নিউজ ডেস্ক: ‘অপারেশন সিঁদুরে’ আঁতে ঘা লেগেছে পাকিস্তানের। পাল্টা প্রত্যাঘাত করবেই পাকিস্তান- এই বিষয়ে নিশ্চিত ভারতীয় বায়ুসেনাও। তাই প্রস্তুত তারাও। ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। ১৯৭১-এর পর প্রথমবার পাকিস্তানের মাটিতে ঢুকে অভিযান চালিয়েছে ভারত। সূত্রের খবর, এয়ার স্ট্রাইকে অন্তত ১০০ জঙ্গি নিকেশ হয়েছে। যার মধ্যে মাসুদ আজহারের পরিবারের দশ জন রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক জঙ্গি-ঘাঁটি। তালিকায় রয়েছে জৈশ–ই–মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন, লস্কর–ই–তইবার মতো জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি। কেউ কেউ বলছেন, এই অভিযানে পাকিস্তানের একেবারে হৃদয়ে আঘাত করা হয়েছে। আর পাকিস্তান যে পাল্টা অভিযান চালাবে, তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পহেলগাঁও বা মুম্বই হামলার ধাঁচে কোনও হামলা চালানো হবে না তো?
সূত্রের খবর, পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাতেই ভারত পাকিস্তানে ঢুকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালিয়েছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভারতের এই আঘাতের সেভাবে জবাব দিতে পারেনি পাকিস্তান। তবে এই প্রত্যাঘাত পাকিস্তানে সামরিক শক্তির থেকে বেশি আত্মবিশ্বাসে লেগেছে। তাই তারাও পাল্টা হামলা চালাতে পারে। জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে ভারত প্রত্যাঘাত করলেও, যে দেশের মাটিতে সন্ত্রাসের চাষ হয়, সেই দেশে কি জঙ্গির অভাব? রয়েছে অনেক স্লিপার সেল। সেই সেলগুলি জাগিয়ে আবারও পহেলগাঁও বা মুম্বই হামলার ধাঁচে কোনও হামলা চালানো হবে না তো? উঠছে সে প্রশ্নও।
পাকিস্তানের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ অপারেশন সিঁদুরকে “কাপুরুষোচিত বেসামরিক হামলা” বলে নিন্দা করেছেন। পাকিস্তান দাবি করেছে, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর ধ্বংস করেছে এবং পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ভারত এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, তাদের কোনো যুদ্ধবিমান হারিয়ে যায়নি এবং পাকিস্তানের আর্টিলারি হামলায় তিনজন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ভারতের জন্য বাণিজ্য স্থগিত এবং সীমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।
বড় পদক্ষেপ করল পাকিস্তান
শুধু ভারত নয়, সমস্ত দেশের জন্যই তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিল। ৪৮ ঘণ্টার জন্য আপাতত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জারি করা নির্দেশে বলা হয়েছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য পাকিস্তানে ‘নো ফ্লাই জোন’ করা হচ্ছে। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র কিছু প্রয়োজনীয় বিমানের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে।
কিন্তু এরপর কোন পথে এগোবে পাকিস্তান?
গতকালের প্রত্যাঘাতের পর সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সব দলকে একজোট থাকার অনুরোধ করেছেন। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান ভারতের উপর হামলা চালাতেই পারে, তবে তা হবে নিছকই প্রতীকী। অর্থাৎ না করলেই নয়! কারণ পাকিস্তানের না আছে, আর্থিক ক্ষমতা, না আছে কূটনৈতিক ক্ষমতা।
একটি প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান মাত্র চার দিনের জন্য টানা যুদ্ধ চালানোর গোলাবারুদ মজুত রাখে। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সংকট এবং অস্ত্রের ঘাটতি পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি সামরিক অভিযানের ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। পাকিস্তান এলওসি বরাবর আর্টিলারি হামলা বাড়াতে পারে বা সীমান্তে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারে। তবে, ভারতের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে পাকিস্তান বড় মাপের সামরিক অভিযান এড়িয়ে যেতে পারে।
কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ
পাকিস্তান (pakistan) কূটনৈতিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে। তারা রাষ্ট্রসংঘ এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) মতো মঞ্চে ভারতের হামলাকে “আগ্রাসন” হিসেবে তুলে ধরতে পারে। পাকিস্তান ইতিমধ্যে দাবি করেছে যে ভারত বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তবে, ভারতের দাবি, হামলাগুলো ছিল সন্ত্রাসবিরোধী এবং নির্ভুল, যা ৬০টিরও বেশি দেশের সমর্থন পেয়েছে।
