনি৷ ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যু হয় তাঁর৷ স্ত্রী-কন্যার সামনেই জঙ্গিরা হত্যা করে সমীর গুহকে৷
শখেরবাজার জগৎ রায়চৌধুরী রোডের ঊষা অ্যাপার্টমেন্টের বাড়ি থেকে ১৬ তারিখ সপরিবারে কাশ্মীর বেড়াতে যাওয়ার উদ্দেশে বেরিয়েছিলেন সমীর৷ স্ত্রী শবরী গুহ ও মেয়ে শুভাঙ্গী গুহকে নিয়ে ভূস্বর্গ দেখতে যাচ্ছিলেন তিনি৷ তখনও তাঁরা কেউই বুঝতে পারেননি কী হতে চলেছে এক সপ্তাহের মাথায়৷ কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে মৃত্যু হয় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী সমীরবাবুর৷ বেড়াতে গিয়ে এই মর্মান্তিক পরিণতিতে হতবাক সকলেই৷
সমীর গুহ
পেশায় তিনি ছিলেন সাবঅর্ডিনেট স্যাটিসটিক্যাল সার্ভস নামে এক সংস্থার স্ট্যাটিসটিক্য়াল অফিসার ছিলেন। পাশাপাশি বড়িশা জগৎ রায় চৌধুরী রোডে, ‘বিজয় সংঘ’ ক্লাবের সদস্য ছিলেন সমীর বাবু। পুজো এলেই তাঁকে দেখা যেত এক অন্য রূপে। বাকি সদস্যদের মতো, একা হাতে তিনিও মায়ের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। পুজো এলেই সমীর গুহ কে দেখা যেত পুজোয়। মায়ের জন্য মাথায় করে ভোগ নিয়ে যেতেন তিনি।
সমীরের সম্পর্কে কী বলছেন পাড়া প্রতিবেশীরা?
পাড়ার ক্লাবে দারুণ ভাবে অ্যাক্টিভ। খুব তাড়াতাড়ি মিশে যেতেন মানুষের সঙ্গে। পাড়ার অত্যন্ত ‘জলি সমীরদা’ ভালবাসতেন ঘুরে বেড়াতেও। সেই ‘সমীরদাই’ নাকি ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছেন জঙ্গিদের গুলিতে! ভাবতেও পারছেন না বেহালার সখেরবাজারের বাসিন্দারা। মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পরই প্ল্যান করে ছিলেন কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার।
সমীর গুহর শ্যালক সুব্রত ঘোষ বলেন, “আমরা রাত তিনটেয় খবর পাই। সন্ধ্যা থেকে টিভিতে দেখছিলাম। কিন্তু তখনও এমন কিছু হতে পারে, ভাবিনি। পহেলগাঁওতে হোটেলে থাকার কথা ছিল, কিন্তু সেখানে না থেকে রিসর্টে থাকেন। আমরা আর কিচ্ছু জানতে চাইনি। আমরা তো ভেবেছিলাম, কাশ্মীর এখন শান্ত। কিন্তু আবারও প্রমাণিত হয়ে গেল, কাশ্মীর যে কে সেই রয়েছে!”
অন্যদিকে জঙ্গি হামলার ঘটনায় কাঁদতে কাঁদতে সেই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তাঁর স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আচমকাই কয়েক জন ঘিরে ধরে আমাদের। সকলের মুখেই মাস্ক ছিল। এসেই আমাদের সকলকে বলে, মাটিতে শুয়ে পড়তে। সকলের হাতেই ছিল বন্দুক। জঙ্গিরা বলতে থাকে ‘ইনকো মাত ছোড়না’। ভয়ে আমরা শুয়ে পড়ি। তখন বেছে বেছে আমার স্বামী এবং অন্য এক জনকে গুলি করে জঙ্গিরা।’’
উল্লেখ্য, কাশ্মীরের পহেলগামে (Pahalgam) জঙ্গি হামলায় নিহত বেহালার সমীর গুহর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে জীবন বিমা নিগম (LIC)। জানা গিয়েছে, এলআইসি-র KMDO-II শাখায় তিনি জীবনবিমা করিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী তার মৃত্যুর পর এলআইসি-র সরশুনা শাখার আধিকারিকরা সমীরবাবুর স্ত্রী শর্বরী গুহর হাতে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার ডেথ ক্লেইম বাবদ চেক তুলে দিয়েছেন। মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই সমস্ত নথিপত্রের কাজ শেষ করে বিমার অর্থ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, যা এক প্রকার বেনজির।
প্রসঙ্গত, এখনও পর্যন্ত জঙ্গি হানায় রাজ্যের তিন জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে। বেহালার সমীরের পাশপাশি রয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা বিতান অধিকারী। এছাড়া পুরুলিয়ার মণীশরঞ্জন মিশ্র নামেও একজনের মৃত্যুর খবর জানা গিয়েছে। পুলওয়ামার পর এটাই ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলা। অন্তত মৃতের সংখ্যার নিরিখে।
নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই মৃতের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সরকারিভাবে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ বছর বয়সি নৌসেনা আধিকারিক লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। মৃতের তালিকায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, কর্নাটক, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, ওড়িশার বাসিন্দারা। এছাড়া, নেপাল ও আরব আমিরশাহীর বাসিন্দা দুই বিদেশিকেও হত্যা করেছে জঙ্গিরা।