নিউজ ডেস্ক: কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি – ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল বায়ুসেনায় যোগ দেওয়ার। চোখের সামনে দেখেছেন, পরিবারের সকলে কীভাবে ভারতীয় সেনাবাহনীতে গর্বের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাই সেই ছোট্ট মেয়েটির স্বপ্ন সাকার হতে সময় লাগেনি। পাকিস্তানকে পহেলগাঁও হামলার জবাব দিতে যখন অপারেশন সিঁদুর চালিয়েছে ভারত, তখন সারা বিশ্বকে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ জানাতে পোডিয়ামে হাজির এই ললনা। ভারতের নারীশক্তির অন্যতম মুখ।
সোফিয়ার পরিচয় –
গুজরাতের ভদোদরায় জন্ম সোফিয়া কুরেশির। ১৯৮১ সালে জন্মানো এই মেয়েটি বড় হয়ে ওঠেন মুসলিম পরিবারে। ছোট থেকেই দেখেছেন বাড়ির সকলে যোগ দিয়েছেন ভারতীয় সেনায়। বায়োকেমিস্ট্রিতে তিনি মাস্টার ডিগ্রি করেন। ঠাকুরদা, বাবা, দাদা সকলেই কখনও না কখনও সেনা বাহিনীতে কাজ করেছেন। তাঁর বিয়ে হয় মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রির এক সেনাকর্তা মেজর তাজুদ্দিন কুরেশির সঙ্গে। তাঁদের ছেলের নাম সমীর কুরেশি।
সেনাতে যোগ সোফিয়ার – ১৯৯৯ সালে যখন কারগিল যুদ্ধ চলছে সেই বছরই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সোফিয়া। প্রশিক্ষণ নেন চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে। পান লেফটেন্যান্টের পদ। ২০০৬ সালে তিনি কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব – ২০১৬ সালে বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। এই দলে ছিল ৪০ জন। মহড়ার লক্ষ্য ছিল শান্তিরক্ষা অভিযান। নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই নেতৃত্ব অর্জন করেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালে পঞ্জাব সীমান্তে অপারেশন পরাক্রমের সময় তাঁর অবদানের জন্য তিনি প্রশংসাপত্র পান। নানা কাজে তাঁর সাফল্য দেখে সেনা কর্তারা তাঁকে সামনের সারিতে নিয়ে আসেন।
অপারেশন সিঁদুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের বর্ণনা দিতে এই সোফিয়া কুরেশিকেই এগিয়ে নিয়ে আসে সেনাবাহিনী। সারা বিশ্বের কাছে এর তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ। এক, সোফিয়া সংখ্যালঘু, তার ওপর মহিলা। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ভারত কতটা নারীশক্তির জয়গান গায়। একইসঙ্গে এটা প্রমাণিত যে মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান যতই নাশকতা চালাক না কেন, তাদের জবাব দিতে এগিয়ে আসেন সোফিয়ার মতো নারীরাই। এটাই ভারতের বৈশিষ্ট্য।
উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং –
ব্যোম অর্থাৎ শূন্য। শূন্যে যিনি বিচরণ করেন তিনিই ব্যোমিকা। আর কী নামের মাহাত্ম্য দেখুন। ছোটবেলায় রাখা নাম বড় বেলায় সার্থক। ছোট থেকে যিনি আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতেন, সেই ব্যোমিকা হয়ে উঠলেন আকাশকন্যা। স্কুল জীবনে যোগ দিয়েছিলেন এনসিসিতে। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক। ২০০৪ সালে যোগ দেন সশস্ত্র বাহিনীতে। প্রথমে ভারতীয় বায়ুসেনায় হেলিকপ্টার পাইলট হিসাবে কাজ করেন। ২০১৭ সালে বহাল হন উইং কমান্ডার হিসেবে।তিনি চেতক ও চিতা হেলিকপ্টার চালানোয় বিশেষজ্ঞ। বাড়ির কেউ সেনাবাহিনীতে যোগ না দিলেও, এই কন্যা এগিয়ে আসেন দেশের হয়ে লড়ার জন্য।
ব্যোমিকার কৃতিত্ব – ২০২০ সালের নভেম্বরে অরুণাচলে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় উদ্ধারকাজ চালিয়ে তিনি নাম করেন। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ২,৫০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওড়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে ব্যোমিকার। ২০২১ সালে, তিনি ২১,৬৫০ ফুট উচ্চতার মাউন্ট মণিরং-এ ত্রি-সেনার সর্ব-মহিলা পর্বতারোহণ অভিযানের অংশ নিয়ে ছিলেন। তাঁর এই কৃতিত্ব বিমানবাহিনী প্রধান সহ ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা সমস্ত কর্মকর্তারাও স্বীকার করেন।
এহেন দুই ভারতীয় নারীকে নিয়েই এদিন সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। সেখানেই দৃঢ়তার সঙ্গে দুই মহিলা তুলে ধরেন ভারতীয় সেনার বিক্রম। সারা বিশ্ব দেখতে পায়, কীভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষতি না করেও, সঠিক নিশানায় আঘাত হেনে খতম করা যায় জঙ্গিদের। এই দিনের কথা ভেবেই কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, চুন চুন কে মারুঙ্গা?