নিউজ ডেস্ক: অপারেশন সিঁদুর। সফল লক্ষ্যে আঘাত হেনে তছনছ করে দিয়েছে ৯টি জঙ্গি শিবির। এতদিন পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ওই জঙ্গি শিবিরগুলি থেকে ভারতে হামলা চালাতো সন্ত্রাসবাদীরা। দশকের পর দশক ধরে এই হামলা চালিয়ে এসেছে তারা। অবশষে মিলেছে জবাব। কিন্তু কীভাবে সঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানল ভারতীয় সেনা? এত নিখুঁত অপারেশন কীভাবে ?
NTRO- র চমৎকার
পাকিস্তান ও পিওকে-তে নিখুঁত নিশানায় আঘাত হানার পিছনে কাজ করেছে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা এনটিআরও। তারাই খুঁজে নিয়েছে কোথায় কোথায় জঙ্গি শিবির আছে। গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া খবরের ওপর নির্ভর করেই তারা স্থান বাছাই করেছে। আর তারপর সেনাবাহিনীকে সেই তথ্য দিয়ে গেছে। একটা নিখুঁত অর্কেস্ট্রা কাজ করেছে এই আক্রমণের পিছনে। পাকিস্তানের মাটি থেকে তুলে আনা গোয়েন্দা বাহিনীর খবর, এনটিআরও-র বিশ্লেষণ, আর অঙ্ক কষে সেনাবাহিনীর মিসাইল হানা। এক তারে বেঁধে এই কাজ করেছে ভারত।
NTRO কী
NTRO আসলে ভারতের টেকনিক্যাল এজেন্সি। ২০০৪ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী তখন এটি তৈরি হয়। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে এটি কাজ করে। এর প্রাথমিক কাজ হল অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত খবর সংগ্রহ করা। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। এর মধ্যে আছে সন্ত্রাসবাদ, সাইবার হানা, সীমান্ত সন্ত্রাস ইত্যাদি।
ভারতের চোখ ও কান NTRO
সোজা কথায় ভারতের চোখ ও কান বলা হয় এই NTRO কে। জঙ্গিরা কোথায় অবস্থান করছে, তা খতিয়ে দেখতে এর জুড়ি নেই। এটা একেবারে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এই NTRO-র সাহায্যেই সঠিক লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় সেনা।
NTRO-র প্রয়োজন কবে হয়?
১৯৯৯ সালে পাকিস্তান যখন কারগিলে হামলা চালায়, তখনই ভারত বুঝতে পারে এমন একটি সংস্থা তৈরির দরকার আছে। প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর নির্দেশে তৎকালীন উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর নেতৃত্বে গ্রুপ অফ মিনিস্টার এই বিশেষ উইং তৈরির অনুমোদন দেন। তবে এর রোডম্যাপ তৈরি করে দিয়েছিলেন এপিজে আব্দুল কালাম। তিনি তখন প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজার। আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির আদলে ২০০৪ সালের অক্টোবরে নিরাপত্তা বিষয়ক কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট কমিটি এটিকে অনুমোদন দেয়।
NTRO ব্যাকগ্রাউন্ড
এর অরিজিনাল নাম ছিল ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ফেসিলিটিজ অরগ্যানাইজেশন বা NTFO. আর NTRO প্রতিষ্ঠা করা হয় এজেন্সিগুলিকে টেকনিক্যাল ইনটেলিজ্যান্স দেওয়ার জন্য। তখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ছিলেন ব্রজেশ মিশ্র। বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন এপিজে আব্দুল কালাম। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ও উপ প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী এদের সঙ্গে আলোচনা করেই ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করার সংকল্প নেন। এই NTRO স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেট মনিটারিংয়ে সক্ষম। এই সরঞ্জাম জোগাড় করতে ৭০০ কোটি টাকা খরচ হয়। এই NTRO অনেক স্যাটেলাইট অপারেট করে। যেমন টেকনোলজি এক্সপেরিমেন্ট স্যাটেলাইট, কার্টোস্যাট সিরিজ, ইজারয়েল থেকে আনা রাডার ইমেজিং স্যাটেলাইট।
NTRO – র ভূমিকা
মিলিটারি অপারেশনের জন্য এই সংস্থা স্যাটেলাইট ইনটেলিজেন্স প্রোভাইড করে
কীভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যায়, তাতে সাহায্য করে
রিমোট সেন্সিং ইনটেলিজেন্স সংগ্রহ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন তথ্য খতিয়ে দেখে
কৌশলগত পরিকল্পনার জন্য নির্দিষ্ট ভৌগলিক স্থানের তথ্য সংগ্রহ করে
যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য ক্রিপটোলজি প্রযুক্তি দেখভাল করে
ক্ষেপণাস্ত্র মনিটরের জন্য বায়ুসেনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে
আইএনএস ধ্রুব-র সঙ্গে সমুদ্রে যোগাযোগ বজায় রাখে
সাফল্য এল কীভাবে
এই NTRO দিনরাত বিশ্লেষণ করে যাচ্ছে নানা তথ্য। তবে সাফল্য এসেছে বিভিন্ন সংস্থা এক সুরে কাজ করায়। রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং বা র যে খবর পাচ্ছিল, তা নির্দিষ্ট সময় পৌঁছনো হয়েছে এই সংস্থার কাছে। তা অঙ্ক কষে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তা তুলে দেওয়া হয়েছে সেনা বাহিনীর হাতে। আর পরিকল্পনা করেই নিখুঁত ছকে করা হয়েছে আঘাত। সকলের মিলিত প্রয়াসেই এসেছে সাফল্য।