নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলার পাল্টা জবাব দিতে পাকিস্তানের ওপর একের পর এক সার্জিকাল স্ট্রাইক ভারতের। না, আপাতত পাকস্তানের মাটিতে কোনও হামলা চালায়নি দিল্লি। বরং অন্য ভাবে তাদের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আর সেই পদক্ষেপ হিসেবেই সেদেশ থেকে সবরকম আমদানি নিষিদ্ধ করল ভারত। এর আগে স্থগিত হয়েছে সিন্ধু চুক্তি। পাকিস্তানি নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভারত ছাড়ার। ইসলামাবাদ থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের।
পাকিস্তান থেকে আমদানি নিষিদ্ধ
পাকিস্তান থেকে আমদানি নিষিদ্ধ হওয়ায় সেদেশ থেকে জাহাজে আর কোনও পণ্যই আসবে না এদেশে। ২০২৪-২৫ আর্থিক বর্ষে ভারত পাকিস্তানে ৪৪৭.৬৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল। আমদানি করেছিল ৪ লক্ষ ডলার সামগ্রী। ২রা মে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তান থেকে সব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দেশের স্বার্থেই এই নীতি নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া সেদেশ থেকে আর পণ্য আমদানি করা যাবে না।
পাকিস্তান থেকে কী আমদানি হতো?
পাকিস্তান থেকে জাহাজে করে ভারতে মূলত যে জিনিসগুলি আসতো সেগুলি হল ফল, বাদাম, তৈল বীজ, মেডিসিন্যাল প্ল্যান্টস, জৈব রাসায়নিক ইত্যাদি। পহেলগাঁও হামলার পরই পরপর বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আতারি ল্যান্ড ট্রানজিট পোস্ট। ফলে এই পথে যেসব পণ্য আসতো তাও বন্ধ হয়েছে। গত আর্থিক বর্ষে অর্থাৎ ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে এবছর মার্চ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তান থেকে ৮ লক্ষ ডলারের ফল ও বাদাম আমদানি করেছে। মেডিসিনাল প্ল্যান্ট আমদানি হয়েছে ২ লক্ষ ৬০ হাজার ডলারের। পাল্টা পাকিস্তানও বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য। পুলওয়ামা হামলার পরও দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য কমে গিয়েছিল। ২০২১-২২ সালে পাকিস্তান থেকে ভারত আমদানি করেছিল ৫১৩.৮২ মিলিয়ন ডলারের সামগ্রী। ২০২২-২৩ সালে সেই পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২৭.১ মিলিয়ন ডলার। দ্য হিন্দু সংবাদপত্র এই পরিসংখ্যান দিয়েছে।
সিন্ধু চুক্তি আগেই স্থগিত
এদিকে পহেলগাঁও হামলার আবহে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এই আবহে দিল্লির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে নালিশ ও আপিলের পথে হেঁটেছে পাকিস্তান। তবে তাতেও স্বস্তি পাচ্ছে না ইসলামাবাদ। এই আবহে ক্রমেই শুকিয়ে যাবে পাকিস্তান। পঞ্জাব প্রদেশে কৃষিকাজ ব্যাহত হবে। সিন্ধু প্রদেশে খরা দেখা দিতে পারে।
পাকিস্তানিদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ
পাকিস্তানি জঙ্গি হামলার পর ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, অনেকেই ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন। তবে কলকাতায় এখনও রয়েছে ৬৭ জন পাকিস্তানি। তাঁদের নিয়েও নজরদারি চলছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে কূটনৈতিক বার্তা স্পষ্ট—জঙ্গি মদতদাতাদের জন্য আর ছাড় নেই।
পাকিস্তানকে গ্রে-লিস্টে চায় দিল্লি
.কাশ্মীর হামলার জবাবে পাকিস্তানকে কূটনৈতিক ঘেরাটোপে ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত। নয়াদিল্লি চাইছে, ফের FATF-এর গ্রে-লিস্টে ঢুকুক পাকিস্তান। এতে আন্তর্জাতিকভাবে সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগ প্রমাণিত হবে। অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে মারাত্মক। ভারত ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সমর্থন জোগাড়ে সক্রিয় হয়েছে। একসঙ্গে সামরিক ও কূটনৈতিক চাপে ফেলতে চায় পাকিস্তানকে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন পাকিস্তানের
পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তান টানা ৯ দিন ধরে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। তার পাল্টা জবাব দিচ্ছে ভারত। ২রা মে রাতেও কুপওয়ারা, উরি, আখনুর সেক্টরে বিনা উস্কানিতে গুলি চালায় পাকিস্তান। ভারতীয় সেনা তাৎক্ষণিক পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ছে, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সেনা ও কেন্দ্র।
জঙ্গি নজর পীর পঞ্জালে
কাশ্মীর সীমান্তে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা, পীর পঞ্জালে নজর জঙ্গিদের। লস্কর-ই-তৈবা ও জৈশ-ই-মহম্মদের জঙ্গিদের কাছে নির্দেশ এসেছে—যুদ্ধ হলে পীর পঞ্জাল হাইওয়ে ব্লক করতে হবে। এতে ভারতীয় সেনার সাপ্লাই লাইন বন্ধ হয়ে যাবে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, বড় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা।
পাক সেনা ঘরে, পিওকেতে আমজনতাকে ট্রেনিং
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে সেনারা পালাতে শুরু করেছে। যুদ্ধের আবহে কাঁপছে তারা। এই অবস্থায় সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষদের ট্রেনিং দিতে শুরু করেছে সেনা কর্তারা। পাকিস্তান বুঝতে পারছে, জঙ্গিদের কাজে লাগিয়ে কাশ্মীরে যেভাবে নিরীহ পর্যটকদের হত্যা করা হয়েছে, তার ফল তাদের ভুগতেই হবে।