নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওতে নৃশংস জঙ্গি হামলার কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। গতকাল, মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মোট ৯টি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। স্থল, বায়ু ও নৌসেনার মিলিত এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’। ২৫ মিনিটের অপারেশন, ২৪টি স্ট্রাইক করে ভারতীয় সেনা। ২০১৯ সালের বালাকোট অভিযানের পর এটিই ভারতের সবচেয়ে বড় সীমান্তবর্তী নির্ভুল হামলা।
তবে পুরো হামলাটি ভারত চালিয়েছে নিজেদের এয়ারস্পেস থেকেই। আগের মতো সার্জিক্যাল বা এয়ারস্ট্রাইকের পদ্ধতিতে নয়। ভারতের মাটি থেকে দাঁড়িয়েই চিহ্নিত জায়গাগুলিতে হামলা চালানো হয়েছে। আর তাতে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। রয়েছে স্ক্যাল্প ক্রুজ মিশালই, হ্যামার বোমা।
কিন্তু কেন এই অস্ত্রগুলিই বাছা হয়?
সেনা সূত্রে খবর, যাতে লক্ষ্যতেই আঘাত হানে অন্য কোথাও না আক্রমণ হয়। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের যাতে প্রাণহানি না হয় সেটাই মূল লক্ষ্য ছিল সেনাবাহিনীর। তাই এই অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
কী কী অস্ত্র ব্যবহৃত হল অপারেশন সিঁদুরে?
স্ক্যাল্প-
স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্রের অন্য নাম ‘স্টর্ম শ্যাডো’। দূরপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ২৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। ক্ষমতা রয়েছে লক্ষ্যবস্তুর গভীরে গিয়ে হামলা চালানোর।
হ্যামার বোমা (হাইলি অ্যাজাইল মডুলার মিউনিশন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ)-
এটি আদপে একটি স্মার্ট বম্ব, যার পুরো নাম হাইলি অ্যাজাইল মডিউলার মিউনিটন এক্সটেন্ডেড রেঞ্জ। এই স্মার্ট বোমাটি বাঙ্কার থেকে শুরু করে বহুতলে হামলা চালাতে সক্ষম। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈবা ও জয়েশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে এই বোমা দিয়েই। ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার রেঞ্জ রয়েছে স্মার্ট বোমাটির। এছাড়াও ভারতীয় সেনা গতকাল, রাতে হামলা চালাতে ব্যবহার করেছে কামিকাজে ড্রোন। আকাশপথে নজরদারি রেখে, টার্গেট বাছাই করতে এবং সেই নিশানায় আঘাত হানতে সাহায্য করেছিল এই ড্রোনই।
লয়টারিং মিউনিশন-
এই “কামিকাজে ড্রোন” নজরদারি, লক্ষ্যবস্তু চিহ্নিতকরণ এবং চূড়ান্ত হামলার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এই ড্রোন সিস্টেমগুলি লক্ষ্য এলাকার উপরে ঘুরে বেড়ায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণে হুমকি চিহ্নিত ও নির্মূল করে।
কিভাবে লক্ষ্যভেদ করল ভারতীয় সেনা?
ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌসেনা ও বায়ুসেনা মিলে এই যৌথ অভিযান চালায়। পহেলগাম হামলার পর থেকেই জোরকদমে প্রস্তুতি নিচ্ছিল ভারত। সেনাবাহিনীর তিন বিভাগকেই দেওয়া হয়েছে ফ্রি হ্যান্ড। কোথায় কিভাবে হামলা চালানো হবে তার নিখুঁত পরিকল্পনা করে অবশেষে বুধবার রাত দেড়টার দিকে শুরু হয় অভিযান, অপারেশন সিঁন্দুর।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান যেমন-২০০০ ও সুখোই-৩০ (2000 and Sukhoi-30) এমকেআই বাহাওয়ালপুর, কোটলি, মুজাফফরাবাদে জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই এলাকাগুলিতেই ঘাঁটি ছিল জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই- মহম্মদ, লস্কর-ই তৈবার ঘাঁটি ছিল। ভারতে এই হামলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করল রাফাল। স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইল ও হ্যামার প্রিসিশন-গাইডেড গোলাবারুদ দিয়ে রণসজ্জিত রাফাল এই প্রত্যাঘাত হেনেছে। ভারতীয় আকাশসীমার মধ্যে থেকেই করা হয় এই আক্রমণ।
এদিন মধ্যরাতের পর ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে আক্রমণের কথা ঘোষণা করে। জানা গিয়েছে যে পুরো অভিযানটি প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছিল। অপারেশনের আগে অজিত দোভাল প্রায় ১৫ টি মিটিং করছেন।
উল্লেখ্য, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগাযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। তারা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে। আমেরিকা, চিন, রাশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনীতির মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলেন। তার পর ১৫ দিনের মাথায় ভারত প্রত্যাঘাত করল পাকিস্তানে।