নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানের সংঘর্ষ-বিরতির আর্জিতে সাড়া দিল ভারত। শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে জারি হল সিস ফায়ার। অর্থাৎ, স্থলে-জলে বা আকাশ থেকে যে আঘাত-প্রত্যাঘাত চলছিল তা বন্ধ থাকবে। সোমবার দুপুরে ফের বৈঠকে বসবে দুদেশের ডিজিএমও।
কীভাবে হল যুদ্ধবিরতি?
এদিন পাকিস্তানের ডিজিএমও ফোন করেন ভারতের ডিজিএমও-কে। জানান, যুদ্ধবিরতি চায় পাকিস্তান। ইসলামাবাদের কাতর আর্জিতে এরপর সাড়া দেয় দিল্লি। বিকেল পাঁচটা থেকে সব ধরনের আঘাত-প্রত্যাঘাত বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তবে এই যুদ্ধবিরতি শর্তসাপেক্ষ। ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভারতে এরপর যদি কোনও সন্ত্রাস হামলা হয়, তাহলে সেটা যুদ্ধ বলে ধরে নেবে ভারত। সেভাবেই তার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। একথা ভারতের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক হয়, সোমবার দু দেশের DGMO আলোচনা করবেন। তারপর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
DGMO বলতে কী বোঝায়?
DGMO অর্থাৎ ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস। দু দেশেরই মিলিটারি অপারেশনের জন্য ডিজিএমও থাকে। তাঁরাই সব পক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলেন। স্থল সেনা, বিমান বাহিনী ও নৌ-সেনা – প্রত্যেক বাহিনীর ওপরে থাকেন এই ডিজিএমও। দুদেশের এই ডিজিএমও-র সঙ্গেই বৈঠক হয় শনিবার দুপুর ৩টে ৩৫ মিনিটে।
ট্রাম্পের টুইট
দুদেশের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনার পরই প্রথম টুইট করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি লেখেন, সারা রাত ধরে আলোচনা ও মধ্যস্থতা করেছে আমেরিকা। এই ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি যে ভারত আর পাকিস্তান পুরোপুরি সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়েছে। দু দেশকেই ধন্যবাদ।
বিদেশ সচিবের ব্রিফিং
সন্ধে ৬টার সময় ঠিক ২ মিনিটের প্রেস ব্রিফিং দেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। তিনি জানান, দু দেশ সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হয়েছে। বিকেল ৩টে ৩৫ মিনিটে ভারত ও পাকিস্তানের ডিজিএমও এব্যাপারে আলোচনা করেছেন। ১২ মে দুপুরে তাঁরা আবার বৈঠক করবেন। ছোট্ট বিবৃতি দিয়েই তিনি তাঁর বক্তব্য সেরে ফেলেন।
তিন সেনার বক্তব্য
সন্ধে সাড়ে ৬টার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিন সেনাবাহিনীর মুখপাত্ররা। তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে। পাকিস্তান যেভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, তা তুলে ধরা হয় ওই বৈঠকে। পাকিস্তানের যে কোনও ধরনের মিস অ্যাডভেঞ্চারের জবাব কড়ায় গণ্ডায় দেওয়া হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়।
কেমন ভুয়ো তথ্য?
