নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলার পর তুঙ্গে উঠেছে সীমান্ত উত্তেজনা। যে কোনও সময় পাকিস্তানের ওপর প্রত্যাঘাত করতে পারে ভারত। তার জন্য দফায় দফায় বৈঠক সারছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে ফের দেখা করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। গত ৪৮ ঘণ্টায় এই নিয়ে দ্বিতীয় বার বৈঠক করেছেন দুজনে। ফলে তুঙ্গে উঠেছে কৌতূহল। ভারত-পাক যুদ্ধ কি আসন্ন? প্রশ্ন সব মহলে।
প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি
একদিকে বৈঠক, অন্যদিকে মক ড্রিল। এই পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন নিয়ে যুদ্ধের জিগির তীব্র হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর পাকিস্তানকে সমুচিত শিক্ষা না দিলে যে কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যাবে না, তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে। জঙ্গিদের সমূলে উৎখাত করতেই তাই চলছে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি।
পরমাণু বোমা প্রসঙ্গ
যুদ্ধের প্রসঙ্গ উঠতেই সামনে আসছে পরমাণু বোমা প্রসঙ্গ। ভারত আর পাকিস্তান দুদেশের হাতেই আছে পরমাণু অস্ত্র। পাকিস্তানের অনেক নেতা এর মধ্যে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু ভারত সচেতন ভাবেই এনিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ ফেলছে। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী সব দেশই এই সিদ্ধান্ত মেনে চলে যে প্রথম তারা পরমাণু হামলা করবে না। এধরনের হামলা হলে পাল্টা জবাব দিতেই তার ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করবে।
বিশ্বে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ কটি?
বিশ্বে ৯টি দেশ পারমাণবিক শক্তিতে সমৃদ্ধ। তবে এখনও পর্যন্ত একবারই এই বোমা ব্যবহার হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলে আমেরিকা। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমাতে লিটল বয় নামে পরমাণু বোমা ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর ঠিক ৩ দিন পর নাগাসাকিতে ফ্যাট ম্যান নামে আর একটি বোমা ফেলে। এর ফলে কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। পঙ্গু হয়ে যান প্রচুর মানুষ।
ভারতে পরমাণু বোমার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে?
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের আবহেই ফের সামনে চলে আসছে পরমাণু বোমার কথা। কিন্তু এই হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত কার হাতে আছে? প্রধানমন্ত্রী মোদী কি একাই পাকিস্তানের ওপর পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দিতে পারেন? উত্তর হল – না।
নিউক্লিয়ার কমান্ড অথরিটির হাতে ক্ষমতা
ভারত পারমাণবিক শক্তিতে সমৃদ্ধ। একটি দায়িত্বশীল দেশ। তাই কোনও একক নির্দেশে যাতে কেউ এই অস্ত্র ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে একটি কমিটি। এর নাম নিউক্লিয়ার কমান্ড অথরিটি। এই কমিটিই পরমাণু হামলা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
কমিটি কীভাবে বিভক্ত?
এই নিউক্লিয়ার কমান্ড অথরিটি দুটি পরিষদে বিভক্ত। একটি রাজনৈতিক পরিষদ। অন্যটি কার্যনির্বাহী পরিষদ। রাজনৈতিক পরিষদের সভাপতিত্ব করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। কার্যনির্বাহী পরিষদ রাজনৈতিক পরিষদের নির্দেশ পালন করেন। পারমাণবিক হামলার নির্দেশ দিতে পারে রাজনৈতিক পরিষদ। ফলে একক ভাবে কেউ এই পারমাণবিক হামলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
মোদী-ডোভাল বৈঠক
গত ৪৮ ঘণ্টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ২ বার বৈঠকের পরই জল্পনা বেড়েছে। এই দুজনই নিউক্লিয়ার কমান্ড অধরিটির দুই পরিষদের শীর্ষে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লাগাতার আলোচনা
এদিকে অজিত ডোভাল ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান এবং তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বৈঠকগুলি এত ধারাবাহিকভাবে হয়েছে যে তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। মনে করা হচ্ছে, শীঘ্রই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে ভারত।
মক ড্রিলে বার্তা
৭ মে দেশজুড়ে যুদ্ধকালীন মক ড্রিল করতে বলেছে ভারত সরকার। যে কোনও ধরনের আক্রমণ হলে কী করতে হবে, তা এই মহড়ার সময়ে জনগণকে জানানো হবে। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবার দেশে এমন মক ড্রিল হবে। ধারণা করা হচ্ছে, পাকিস্তানের যেকোন দুঃসাহসিক হামলায় সাধারণ মানুষ যাতে সংকট এড়াতে পারেন, সেজন্য এমন প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এবং যুদ্ধ হলে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে আগাম সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।