নিউজ ডেস্ক: ফের ভারতে হামলার ছক? গতরাতের প্রত্যাঘাত থেকেও শিক্ষা নেয়নি পাকিস্তান? দেশে যুদ্ধের আবহে দিল্লি থেকে কলকাতা- সর্বত্র জায়গায় নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হল। বাড়ানো হল নজরদারি। বাতিল করা হল সরকারি কর্মীদের ছুটি।
আসলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে পহেলগাঁওয়ের হামলার পর থেকেই। ভারত “অপারেশন সিঁদুরে”র মাধ্যমে পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে। তারপরও পাকিস্তান থামেনি। বৃহস্পতিবার রাতেই জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, পঞ্জাবের একাধিক জায়গায় লাগাতার ড্রোন-মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে। যদিও ভারত প্রতিটি হামলাই আটকে দিয়েছে। এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে হাই অ্যালার্ট বিমানবন্দরগুলিতেও। ২০টি বিমানবন্দরে নোটাম জারি করা হয়েছে। বাকি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরগুলিতেও নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
কলকাতা বিমানবন্দরে জারি হাই অ্যালার্ট
ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ আবহে কলকাতা বিমানবন্দরে জারি হাই অ্যালার্ট। ইতিমধ্যেই বিমানবন্দরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিমানবন্দর চত্বরে অ্যারাইভাল, ডিপারচারে কোন গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। অসামরিক উড়ান পরিবহন মন্ত্রকের তরফে দেশের সমস্ত বিমানবন্দরগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। যাত্রীদের উড়ানের ৩ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে পৌঁছতে বলা হয়েছে। দেড় ঘণ্টা আগেই গেট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে জানা গিয়েছে, আজ কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের সুরক্ষা নিয়ে ডিসি ব্যুরো অফ সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটি ভিডিয়ো কনফারেন্স করবে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (CISF) কর্মীদের সমস্ত ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। যারা আগে ছুটিতে গিয়েছিলেন, তাদেরকেও কল ব্যাক করানো হয়েছে। অবিলম্বে ডিউটিতে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
নিরাপত্তা বাড়ল দিল্লিতেও
কলকাতার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে দিল্লিতেও। গতকাল ইন্ডিয়া গেটের সামনে থেকে সবাইকে চলে যাওয়ার জন্য পুলিশ মাইকিং করে। এলাকাটি ঘিরে ফেলে সেনা। পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়ানো হল লালকেল্লা, কুতুব মিনারেরও। এছাড়াও বিভিন্ন মল, বাজার, হোটেল, জনবহুল এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। মেট্রো স্টেশন এবং বিমানবন্দরেও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডও বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে আধা সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সব জোনের স্পেশাল কমিশনাররা ১৫টি জেলার ডেপুটি কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাইরে থেকে দিল্লিতে আসা গাড়িগুলিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দিল্লি শহরের সীমান্তবর্তী জায়গাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নয়াদিল্লি জেলার এক অফিসার বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। পূর্ব দিল্লি জেলার এক আধিকারিক জানান, আপদকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে বৈঠক হয়েছে। একইসঙ্গে দিল্লি সরকারের পরিষেবা দফতর একটি নোটিশ দিয়ে সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে। জানিয়ে দিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও কর্মী ছুটিতে যেতে পারবেন না।
অমৃতসরেও জারি সতর্কতা
অমৃতসরে সকাল থেকেই যুদ্ধের সতর্কতা সাইরেন বাজছে। যেকোনও মুহূর্তে পাকিস্তান হামলা করতে পারে। সেই সতর্কতাই জারি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অমৃতসরের ডিপিআরও বলেন, সকল নাগরিকদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। জানালা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে এবং পর্দা দিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। ঘরের লাইটও নিভিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি অমৃতসর প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাইরেন বাজবে, বিষয়টি স্পষ্ট হলে আপনাদের বার্তা দেওয়া হবে। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আপনারা বাড়িতে থেকে ওদের সাহায্য করুন। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার পাশাপাশি পাঞ্জাবেও হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। এর জেরে পাঞ্জাবেও চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়। সেই রাজ্যের সব স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী তিন দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি সব পুলিশ কর্মীদের ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।