নিউজ ডেস্ক: ধর্মের নামে হত্যা। তারপর ধর্মস্থানে হামলা। সারা বিশ্বের কাছে স্বরূপ প্রকাশ পাচ্ছে পাকিস্তানের। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা পহেলগাঁওয়ে (Pahelgam Attack) নিরীহ পর্যটকদের হত্যা করেছিল। এবার ভারতের প্রত্যাঘাতে কুল কিনারা না পেয়ে যেদিকে খুশি গোলা বর্ষণ শুরু করেছে। কখনও তাদের নিশানায় জম্মুর শম্ভু মন্দির (Shambhu Temple ), কখনও বৈষ্ণোদেবী মন্দির (Vaishno Devi Temple) আবার কখনও অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির (Golden Temple)। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফেও পাকিস্তানের এ হেন ভূমিকার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে।
জম্মুর শম্ভু মন্দিরে হামলা
রাতভর গোলাগুলির পর ভোরবেলা জম্মুর শম্ভু মন্দির লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে পাক সেনা। মন্দিরের দরজার সামনে গোলা এসে পড়ে। স্থানীয় মানুষজনই একথা জানিয়েছেন। এলাকাবাসীর মতে, ভোর বেলা থেকেই মন্দির চত্বরে ভিড় হতে শুরু করে। সকাল সকাল পুজো দেওয়ার জন্য জমায়েত হন ভক্তরা। ভারত-পাক সংঘর্ষের মাঝে এদিন মন্দির চত্বরে তেমন ভিড় ছিল না। তাই বড় ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে। হতাহতের কোনও খবর নেই। মন্দিরেরও তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে সকাল সকাল মন্দির লক্ষ্য করে এমন গোলাবর্ষণ কীভাবে করল পাক সেনারা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে তাদের মতলব নিয়েও। ভক্তদের ওপর কেন হামলা চালানোর চেষ্টা সেই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকায়।
হামলার সত্যতা স্বীকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের
শম্ভু মন্দির লক্ষ্য করে পাকিস্তান যে গোলা ছুঁড়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের টুইটেও। মন্ত্রকের তরফে লেখা হয়েছে, “১০ মে ভোরে পাকিস্তান জম্মুর বিখ্যাত শম্ভু মন্দির এবং সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল। সেজন্য একাধিক ড্রোনও পাঠিয়েছিল। তবে আমাদের বাহিনী সবসময় সজাগ রয়েছে, তারা দেশকে রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর।” এই ঘটনায় দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক
হামলার খবরে আসরে প্রশাসন
মন্দিরে হামলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে যায় স্থানীয় পুলিশ। কিছুক্ষণ পর পৌঁছন প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা।পৌঁছে যায় জম্মুর বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। তারা সবকিছু ঘুরে দেখে। পরিস্থিতি বিচার করে সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে সবাইকেই সতর্ক থাকার আর্জি জানানো হয়েছে।
বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে ব্ল্যাক আউট
রাতে অন্ধকারে ঢাকা বৈষ্ণোদেবী মন্দির। জম্মুর কাটরার এই মন্দিরে বছর ভর ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। সারা দেশ থেকেই ভক্তরা পৌঁছে যান পুজো দিতে। কিন্তু ভারত পাক সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি বদলে গেছে সেখানে। পাকিস্তান যাতে এই মন্দিরে হামলা চালাতে না পারে, তার জন্য সতর্ক প্রশাসন। দু দেশের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে দর্শন। বৈষ্ণোদেবী মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভক্তদের সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পাহাড়ের ওপর এই মন্দির। তাই দর্শনার্থীদের সতর্ক করে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে মন্দিরের নিরাপত্তাও।
পুঞ্চের গুরুদ্বারে পাকিস্তানের হামলা
শম্বু মন্দিরে হামলার দুদিন আগেই জম্মুর পুঞ্চে একটি গুরুদ্বারে হামলা চালায় পাকিস্তান। ওপার থেকে গোলা এসে পড়ে গুরুদুয়ারা চত্বরে। এই হামলায় ১৬ জন মারা যায়। আহত হয় অনেকে। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি তাঁর প্রেস কনফারেন্সে জানান, শিখদের টার্গেট করতেই গুরুদুয়ারায় হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তানের এহেন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করা হয়েছে ভারতের তরফে।
আঘাত পুঞ্চের স্কুলে
