নিউজ ডেস্ক: স্বভাব যায় না ম’লে! নিজের আসল রূপটা আবার দেখিয়ে দিল পাকিস্তান। গতকাল বিকাল পাঁচটায় সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই ফের হামলা পাকিস্তানের। রাত ৮.১৫ থেকে জম্মুতে ফের পাকিস্তানের হামলা। পরপর গুলি বর্ষণ। আকাশে দেখা গিয়েছে পাকিস্তানি ড্রোনও। গুলির আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে জম্মুর আখনুর সেক্টরেও। সূত্রের খবর, নিয়ন্ত্রণরেখা লক্ষ্য করে ফের গুলি চালাচ্ছে পাক সেনা। জম্মুকে নিশানা করে চলছে গুলি। ব্ল্যাকআউট করা হয়েছে গোটা জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাবের একাধিক এলাকায়।
হামলার পাল্টা জবাব ভারতীয় সেনার
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। কিন্তু সওয়া আটটা থেকে ফের গুলিবর্ষণ শুরু করে পাক সেনা। জানা গিয়েছে, এই একই অবস্থা রাজস্থানেও। সন্ধে ঘনাতেই ব্ল্যাকআউট করে দেওয়া হয় জয়সলমীর, পাঠানকোটের একাধিক এলাকায়। বাজানো হয় সাইরেন। আকাশে দেখা মেলে পাক ড্রোনের। সীমান্তে চলে গুলি। তবে এবারেও জবাব দিতে ছাড়ে না ভারতীয় সেনা। ঠিক যেখানে হামলার চেষ্টা চালায় পাকিস্তান, সেখানেই তাদের পাল্টা জবাব দেয় ভারতীয় সেনা।
কোন কোন শহরে ব্ল্যাকআউট:
রাজস্থানের জয়সলমির, বারমের।
পাঞ্জাবের মোগা, ফিরোজপুর, বার্নালা, হোশিয়ারপুর, ফাজ়িলকা, পাঠানকোটস পাতিয়ালা, মুক্তসার।
গুজরাটের কচ্ছ, ভুজ।
জম্মু শহরে পুরোপুরি ব্ল্যাকআউট, আর এস পুরা, রিয়াসি, কাটরা, শ্রীনগর, উধমপুর, কাঠুয়া, নাগরোটা, রাজৌরি।
জম্মু-কাশ্মীরের মোট ১১টি সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন পাকিস্তানের
জম্মু-কাশ্মীরের মোট ১১টি সীমান্ত এলাকায় পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করেছে বলেই জানা গিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, গত তিন ঘণ্টায় মোট উধমপুর, আখনুর, নওশেরা, পুঞ্চ, রাজৌরি-সহ একাধিক এলাকায় গুলিবর্ষণ করেছে পাকিস্তানি সেনা। আকাশ সীমানা পেরিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে ড্রোন। শ্রীনগরে পাওয়া গিয়েছে বিস্ফোরণের শব্দও।
হেল্পলাইন নম্বর
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ আবহে প্রশাসনের তরফে সিভিল কন্ট্রোল রুম ও পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নম্বর দেওয়া হয়েছে। বিপদে এই নম্বরগুলিতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
Civil control room – 01832226262, 7973867446
Police control room – City 9781130666
Rural 9780003387
জরুরি বৈঠকে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইবি প্রধান
পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করতেই জরুরি বৈঠকে বসলেন স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইবি প্রধান। বৈঠকে ছিলেন সব রাজ্যের মুখ্যসচিবরাও। কেন্দ্রের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে প্রস্তুত রাখতে হবে। যে কোনও পরিস্থিতিতে তাদের কাজে লাগানো হতে পারে।
সকাল থেকে কেমন আছে জম্মু, পুঞ্চ, রাজৌরি?
তবে, সাতসকালে উপত্যকার বিভিন্ন জায়গায় স্বাভাবিকতার চিত্র সামনে আসছে। যে জায়গাগুলিতে গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্তানের ড্রোন, মিসাইল, শেল দেখা গেছে, এদিন সকালে সেইসব এলাকার ভিন্ন ছবি ধরা পড়েছে এখনও পর্যন্ত। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রের খবর, রাতভর ড্রোন, গোলাগুলি বা শেল নিক্ষেপ আর হয়নি জম্মু শহর, আখনুর, রাজৌরি ও পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে।
প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় বিদেশ সচিব বিক্রম মিসরি জানিয়ে দেন, দুপুর ৩টে ৩৫ নাগাদ সংঘর্ষবিরতি নিয়ে আলোচনা হয়। এই বিষয়ে পাকিস্তান ফোনে যোগাযোগ করে। এরপর ভারতীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিক্ষেপ বন্ধ করেছে। আগামী ১২ মে ফের সামরিক প্রধানরা বৈঠক করবেন। ওইদিনই পরবর্তী পদক্ষেপ জানা যাবে। কিন্তু এই ঘোষণার মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যেই ফের নিয়ন্ত্রণরেখা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ পাক সেনার।
পাক হামলা রুখতে গিয়ে শহিদ জওয়ান
সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে সীমান্তে হামলা চালিয়েছে পাক সেনা। আর সীমান্তে সেই পাক ড্রোন হামলা রুখতে গিয়েই শহিদ হলেন বিএসএফের সাব-ইন্সপেক্টর মহম্মদ ইমতিয়াজ। জম্মু সীমান্তের আরএস পুরা সেক্টরে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে প্রাণ হারান তিনি। ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে এই দুