নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার বদলা নিয়েছে ভারতীয় সেনা। বুধবার মধ্যরাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানা হয়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি। জানা গিয়েছে, ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের ফলে কমপক্ষে ১০০ জঙ্গি নিকেশ হয়েছে।
পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর পর ভারতীয় সেনার সাংবাদিক বৈঠক করে জানায়, ‘বারবার ভারতে হামলা হতেই থাকে। এবার পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিয়েছে ভারত। বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জানান, ২৩ এপ্রিলই প্রত্যাঘাতের সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, ঠিক করে নেয় দেশ। তার জন্য সমস্ত তথ্য জোগাড় করেই পাল্টা হামলার ছক করে সেনা।
ঠিক কোন কোন ধাপ পেরিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’?
পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে ভারত। এর আগে পাকিস্তানিদের ‘সার্ক’ ভিসা বাতিল, সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করা-সহ ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। আর এবার একেবারে সরাসরি ‘অপারেশন সিঁদুর’। তবে অপারেশন সিঁদুর নামের এই সামরিক অভিযান রাতারাতি নয়, বরং এটি ছিল কয়েকদিনের গভীর পরিকল্পনার ফসল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা ও নৌসেনার প্রধানদের সঙ্গে। সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর পাওয়া যায়, আগামী দিনেও আরও বড় হামলা হতে পারে। তাই এই প্রত্যাঘাত দরকার ছিল। সন্ত্রাসবাদের কাঠামোকে ধ্বংস করতেই এই হামলার প্রয়োজন ছিল।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ
১। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল
কিছু দিন আগেই সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার কথা জানিয়েছে ভারত। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
২। বন্ধ করা হয়েছে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত
এছাড়াও বন্ধ করা হয়েছে ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত। বৈধ কারণে যাঁরা ওই পথ দিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের ১মে’র মধ্যে ভারতে ফিরতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
৩। পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল
এছাড়াও আগামী দিনে পাকিস্তানিদের ভিসা বাতিল করেছে ভারত। বর্তমানে যেসব পাকিস্তানিরা ভারতে ছিলেন তাঁদের ভারত থেকে পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে।
৪। দুই দেশের হাই কমিশন থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে সামরিক পরামর্শদাতাদের
এছাড়াও ভারত এবং পাকিস্তান-দুই দেশের হাই কমিশন থেকেই সরিয়ে নেওয়া হয় সামরিক পরামর্শদাতাদের। পাক হাইকমিশনের এই পদগুলি ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ বলে ঘোষণা করে নয়াদিল্লি।
৫। হাইকমিশনের সামগ্রিক লোকবল কমিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত
হাইকমিশনের সামগ্রিক লোকবল ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনা হয়।
সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত হতেই খরা পাকিস্তানে?
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলার পরই ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছেছে। সম্প্রতি উপগ্রহ থেকে তোলা শিয়ালকোটের কাছে চেনাব নদীর দুটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে। একটি ছবি ২৬ এপ্রিল ২০২৫-এর। এই দিনই ভারত পাকিস্তানকে সিন্ধু জল চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল। সে দিন নদীতে জলের প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ছবিটি ২৯ এপ্রিলের। ছবিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে চেনাব নদীতে জল খুবই কম। এই ছবি পাকিস্তানের উপর চাপ আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ।
‘অপারেশন সিঁদুর’
তবে এখানেই থেমে থাকেনি ভারত, ভাতে মারার পর এবার পাকিস্তানকে হাতে মারল ভারত। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার সরাসরি জবাব দিল ভারত। রাত পৌনে দুটো নাগাদ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়, কিছুক্ষণ আগে ভারতীয় সেনা “অপারেশন সিঁদুর”-এর প্রয়োগ করেছে। পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই জঙ্গি ঘাঁটিগুলি থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করা হয় ও রূপায়িত করা হয়। সূত্রের খবর, স্থল, নৌ ও বায়ুসেনার জয়েন্ট অপারেশন এই অপারেশন সিঁদুর। সেনার তরফে আরও জানানো হয়েছে, এই হামলা শুধুমাত্র জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করেই ঘটানো হয়েছে।
কী বললেন দিলীপ ঘোষ?
অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “হবে হবে অনেকদিন ধরেই শুনছিলাম। আমরাও অপেক্ষায় আছি যোগ্য জবাব করে দেবে সরকার। প্রথমে ভাতে মারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবার হাতে মারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যুদ্ধ তো সরকার করবে, সেনা করবে। আমাদের সাধারণ মানুষকে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাঁদের মনোবল বাড়বে। আর যুদ্ধ কখন কোথায় হবে কেউ জানে না। তার জন্য আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে হবে, সম্পত্তির সুরক্ষা দিতে হবে, নাগরিকদের জাগ্রত করতে হবে। যুদ্ধ হলে সমস্ত দেশেই হয় এটা। ইজরায়েলে আমরা দেখেছি যে কাঁধে বন্ধুক নিয়ে রান্না করতে।”