নিউজ ডেস্ক: কাশ্মীরে সন্ত্রাসে (Kashmir Attack) মদত দিতে পাক জঙ্গি সংগঠন কত খরচ করেছে জানেন? গত ৩ দশকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে জৈশ (JeM) প্রধান মাসুদ আজহার (Masood Azhar)। এক অডিও বার্তায় এই তথ্য হাতে পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেখানে মাসুদ আজহারকে বলতে শোনা গেছে, “ পাকিস্তানওয়ালো, মেরে জিহাদি ভাইয়োকো ১৫ হাজার কড়োর দিয়া হ্যায় ম্যায়নে। আসলা বারুদ অওর বম খরিদ নে কেলিয়ে। ”এরসঙ্গেই তাকে বলতে শোনা গেছে, “ এক কবর বনি হ্যায় পুলওয়ামা মে। পুলওয়ামা সে শ্রীনগর কি পার্লামেন্ট তক ঝান্ডে লেহরায়েঙ্গে। আব ইন্ডিয়া কো বরবাদ করকে ছোড়েঙ্গে।”
জৈশ-জঙ্গি যোগাযোগ এখনও?
গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, পহেলগাঁও হামলার পরেও জঙ্গিদের সঙ্গে জৈশ এ মহম্মদের নেতৃত্বের যোগাযোগ রয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে আসা কথোপকথন খতিয়ে দেখতে গিয়েই এসব তথ্য পাচ্ছেন গোয়েন্দারা। কাশ্মীরের এপ্রান্তের হ্যান্ডলারদের সঙ্গে কোডে কথাবার্তা চালয়ে যাচ্ছে তারা। কাজে লাগানো হচ্ছে ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কারদের। এই ওয়ার্কারদের বেশিরভাগই আবার নাবালক।
ফের সক্রিয় মাসুদ আজহার
পাকিস্তানে বসে কাশ্মীরের হ্যান্ডলারদের সঙ্গে কোডে কথা চালাচ্ছে জঙ্গি নেতারা। আর এক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক চালাচ্ছে মাসুদ আজহার। ১৯৯৯ সালে এই মাসুদ আজহারকে জেল থেকে ছাড়াতেই কান্দাহার অপহরণ কাণ্ড ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা। মাঝ আকাশে অপহরণ করা হয়েছিল ইন্ডিয়ার এয়ারলাইন্সের বিমান। তা সোজা নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছিল আফগানিস্তানের কান্দাহারে। মাসুদকে না ছাড়লে সব যাত্রীদের মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছল। সেই মাসুদ আজহারই ৫৭ বছর বয়সে নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে । তার নির্দেশে চলছে কোড-নেটওয়ার্ক।
কাশ্মীরে কোড-নেটওয়ার্ক
এপারে বলছে, বরফিলি হাওয়া সে সাবধান। মানে, কাছাকাছি এলিট কমান্ডোরা আছে। তাদের থেকে সতর্ক থেকো।
আবার বলছে, বাদল ছা রহে হ্যায়। মানে, সেনা বা পুলিশ আসছে।
মৌসম সাফ হ্যায়… এই বার্তা দিয়ে বোঝাচ্ছে, অল ক্লিয়ার। আশেপাশে কোনও পুলিশ বা জওয়ান নেই। এগিয়ে চলো।
আবার বলছে, বাহার চায়ে মত পিয়ো। মানে, ডেরায় লুকিয়ে থাকো।
জঙ্গল মে মঙ্গল বার্তা দিয়ে বলছে, এখন লুকিয়ে থাকো। আবার তেজি সে বলে জানানো হচ্ছে, কাজে গত আনো।
আন্তর্জাতিক মহলকে তথ্য ভারতের
পহলগাঁও হত্যা নিয়ে পাকিস্তান যখন নিজেদের হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে, তখন দিল্লি এইসব তথ্য তুলে দিতে চাইছে আন্তর্জাতিক মহলকে। সারা বিশ্ব জানে, মাসুদ আজহার কীভাবে পাক সেনার ঘেরাটোপে বহাল তবিয়তে আছে। এখন সেই মাসুদের নির্দেশই চলে আসছে কাশ্মীরে। মিলছে, তার কন্ঠস্বর। মিলছে, ফোন নম্বরও। এসব তথ্যই দুনিয়াকে জানাতে চাইছে ভারত। হাতেগরম তথ্য তুলে ধরে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কীভাবে বছরের পর বছর সন্ত্রাসবাদের আখড়া হয়ে কাজ করে যাচ্ছে পাকিস্তান।
জৈশ-লস্করকে জোটবদ্ধ করছে আইএসআই?