অর্থনৈতিকভাবে, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পূর্ণ বন্ধ করতে পারে এবং ভারতীয় পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। তবে, পাকিস্তানের অর্থনীতি ইতিমধ্যে সংকটে রয়েছে, এবং এই ধরনের পদক্ষেপ তাদের নিজেদের উপরই বুমেরাং হয়ে ফিরতে পারে।
সব দিক থেকে প্রস্তুত ভারত
যদিও এসব কথা মাথায় রেখেই সব দিক থেকে প্রস্তুত রয়েছে ভারত। ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন দেশের সবক’টি বায়ুসেনা কমান্ডের কর্তা এবং শীর্ষ আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, মূলত ভারতের আকাশ কীভাবে সুরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে সম্পূর্ণ মুড়ে ফেলা যায়, সেটাই ছিল আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। এছাড়াও পাকিস্তানের দিক থেকে যদি স্ট্রাইক হয়, তাহলে কোন কমান্ডের কী দায়িত্ব থাকবে এবং কীভাবে এই প্রত্যাঘাতে জবাব আকাশ থেকে আকাশে দেবে, সেটাও কার্যত স্থির হয়ে গিয়েছে বলে বায়ুসেনা সূত্রে খবর।
অন্যদিকে এসবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার সাতসকালে কেঁপে উঠল পাকিস্তানের লাহোর শহর। সূত্রে খবর, আজ সকালে লাহোর বিমানবন্দরের কাছে জোরাল বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে অনেকেরই আশঙ্কা, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে পাকিস্তানের। ফের সামরিক কোনও অ্যাকশন হতে পারে। তবে ভারত ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের কোনও যোগ নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, প্রথমে সাইরেনের শব্দ শোনা যায়। তারপরই বিস্ফোরণ হয়। অনেকে আবার এই বিস্ফোরণের পিছনে বালোচ আর্মির হাত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে। পাকিস্তানের অন্দরেই বিদ্রোহ শুরু করেছে বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি। ট্রেন হাইজ্যাক থেকে শুরু করে পাক সেনার কনভয়ে হামলা- একের পর এক আঘাত হানছে তারা। এই হামলার পিছনেও তাদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
”প্রত্যেক ফোঁটা রক্তের শোধ তুলব”, শেহবাজ শরিফ
অপরেশন সিঁদুরের পর সীমান্তের ওপার থেকে হুমকি-হুঁশিয়ারি উড়ে আসছে। জাতির উদ্দেশে ভাষণে এবার ভারতের উপর প্রতিশোধ তোলা হবে বলে বার্তা দিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন শেহবাজ। সেখানে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানার অভিযোগ তোলেন তিনি। জানিয়ে দেন, এর প্রতিশোধ পাকিস্তান নেবেই। তাঁর বক্তব্য, “নিরীহ শহিদদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমরা। ভারত আগ্রাসন দেখিয়ে ভুল করেছে। এর ফল ভুগতে হবে ওদের। ভেবেছিল আমরা পিছু হটব। কিন্তু পাকিস্তানের সাহসের কথা ভুলে গিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিল, দেশের জন্য শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়তে প্রস্তুত পাকিস্তানিরা। কথা দিচ্ছি, প্রত্যেক রক্তবিন্দুর প্রতিশোধ নেব আমরা।” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় জম্মু ও কাশ্মীর একটি বিতর্কিত অঞ্চল ছিল, আছে এবং গণভোট না হওয়া পর্যন্ত তা-ই থাকবে। ভারত একতরফা ভাবে যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, তাতে সত্য পাল্টে যাবে না। আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। আমরা সত্যের জন্য লড়াই করছি।”
পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের পূর্বাভাস?
উল্লেখ্য, ভারতের অপারেশন সিঁদুর-এর পর পাকিস্তান বলেছে ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’। তবে পুরোপুরি যুদ্ধ থেকে বিরত থাকার কথা বলছেন অনেকেই। কিন্তু ভারত জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তান যদি কোনও পদক্ষেপ করে, ভারতের পদক্ষেপ হবে আরও কড়া। ঝাঁঝ হবে আরও বেশি। তাই যুদ্ধের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে অপারেশন সিঁদুর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে একটি সংকটপূর্ণ জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। তাই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক মধ্যস্থতা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শান্তি বজায় রাখতে দুই পক্ষকেই সংযমী পদক্ষেপ নিতে হবে।