মন্দির, গুরুদুয়ারার পাশাপাশি জম্মুর স্কুলেও হামলা চালায় পাক সেনা। ওপার থেকে ছুটে আসা পাক সেনার গোলা আছড়ে পড়ে পুঞ্চের একটি কনভেন্ট স্কুলে। সেখানে মারা যায় ২ জন ছাত্র। শেলের আঘাত থেকে বাঁচতে বাড়ির বাইরে আশ্রয় খুঁজতে গেলে মৃত্যু হয় এক মহিলারা। সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে পাকিস্তানের এই হামলা বর্বরোচিত বলে মনে করছে দিল্লি। বিদেশ সচিব জানিয়েছেন, পাকিস্তানের শেলের আঘাতে অন্য একটি কনভেন্ট স্কুলের জলের ট্যাঙ্ক, সোলার প্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই কনভেন্টের আন্ডারগ্রাউন্ড হলে সন্ন্যাসিনী, কর্মচারীদের পাসাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন। স্কুল বন্ধ না থাকলে আরও বড় ক্ষয়ক্ষতি হতে পারতো।
পাক নিশানায় স্বর্ণমন্দির
লাহোরে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বস্ত করে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। তার জবাবে এলোপাথাড়ি ড্রোন হামলা ও মিসাইল হানা চালু করে পাকিস্তান। সীমান্ত বরাবর এই হামলা চালায় তারা। তাদের টার্গেটে ছিল অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরও। তবে সেসব হামলা ব্যর্থ করে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। মাঝ আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে পাক মিসাইল। ধবংস হয়েছে পাক ড্রোনও।
বিদেশ সচিবের বক্তব্য
ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্যের ধর্মস্থানগুলিকে যেভাবে নিশানা করা হচ্ছে, তার মধ্যে সুপরিকল্পিত প্ল্যান আছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি বলেন, পাকিস্তান যেভাবে আমাদের দেশের ধর্মস্থানগুলিকে টার্গেট করে শেল চার্জ করছে, তার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট ডিজাইন আছে। গুরুদ্বার, কনভেন্ট স্কুল, মন্দির কোনও কিছুই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। ওদের এতটাই অধঃপতন হয়েছে।
গুরুদ্বারে হামলা প্রসঙ্গে মিস্রি বলেন, পাকিস্তান ওই হামলার দায় তো স্বীকার করেইনি, উল্টে অবাস্তব দাবি করছে। বলছে, ভারতীয় বায়ুসেনাই অমৃতসরের মতো বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। এটা আসলে গোটা বিশ্বকে ভাঁওতা দেওয়ার একটা ছক মাত্র। এটা সফল হতে দেবে না ভারত।
হেলিকপ্টারে চারধাম যাতায়াত বন্ধ
হেলিকপ্টারে করে চারধাম যাত্রা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এর আগে কেদারনাথে হেলিকপ্টার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে চারধামেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানি হামলায় যাতে সেখানকার কোনও ক্ষতি না হয়, তার জন্যই এই উদ্যোগ।
শুনশান শ্রীনগরের শঙ্করাচার্য মন্দির
কিছুদিন আগেও ভক্তদের ভিড়ে সরগরম ছিল শ্রীনগরের শঙ্করাচার্য মন্দির। শহরের সবচেয়ে ওপরে এই মন্দির। পাহাড়ের ওপর সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় ভক্তদের। ওপর থেকে দেখা যায় পুরো শ্রীনগর শহর। দেখা যায় নীচের প্রান্তের ডাল লেক। ঝিলাম নদী কীভাবে পুরো শহরটাকে সাপের মতো কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাও স্পষ্ট হয় ওপর থেকে। কিন্তু পাকিস্তানের হামলার পর থেকে শুনশান গোটা চত্বর। সারারাত যেখানে আলো জ্বলে, পুরো শ্রীনগর থেকে দেখা যায় এই মন্দিরের চুড়ো, আর একদিকে দেখা যায় সেনা আবাস, সেখানে পুরোটাই অন্ধকারে ঢাকা। রাত নামলে কোথাও কোনও আলোর চিহ্ন নেই। গভীর আঁধারে ডুবে থেকেই তারার মতো ওপর থেকে শ্যেন দৃষ্টি রেখে যাচ্ছেন আদি শঙ্করাচার্য, এমনটাই বিশ্বাস জম্মু কাশ্মীর বাসীর।
ডোডা জেলার মন্দিরে ভক্ত সমাগম
ডোডা ডেলার শিব-বাণী মন্দির। ঘন জঙ্গলের মধ্যে ৭,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। ভাদেরওয়াহ শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই মন্দিরে ভক্তরা জড়ো হয়েছিলেন অক্ষয় তৃতীয়া থেকে। চলছিল উৎসব। এই শিব – বাণী উৎসব উপলক্ষে সেখানে জড়ো হয়েছিল প্রচুর ভক্ত। বিশ্বাস হারাচ্ছিল সন্ত্রাসের ছবি। এই বিশ্বাসে ভর করেই লড়ছে ভারতও। সত্যের জয়ের লক্ষ্যেই জারি রয়েছে অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) । পাকিস্তানের যাবতীয় অপচেষ্টার জবাব দিতে সদা জাগ্রত রয়েছে ভারতীয় সেনা বাহিনী।