নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁও হামলার জবাব অপারেশন সিঁদুর। এই অভিযানের তিনদিন বাদে এ প্রসঙ্গে নীরবতা ভাঙলেন রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের প্রধান মোহন ভগবত ও সাধারন সম্পাদক দত্তাত্রেয় হোসেবালে। শুক্রবার এক্স হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি দিয়ে জন্যেই ভারতীয় সেনার প্রশংসা করে জানিয়েছেন, অপারেশন সিঁদুর অনিবার্য ও প্রয়োজনীয় ছিল। সেনার অভিযান ভারতের আত্মমর্যাদা ও ভারতীয়দের মনোবল অনেকটা বাড়িয়েছে।
ভারতীয় সেনার পাশে মোহন ভগবত
এদিন এক্স বার্তায় তাঁরা লেখেন, ”পহেলগাঁও-এ নিরস্ত্র পর্যটকদের উপর কাপুরুষোচিত হামলার পর পাক-সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে “অপারেশন সিন্দুর” নামে যে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে অভিনন্দন জানাই। “অপারেশন সিন্দুর”-এর পর হিন্দু পর্যটকদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবার এবং সমগ্র দেশের আত্মমর্যাদা ও মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সম্পূর্ণরূপে একমত যে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী, তাদের অবকাঠামো এবং সহায়তা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া দেশের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় এবং অনিবার্য। জাতীয় সঙ্কটের এই সময়ে, সমগ্র দেশ, সরকার এবং সশস্ত্র বাহিনী এক জোট হয়ে রয়েছে।”
একইসঙ্গে তারা জানান, ভারতের সীমান্তে ধর্মীয় স্থান এবং বেসামরিক বসতি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বারা পরিচালিত হামলার আমরা নিন্দা জানাই এবং এই বর্বর, অমানবিক হামলায় নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।
এই পরিস্থিতিতে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সকল নাগরিককে সরকার এবং প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশাবলী সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার জন্য আবেদন করে। এর পাশাপাশি, আমাদের পবিত্র নাগরিক কর্তব্য পালনের সময়, আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে এবং জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য দেশবিরোধী শক্তির কোনও ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দিতে হবে না। সকল নাগরিককে তাদের দেশপ্রেম প্রদর্শন করতে এবং যেখানেই এবং যেভাবেই প্রয়োজন সেনাবাহিনী ও নাগরিক প্রশাসনের সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকতে এবং জাতীয় ঐক্য ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সকল প্রচেষ্টা জোরদার করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
আগে কী ঘটেছিল?
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে পর্যটকদের উপর হামলা চালিয়ে ২৬ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। বেছে বেছে নিরীহ হিন্দু পর্যটকদের উপর হামলা চালানো হয়। ঘটনার পরেই হামলাকারী ও ষড়যন্ত্রীরা ছাড়া পাবে না বলে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে পহেলগাঁওয়ে হিন্দু স্ত্রীদের সামনে খুন করা হয়েছিল স্বামীদের। বিনা কারণে সিঁথির সিঁদুর হারিয়েছিলেন তারা। তাই ভারতীয় মা বোনেদের সিঁদুর মুছে দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে ও নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই অভিযান -‘অপারেশন সিঁদুর’। প্রধানমন্ত্রীর সে বার্তা অনুযায়ী বুধবার মধ্যরাতের পর পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে ভারতীয় সেনা। জঙ্গিঘাঁটিগুলি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। জানা গিয়েছে, ভারতীয় সেনার অপারেশন সিঁদুরের ফলে কমপক্ষে ১০০ জঙ্গি নিকেশ হয়েছে।
পহেলগাঁওয়ের ঘটনায় আরএসএস
পহেলগাঁওয়ের এই ঘটনার পর আরএসএস এই হামলাকে জাতির ঐক্য এবং অখণ্ডতার উপর একটি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছিল। সে সময় হোসাবলে তাঁর এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার এই জঘন্য কাজ অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং হৃদয়বিদারক। আমরা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং এই হামলায় আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। এটি আমাদের জাতির ঐক্য এবং অখণ্ডতার উপর একটি আক্রমণ। সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনকে তাদের মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে এই সন্ত্রাসী কাজের নিন্দা করতে হবে।”
পাক ড্রোন হামলার চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ করে দেয় ভারতীয় সেনা
উল্লেখ্য, গতকাল সন্ধ্যেয় পাক ড্রোন হামলার চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ করে দেয় ভারতীয় সেনা। একটি ড্রোনকেও মাটি স্পর্শ করতে দেয়নি ভারতীয় সেনা। বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকেই ব্ল্যাকআউট করা হয় উত্তর ভারত ও উত্তর-পশ্চিমের বিভিন্ন শহরে। জম্মু সহ বিভিন্ন শহরে বাজতে থাকে সতর্কতামূলক সাইরেন। শুক্রবার সকালেই চরম উত্তেজনার পরিস্থিতি উত্তর-পশ্চিমে। চণ্ডীগড়ের মোহালিতে আকাশপথে আক্রমণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এয়ারফোর্স স্টেশন থেকে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মানুষকে সতর্ক করতে ক্রমাগত বাজানো হচ্ছে সাইরেন।