নিউজ ডেস্ক: ‘অপারেশন সিঁদুরে’ বিরাট সাফল্য পেয়েছে ভারত। পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে এসেছে ভারত। পাল্টা হামলার হুমকি দিচ্ছে পাকিস্তানও। অর্থাৎ অপারেশন সিঁদুরের পর ভারতে হামলা চালাতে পারে পাকিস্তান, আশঙ্কা এমনটাই। ইতিমধ্যেই সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পঞ্জাব ও রাজস্থানে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
লাগাতার বিস্ফোরণ পাকিস্তানে
অপরেশন সিঁদুরের পর আজ, বৃহস্পতিবার সকালেই পাকিস্তানের লাহোরের ওয়ালটন বিমানবন্দরে পরপর বিস্ফোরণ হয়। এর ঘণ্টাখানেক বাদেই এবার করাচিতেও বিস্ফোরণ হয়। একইভাবে রাওয়ালপিন্ডিতেও বিস্ফোরণ হয়েছে বলে খবর। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের ১২টি শহরে মোট ১৫টি জায়গায় বিস্ফোরণ হয়েছে। প্রাথমিক সূত্রে খবর, ড্রোন থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। লয়টারিং অ্যামোনিশন বলা হয়। তবে এখনও হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি।
কোথায় কোথায় বিস্ফোরণ?
পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তানে সিরিয়াল বিস্ফোরণ হচ্ছে। সকালে লাহোর পরপর ৬টি বিস্ফোরণের পর এবার করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, শেখপুরা, নারওয়াল, উমরকোট, ঘটকি, সিয়ালকোট, গুজরানওয়ালা, বালুচিস্তানে পরপর বিস্ফোরণ হয়েছে।
গতকাল, বুধবার রাত থেকে এই লাগাতার বিস্ফোরণ শুরু হয়েছে। প্রথমে সিয়ালকোটে পরপর বিস্ফোরণ হয়। এরপর আজ সকালে লাহোরে পাক সামরিক বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরণ হয়। এরপর পাক সেনা ছাউনিতেও বিস্ফোরণ হয়।
লাগাতার গোলা বর্ষণে শহিদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান
আর পুঞ্চ সেক্টরে পাকিস্তানি সেনার অবাধে এই গুলিবৃষ্টি এবং গোলাবারুদ বর্ষণে শহিদ হয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান। জানা গিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করার পর থেকে, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর গোলা বর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয় পাক বাহিনী। তাতে একাধিক নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়। পাল্টা ভারতীয় সেনার জবাবে ১০ জন পাক জওয়ানের মৃত্যু হয়। এরই মধ্যেই পাকিস্তানের শেলিংয়ে মৃত্যু হয় ল্যান্স নায়েক দীনেশ কুমারের। সেনাবাহিনীর হোয়াইট নাইট কোরের তরফে একথা জানানো হয়েছে। নিহত দীনেশ কুমার হরিয়ানার বাসিন্দা। ৫ এফডি রেজিমেন্টে পোস্টিং ছিল তাঁর। পুঞ্চ সেক্টরে নিহত হয়েছেন তিনি।
‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে শুরু সর্বদল বৈঠক
এমত পরিস্থিতিতে সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সর্বদল বৈঠক শুরু হয়েছে নয়াদিল্লিতে। বৈঠকে যোগ দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বেলা ১১টায় এই বৈঠক শুরু হওয়ার আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবন ৭, লোককল্যাণ মার্গে যান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। সরকারের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ভারত-পাক সীমান্তে কী পরিস্থিতি রয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা করেন ডোভাল। ওই সূত্রের দাবি, পাকিস্তান যে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গুলিবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে, তা-ও প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়।
সীমান্ত জুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি
যদিও ভারত যুদ্ধ চায় না, কিন্তু পাকিস্তান হামলা করলে, তার যোগ্য জবাব দেবে ভারতও। সেই প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই রাজস্থান, পঞ্জাব সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাও। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ-কে “শুট অ্যাট সাইটে”র নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্জাবে সমস্ত পুলিশ কর্মীর ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। রাজস্থানেও একই নির্দেশ। পুলিশ ও রেলকর্মীদের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পঞ্জাব ও রাজস্থানের সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে। রাজস্থানের সঙ্গে পাকিস্তানের ১০৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। সম্পূর্ণ সীমান্ত জুড়ে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে বায়ুসেনাকে। এর পাশাপাশি সীমান্তে সন্দেহজনক কিছু দেখলেই বিএসএফ-কে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, সীমান্তে মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম ও অ্যান্টি ড্রোন সিস্টেম চালু করা হয়েছে।
আপাতত ৯ মে পর্যন্ত যোধপুর, কিসানগড়, বিকানের বিমানবন্দরে উড়ান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আকাশে ফাইটার জেট চক্কর দিচ্ছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতেও হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। বিপদ হলে গ্রামগুলিতে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া বা ইভাকুয়েশন প্ল্যান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।রাত হলেই ব্ল্যাকআউটের নির্দেশ
এসবের পাশাপাশি জয়সালমীর ও যোধপুরে রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত ব্ল্যাকআউটের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিকানের, শ্রী গঙ্গানগর, জয়সালমীর ও বারমেরে সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরীক্ষাও বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, গঙ্গানগর থেকে কচ্ছের রণ পর্যন্ত সুখোই-৩০ এমকেআই জেট নজরদারি করছে।