নিউজ ডেস্ক: ভারতের প্রত্যাঘাতে দিশাহারা পাকিস্তান। অপারেশন সিঁদুরের পর লজ্জা ঢাকতে ফের সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে পাক সেনারা শুরু করে গুলিবর্ষণ। এরই মধ্যে সূত্রের খবর, ভারতের ১৫টি শহরকে টার্গেট করেছিল পাকিস্তান। জানা গিয়েছে, শ্রীনগর, অমৃতসর, পাঠানকোট, জলন্ধর, চণ্ডীগড়, লুধিয়ানা, অবন্তীপোরা, জম্মু, ভাটিন্ডা, কাপুরথালা, আদমপুর, ভুজকেও টার্গেট করেছিল পাকিস্তান। তবে এসবের মাঝে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের আঁচ কি পড়বে কলকাতাতেও?
ফিরে দেখা ইতিহাস
প্রায় আশি বছর আগের কথা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল কলকাতায়। শহরের একাধিক জায়গা, একাধিক রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তারপর একাত্তরের যুদ্ধ হয়। এরপর আর সেই অর্থে বাংলাকে পোহাতে যুদ্ধের আঁচ। সে সময় ম্যাঙ্গো লেন, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, খিদিরপুর, হাতিবাগান, বজবজ- সহ একাধিক জায়গায় বোম ফেলেছিল জাপান। বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের গান্ধী হাউস, বিবাদি বাগের সেন্ট জনস চার্চ সহ একাধিক ইমারত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু এবার কী হবে?
যুদ্ধ হলে কলকাতাবাসী লুকোতে পারেন এই-এই জায়গায়
সে সময় মহম্মদ আলি পার্কের জলাধার ব্যবহৃত হত বাঙ্কার হিসেবে। এখন তো তারও আর সুযোগ নেই। ব্যবহারযোগ্য অবস্থাতে নেই শ্রদ্ধানন্দ পার্কের আন্ডারগ্রাউন্ডও। এখন কলকাতাকে একমাত্র বাঁচাতে পারে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো। আন্ডার গ্রাউন্ড মেট্রো স্টেশনগুলো বম্বিংয়ের সময়ে পূরণ করতে পারে বাঙ্কারের কাজ।
১. কলকাতার পলিমাটির ৩-৫ মিটার নিচে মেট্রো স্টেশনের ছাদ। বম্বিং হলে ততদূর পৌঁছবে না বিস্ফোরণ।
২. বিস্ফোরণের উত্তাপও পৌঁছবে না মাটির নিচে।
৩. আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোর উপরে মাটির আস্তরণ কুশন এফেক্টের কাজ করবে।
৪. তবে মেট্রোর টানেলের থেকে মেট্রো স্টেশনই বেশি নিরাপদ।
এছাড়াও যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে হলে শহরবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে এবং সরকারি নির্দেশ মেনে চলতে হবে। জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে হলে, কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে, যেমন:
১। অপারেশনাল প্ল্যান-জরুরি অবস্থার জন্য আগে থেকে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে রাখা ভালো। পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের সাথে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা যেতে পারে।
২। যোগাযোগের ব্যবস্থা-জরুরি অবস্থার সময় যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। মোবাইল ফোন, রেডিও বা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন।
৩। সুরক্ষার ব্যবস্থা-জরুরি অবস্থার সময় আশ্রয় নেওয়ার জন্য একটি নিরাপদ স্থান চিহ্নিত করে রাখা ভালো। গর্ত বা অন্য কোনো সুরক্ষিত স্থান আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪। জরুরি খাদ্য ও পানীয়-জরুরি অবস্থার সময় খাবার ও পানীয়ের অভাব হতে পারে। তাই আগে থেকে কিছু খাদ্য ও পানীয় মজুত করে রাখা ভালো।
৫। ফার্স্ট এইড-জরুরি অবস্থার সময় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একটি ফার্স্ট এইড কিট রাখা উচিত।
অন্যান্য জরুরি সরঞ্জাম-জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম, যেমন – ফ্লাশলাইট, ব্যাটারি, এবং জরুরি অবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অন্য কিছু জিনিস সাথে রাখতে পারেন।
অনির্দিষ্টকালের জন্য পৌরসভার সমস্ত ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার কলকাতা পৌরসভার তরফে সমস্ত বিভাগীয় আধিকারিকদের নির্দেশিকা দিয়ে জানানো হয়েছে যে,
১। সমস্ত বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলা। এছাড়া টালা ট্যাঙ্ক-সহ কলকাতা পৌরসভার সমস্ত স্থাপত্য এবং জলাধারে নজরদারি বাড়াতে হবে। ২৪ ঘন্টা নজরদারি এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
২। দিনে এবং রাতে পৌরসভার জলের ট্যাঙ্ক সবসময় প্রস্তুত রাখতে হবে। বিপর্যয় মোকাবিলা সামগ্রী (ত্রিপলসহ অন্যান্য) এবং ত্রাণ (চাল ডাল-সহ শুকনো খাবার) সামগ্রী সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রয়োজনে নতুন করে সংগ্রহ করে রাখতে হবে।
৩। ২৪ ঘণ্টা কলকাতা পৌরসভার কন্ট্রোল রুম খোলা রাখতে হবে এবং আধিকারিকদের কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থাকতে হবে।
৪। বর্ষীয়ান এবং গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের মোবাইল সব সময় অন রাখতে হবে। রাতেও যেন মোবাইল বন্ধ না করা হয়।
উল্লেখ্য, বুধবার অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পরই বিভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার কথা বলেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! শুধু তাই নয়, এই সময়ে ‘অযথা আতঙ্কিত’ না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।