নিউজ ডেস্ক: ভূস্বর্গে বেড়াতে গিয়ে অকালে ঝরে যায় ২৬টি প্রাণ। নাশকতার বলি হন সাধারণ নাগরিকরা। পহেলগাঁওয়ের সেই নৃশংস হত্যাকণ্ডের বদলা নিল ভারত। তবে শুধু পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাব নয়। এর আগে ২০১৬ সালে উরি হামলার জবাব দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলারও জবাব দিয়েছিল ভারত।
ফিরে দেখা ইতিহাস
২০১৬-র পর ২০১৯, তার পর ২০২৫, গত ন’বছরে এই নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তৃতীয় বার সেনা অভিযান চালাল ভারত। আর ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম একসঙ্গে অভিযান চালাল ভারতীয় সেনা, নৌসেনা এবং বায়ুসেনা।
২০১৬, উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-
২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরের উরি ক্যাম্পে ঢুকে হামলা চালায় চার জইশ জঙ্গি। তাতে প্রাণ হারান ১৯ জন সৈনিক। তবে ওই চার ফিদায়েঁ জঙ্গিকেই নিকেশ করেছিল ভারতীয় সেনা। সেই মর্মান্তিক ঘটনার ১০ দিনের মাথায় জবাব দিয়েছিল ভারত। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কাশ্মীরে ভারত-পাক নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জঙ্গিদের চারটি লঞ্চপ্যাডে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে (পাকিস্তান অকুপায়েড কাশ্মীর বা পিওকে) ঢুকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে ভারতীয় সেনা। তাতে সন্ত্রাসীদের একাধিক লঞ্চ প্যাড ধ্বংস করে ফৌজ। হিজবুল, জইশ ও লশকর, এই তিন জঙ্গি সংগঠনই সেই হানায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে লশকরের অন্তত ২০ জন জঙ্গি ভারতীয় সেনার হামলায় মারা যায়।
২০১৯, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক-
উরি হামলার তিন বছরের মধ্য জম্মু ও কাশ্মীরে আরও একটি বড় হামলা চালায় জঙ্গিরা। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় শ্রীনগর-জম্মু হাইওয়েতে সেনার কনভয়ে বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে ঢুকে জইশ-ই-মহম্মদের এক আত্মঘাতী জঙ্গি। বিস্ফোরণে ৪০ জওয়ান প্রাণ হারান। ওই দিন ৭৮টি গাড়ির সিআরপি কনভয় জম্মু থেকে শ্রীনগরের দিকে যাচ্ছিল। বাস, ট্রাক ও এসইউভি মিলিয়ে ২৫০০ জন জওয়ান ছিলেন তাতে। দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কে অন্তত ৩৫০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ঠাসা একটি স্করপিয়ো কনভয়ের দু’টি বাসে ধাক্কা মারে। প্রবল বিস্ফোরণের পরে একটি বাসে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের পরে আধাসেনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি চালায় জঙ্গিরা।
এরপর ওই হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। উরির জবাব ভারত দিয়েছিল ১০ দিনের মাথায়। আর পুলওয়ামার জবাব দিতে লেগেছিল ১১ দিন। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগে দিনটি বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। ওই দিন পড়শি পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছিল ভারত। পুলওয়ামা হামলার জবাবে পাকিস্তানের বালাকোটে সশস্ত্র অভিযান চালায় ভারতীয় বায়ুসেনা। উড়িয়ে দেওয়া হয় জইশ-ই-মহম্মদের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি।
২০২৩, রাজৌরি হামলার প্রত্যাঘাত-
পুলওয়ামার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২ জানুয়ারি সকালে জম্মুর রাজৌরি এলাকায় আবার আক্রমণ করেছিল জঙ্গিরা। একটি বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে তারা। বিস্ফোরণের ফলে এক শিশু মারা যায়। ৫ জন আহত হন। এরও জবাব দিয়েছিল ভারত। সীমান্তের ওপারে ভারী গোলাবর্ষণ করে ভারতীয় সেনা। ক্ষতিগ্রস্থ হয় পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি এলাকা।
অপারেশন সিঁদুর-
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। বেছে বেছে হিন্দু পর্যটকদের উপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীরা ছাড়া পাবে না বলে হুঙ্কার দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই নৃশংস জঙ্গি হামলার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ‘ছায়া সংগঠন’ দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।
ইতিমধ্যেই জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটক হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ করেছে মোদী সরকার। তার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও।
আর এবার পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ১৫ দিনের মাথায় জবাব দিল ভারতীয় সেনা। উড়ি, পুলওয়ামা, রাজৌরির মতন পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানল। গুঁড়িয়ে দিল একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। জানা গিয়েছে, শতাধিক জঙ্গি নিকেশ হয়েছে ভারতীয় সেনার এই প্রত্যাঘাতে।