নিউজ ডেস্ক: অপারেশন সিঁদুরের পর সাংবাদিক বৈঠকে হাজির হওয়া কর্ণেল সোফিয়া কুরেশির সঙ্গে সম্পর্ক রানী লক্ষীবাইয়ের ? হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। সোফিয়া কুরেশি একজন সাধারণ সৈনিক নন। তাঁর ধমনীতে বইছে বীর সেনানির রক্ত। তাঁর পরিবারের অনেকেই বংশ পরম্পরায় ভারতীয় সেনা বাহিনীতে যুক্ত। এমনকি স্বাধীনতা সংগ্রামী রানী লক্ষী বাইয়ের সঙ্গেও তাঁদের সম্পর্ক আছে।
রানী লক্ষীবাই ও সোফিয়া কুরেশি
রানী লক্ষীবাই তখন স্বাধীনতা যুদ্ধে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। সেই সময় সোফিয়ার দিদার মা রানী লক্ষীবাইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেনাবাহিনীতে সকলের নজের আসার পর সাংবাদিকদের একথা জানিয়ে ছিলেন কর্ণেল সোফিয়া। সেই ভিডিও আবার নতুন করে ভাইরাল হয়েছে। সকলেই বলছেন, ঝাঁসি বাহিনীর সেই তেজ আর পরম্পরাই বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি।
২০১৮ সালে নজরে আসেন সোফিয়া
গুজরাটের ভদোদরার বাসিন্দা সোফিয়া। ২০১৮ সালেই সকলের নজরে আসেন তিনি। পুণেতে আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ভারতীয় সেনাদের অনুশীলন চলছিল। এই অনুশীলনের সময় ভারতীয় টিমের দায়িত্ব নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। তাঁকেই টিমের কমান্ডার করা হয়েছিল।
সোফিয়ার পরিচয় – গুজরাতের ভদোদরায় জন্ম সোফিয়া কুরেশির। ১৯৮১ সালে জন্মানো এই মেয়েটি বড় হয়ে ওঠেন মুসলিম পরিবারে। ছোট থেকেই দেখেছেন বাড়ির সকলে যোগ দিয়েছেন ভারতীয় সেনায়। বায়োকেমিস্ট্রিতে তিনি মাস্টার ডিগ্রি করেন। ঠাকুরদা, বাবা, দাদা সকলেই কখনও না কখনও সেনা বাহিনীতে কাজ করেছেন। তাঁর বিয়ে হয় মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রির এক সেনাকর্তা মেজর তাজুদ্দিন কুরেশির সঙ্গে। তাঁদের ছেলের নাম সমীর কুরেশি।
সেনাতে যোগ সোফিয়ার
১৯৯৯ সালে যখন কারগিল যুদ্ধ চলছে সেই বছরই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সোফিয়া। প্রশিক্ষণ নেন চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে। পান লেফটেন্যান্টের পদ। ২০০৬ সালে তিনি কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা মিশনে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।
সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব
২০১৬ সালে বহুজাতিক সামরিক মহড়ায় ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। এই দলে ছিল ৪০ জন। মহড়ার লক্ষ্য ছিল শান্তিরক্ষা অভিযান। নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতেই এই নেতৃত্ব অর্জন করেন তিনি। এর আগে ২০১০ সালে পঞ্জাব সীমান্তে অপারেশন পরাক্রমের সময় তাঁর অবদানের জন্য তিনি প্রশংসাপত্র পান। নানা কাজে তাঁর সাফল্য দেখে সেনা কর্তারা তাঁকে সামনের সারিতে নিয়ে আসেন।
অপারেশন সিঁদুরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযানের বর্ণনা দিতে এই সোফিয়া কুরেশিকেই এগিয়ে নিয়ে আসে সেনাবাহিনী। সারা বিশ্বের কাছে এর তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ। এক, সোফিয়া সংখ্যালঘু, তার ওপর মহিলা। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ভারত কতটা নারীশক্তির জয়গান গায়। একইসঙ্গে এটা প্রমাণিত যে মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান যতই নাশকতা চালাক না কেন, তাদের জবাব দিতে এগিয়ে আসেন সোফিয়ার মতো নারীরাই। এটাই ভারতের বৈশিষ্ট্য।
মেয়ের জন্য গর্বিত পরিবার
মেয়ের জন্য গর্বিত সোফিয়ার মা হালিমা কুরেশি। তিনি বলেন, দেশের জন্য মেয়ে যে কাজ করছে, তাতে তিনি খুশি। প্রতিটি ছেলে মেয়েই যাতে দেশের জন্য কাজে এগিয়ে আসে এবং প্রত্যেকের বাবা-মা যাতে তাদের সন্তানদের অনুপ্রেরণা দেয়, তার জন্য সওয়াল করেন তিনি। আসলে, সোফিয়ার সেনাতে যোগ দেওয়ার পিছনেও তাঁর অবদান আছে। সোফয়ারা ২ বোন। ছোট বোন এনসিসিতে যুক্ত ছিল। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর সোফিয়ার মা সোফিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, দু বোনের মধ্যে একজনকে সেনাতে যোগ দিতে হবে। সোফিয়া বলেন, সুযোগ পেলে যাব। আর সেই সুযোগও এসে যায়। সেই পথ ধরেই আজ দেশের সকলের অভিনন্দন কুড়োচ্ছেন সোফিয়া।
পরিবারের রক্তে স্বদেশিয়ানা
সোফিয়ার ভাই মহম্মদ সঞ্জয় কুরেশি বলেন, স্বদেশিয়ানা তাঁদের রক্তে। পরিবারের প্রায় সকলেই কোনও না কোনও ভাবে সেনাবাহিনীতে যুক্ত। সোফিয়াও বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে এমএসসির পর প্রফেসর হতে চাইলেও, সে ঢুকে যায় সেনাতে।
বাবা তাজউদ্দিন কুরেশি বলেন, মেয়ের জন্য তিনি গর্বিত। তাঁদের কাছে দেশই সবকিছু। প্রথমে তাঁরা ভারতীয় , তারপর মুসলিম।
স্বদেশের জন্য এই ভালোবাসা, নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার ইচ্ছাই সোফিয়ার মতো সেনানির জন্ম দিয়েছে। আর এটাই ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তির উৎস।