এই কদিন ধরে একের পর এক ভুয়ো তথ্য সামনে এনেছে পাকিস্তান। এতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যেমন বিভ্রান্ত হয়েছে, তেমনি বিভ্রান্ত হয়েছে আমজনতা। প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর তরফ থেকে খতিয়ে দেখে বারেবারে তা খণ্ডন করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, সেগুলি ফেক।
যেমন খবর প্রকাশ হয়, দিল্লি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। কিন্তু ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি ভুয়ো। একথা জানিয়েছে পিআইবি।
বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ক্ষমা চাইছেন বলে সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে। এটা এআই দিয়ে বানানো। পুরোটাই ফেক। জানাল পিআইবি ফ্যাক্ট চেক
নানখানা সাহিব গুরুদ্বারেতে ভারত হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। এটা ভুয়ো তথ্য বলে জানিয়েছে দিল্লি।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের এস-৪০০ সিস্টেম নষ্ট করেছে। এধরনের কোনও সুদর্শন চক্রই ধ্বংস হয়নি। এদিন সাংবাদিকদের সেকথা জানান কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার রঘু নায়ার জানান, দু দেশ সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হয়েছে। তবে পাকিস্তান কোনও মিস অ্যাডভেঞ্চার করলে উপযুক্ত জবাব দেবে ভারত। এদিন ভারত পাক উত্তেজনা প্রশমনে পাক সেনা প্রধানকে ফোন করেন মার্কিন বিদেশ সচিব রুবিও। গত দূদিন ধরেই যেভাবে ভেঙে পড়েছে পাকিস্তানের এয়ার সিস্টেম, তাতে এই উদ্যোগকে আশার ঝিলিক হিসেবে দেখেন পাক সেনা প্রধান। ভারতের হাত থেকে কীভাবে বাঁচা যায়, সেই পথ খোঁজার চেষ্টা শুরু করে তারা। সরাসরি ভারতের ডিজিএমও-কেই ফোন করে বসেন তাঁরা। ভারতও সেই প্রার্থনায় সাড়া দেয়। তবে শর্ত দিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কোনও জঙ্গি হামলা হলেই তার ফল ভুগতে হবে পাকিস্তানকে।
কেন মিথ্যে ছড়াচ্ছিল পাকিস্তান?
এটা পুরোপুরি একটা চক্রান্ত। আসল সংঘর্ষে টিকে উঠতে না পেরে ডিজিটাস সন্ত্রাস ছড়ানো। উদ্দেশ্য, ভারতীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো। বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার। এই অপপ্রচার রুখতে আসরে নাম পিআইবি। তারা বলে, কোনও ভিডিয়ো বা ছবি যাচাই করার জন্য হোয়াট্সঅ্যাপ করুন ৮৭৯৯৭১১৫৯ এই নম্বরে। এ ছাড়া Socialmedia@pib.gov.in-এ ইমেল করা যাবে। গত ৮ মে রাত ১০টা থেকে ৯ মে ২০২৫ সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে পিআইবি ফ্যাক্ট চেক করে ৭টি ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেছে। তাদের মধ্যে একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সমাজমাধ্যমে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, জলন্ধরে পাকিস্তানের ড্রোন অ্যাটাক হয়েছে। কিন্তু চেক করে দেখা যায় সেটি নিছক একটি ‘ফার্ম ফায়ার’ ভিডিয়ো।’’ আর একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। যেখানে দাবি করা হয়, পাকিস্তানি সেনারা ভারতের একটি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে। পিআইবি এই ভিডিয়োটিকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভুয়ো বলে জানিয়েছে। বস্তুত, ভারতীয় সেনায় ‘২০ রাজ ব্যাটেলিয়ন’ নামে কোনও ঘাঁটি বা ইউনিট নেই। ওই ভিডিয়োটি ভারতীয়দের আতঙ্কিত করার জন্য প্রচার করা হয় বলে জানিয়েছে পিআইবি। আর একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়, তাতে দাবি করা হচ্ছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতের উপরে প্রতিশোধ নিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে। পিআইবি এই ভিডিয়োটিকেও ভুয়ো বলে চিহ্নিত করেছে। জানানো হয়েছে, যে ভিডিয়োটি ছড়িয়ে পড়েছে তা আসলে বেইরুট, লেবাননে ২০২০ সালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফুটেজ।
ফলে এভাবেই হাইটেক সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। তবে সবদিক থেকেই জবাব পেয়েছে তারা। আর এই শিক্ষা নিয়েই নতজানু হয়েছে ভারতের কাছে। যে শিক্ষা তারা পেয়েছে, তা দশকের পর দশক তারা মনে রেখে দেবে। মনে রেখে দেবে নতুন ভারত ও তার সেনাবাহিনীর দৃঢ়তা, শৌর্যতা।