নিউজ ডেস্ক: ভারতের এয়ার স্ট্রাইকে গত ৭ মে, পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিকেশ হয়েছিল বেশ কয়েকজন জঙ্গি। এবার তাদের পরিচয় প্রকাশ্যে এসেছে। শনিবার সকালেই ভারত-পাক সংঘাত ঘিরে ইসলামাবাদের পর পর মিথ্যাচারের পর্দাফাঁস করেছে দিল্লি। বেলা গড়াতেই ৭ মে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’এ নিহত ৫ কুখ্যাত জঙ্গির নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনল ভারত। সেদিন পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারত। সেই তালিকায় জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা, হিজবুল মুজাহিদিনের একাধিক ঘাঁটি ছিল।
এয়ার স্ট্রাইকে নিহত কোন কোন জঙ্গি ?
অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানে খতম হয়েছে ৫ কুখ্যাত জেহাদি। তারা হলেন-
মুদাসসর খাদিয়ান খাস ওরফে মুদাসসর ওরফে আবু জুন্দাল – লস্কর-ই-তৈবার সদস্য। পাকিস্তানের মুরিদকে-তে গুঁড়িয়ে যাওয়া লস্করের ঘাঁটি মারকজ তৈবার ইন-চার্জ ছিল এই মুদাসসর।
হাফিজ মহম্মদ জামিল – জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য। মৌলানা মাসুদ আজহারের নিকট আত্মীয় এই হাফিজ। বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মহম্মদের যে হেডকোয়ার্টার ভারত অপারেশন সিঁদুর- এ গুঁড়িয়ে দিয়েছিল, সেই মারকজ সুভান আল্লাহ্- র ইন-চার্জ ছিল সে। তরুণদের উগ্র-মতবাদে উদ্বুদ্ধ করা এবং জইশ-ই-মহম্মদের জন্য টাকা জোগাড়ে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিল হাফিজ মহম্মদ জামিল।
মহম্মদ ইউসুফ আজহার ওরফে উস্তাদ জি ওরফে মহম্মদ সেলিম ওরফে ঘোসি সাহাব – জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য। মৌলানা মাসুদ আজহারের আত্মীয় এই জঙ্গিও। জইশের হয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত এই ব্যক্তি। জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গি হামলার যুক্ত ছিল এই মহম্মদ ইউসুফ আজহার। আইসি-৮১৪, কান্দাহার বিমান অপহরণের ঘটনাতেও মোস্ট ওয়ান্টেড ছিল মহম্মদ ইউসুফ আজহার ওরফে উস্তাদ জি।
মহম্মদ হাসান খান – জইশ-ই-মহম্মদের সদস্য এই জঙ্গি। এই হাসান খান জইশ-ই-মহম্মদের অপারেশনাল কমান্ডার (পাক অধিকৃত কাশ্মীরের) মুফতি আসগর খান কাশ্মীরি- র ছেলে। জম্মু ও কাশ্মীরের বিভিন্ন জঙ্গি হামলার পিছনে অন্যতম মাথা ছিল এই হাসান খান।
খালিদ ওরফে আবু আকাশা – লস্কর-ই-তৈবার সদস্য। জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গি হামলায় যুক্ত ছিল এই খালিদ। আফগানিস্থান থেকে অস্ত্র পাচারেও জড়িয়েছিল এর নাম।
প্রসঙ্গত, ৬ এবং ৭ মে-র মাঝে গভীর রাতে ২৫ মিনিটের অপারেশনে তছনছ হয়ে যায় পাকিস্তানের বহু জায়গা। উল্লেখ্য, পহেলগাঁওতে পাকিস্তানের মদতে ইসলামি জঙ্গিরা ধর্ম জিজ্ঞেস করে মেরেছিল পর্যটকদের। সেই জঙ্গি হামলায় মুছে গিয়েছে অনেকের সিঁদুর। এর ‘বদলা’ নিতে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত।
উল্লেখ্য, অপরেশন সিঁদুরের পর থেকে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার রাতেই জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, পঞ্জাবের একাধিক জায়গায় লাগাতার ড্রোন-মিসাইল দিয়ে হামলা চালিয়েছে। যদিও ভারত প্রতিটি হামলাই আটকে দিয়েছে। এরপরেও লাগাতার আক্রমণ করে গিয়েছে পাকিস্তান। এই আবহে এবার পাকিস্তানকে চরম বার্তা দিয়েছে ভারত। যেকোনও সন্ত্রাসবাদী হামলাকেই এবার যুদ্ধের আবাহন বলে গণ্য করবে ভারত। সেই মতোই জবাব দেওয়া হবে। ইসলামাবাদকে এই কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, ভারত স্পষ্টভাবে “অ্যাক্ট অব ওয়ার” শব্দটি ব্যবহার করেছে। সশস্ত্র হামলা বা শক্তির ব্যবহার যা দেশের সার্বভৌমত্ব বা সীমান্তের অখণ্ডতাকে বিপন্ন করে কিংবা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে, সেক্ষেত্রে এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়।
তবে এতকিছুর পর আজ পাকিস্তান সুর নরম করে বলেছে যে তারা যুদ্ধ চায় না, শান্তি চায়। ভারত প্রত্যাঘাত থামালে, তারাও থেমে যাবে। ভারত প্রথম থেকেই সংযত রয়েছে। পাকিস্তানই বারেবারে আঘাত হানছে। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর ভারত সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করেছে। সেই সময় থেকেই পাকিস্তান ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’ শব্দটি ব্যবহার করেছে। এবার ভারতও একই শব্দবন্ধ দিয়ে পাকিস্তানকে চরম হুঁশিয়ারি দিল।