একদিকে জৈশ প্রধান মাসুদ আজহার। অন্যদিকে লস্কর ই তৈবার নেতা হাফিজ সইদ। এই দুই উইংকে কাজে লাগিয়ে গত কয়েক দশক ভারতে হামলা চালিয়েছে আইএসআই। ২৬/১১-র মুম্বই হামলা চালাতে আসরে নামে লস্কর। তার পর থেকে তারাই সন্ত্রাস চালানোর হাতিয়ার হয়ে ওঠে। তখন কিছুটা চুপ থেকে যায় মাসুদ। তবে টাকা তোলার কাজে লেগেছিল সে। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, হাফিজ সইদ জঙ্গি যোগানের কাজে লেগে থাকে। সে কাজে নামায় তালহা ও সুলেমানকে।
কাশ্মীর সন্ত্রাসের নতুন মুখ সুলেমান
জৈশের প্রক্সি দিতে কাশ্মীরে সন্ত্রাস চালাচ্ছে কাশ্মীর টাইগারস অ্যান্ড কাশ্মীর ফ্রিডম আর্মি। এর মাথায় মজিদ সুলেমানি। এটা কোড নেম। এর আসল নাম মনে করা হচ্ছে, আব্দুল মজিদ। সে পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গি ট্রেনিং নিয়েছে। অস্ত্র প্রশিক্ষণ হয়েছে অ্যাবোটাবাদ, মানসেরা, বাহাওয়ালপুরে। জৈশের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদ্রাসায় তার মগজধোলাইও হয়েছে। এখন সে কাশ্মীর টাইগারসকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
কে এই সুলেমান?
সুলেমান ওরফে আব্দুল মজিদ মৌলানা আব্দুল আজিজের ছেলে। একসময় তারা থাকতো জম্মু-কাশ্মীরের গান্ডেরবাল জেলায়। নব্বইয়ের দশকে আজিজ তার ৩ ছেলেকে নিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরাবাদে চলে যায়। সেখানে অম্বর ক্যাম্পে জঙ্গি অনুশীলন নেয়। সূত্রের খবর, সুলেমানের এক ভাই কাজি মুমতাজ এখন পিওকে-তে ডুডনিয়ালে সরকারি ক্ষেত্রে ডিরেক্টর পদে কাজ করে। থাকে মুজফফরবাদে। অন্যভাই, কাজি সাবির বর্তমানে লন্ডনে থাকে। আর সুলেমান জঙ্গি নেতা হিসেবে জৈশের প্রক্সি গ্রুপকে নেতৃত্ব দেয়।
জৈশ আর লস্করের কাজ কী?
জৈশ নেতা হিসেবে টাকা জোগাড় করছে মাসুদ আজহার। আর লস্কর নেতা হিসেবে জঙ্গি তৈরি করছে হাফিজ সইদ। এই দুজনকে একজোট করে আসরে নামিয়েছে আইএসআই। এই কাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে হামাসের তিন নেতা। তারা মাসুদ আজহার ও হাফিজ সইদকে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে বলে। হাফিজের বয়স হওয়ায় কাজে নামে তার ছেলে তালহা। বৈসরণ হামলায় সে নেতৃত্ব দেয়। অন্যদিকে জৈশের হয়ে কাজে লাগে সুলেমান। কাজে লাগানো হয় ওভারগ্রাউন্ড স্টাফদের। দিনে দশটা জায়গা থেকে দশটা সিমে ফোন করা হয় এপারে। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর চোখে ধুলো দিতেই চলে এই প্রয়াস।
আইএসআইকে সাহায্য পাক সেনার
সবটাই পরিকল্পিত ভাবে চালাচ্ছে পাকিস্তান। একদিকে জৈশ ও লস্কর কমান্ডারদের একত্রিত করে জঙ্গি হামলার ছক। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য। মাসুদ নিজেই বলেছে, সে ১৫ হাজার কোটি পাকিস্তানি টাকা দিয়েছে জঙ্গিদের পিছনে। এই টাকা যে তাকে আইএসআই দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে হামলার পর জঙ্গিরা যাতে জঙ্গল দিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পালাতে পারে, তার জন্য নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর লাগাতার বোমা বর্ষণ করে চলেছে পাক সেনা। কাশ্মীরে হামলার পর তারা শান্তি চুক্তিও লঙ্ঘন করছে। ফলে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের মনোভাব। আর বিশ্বের দরবারে সেই তথ্য তুলে ধরেই এখন ঘুঁটি সাজাচ্ছে ভারত।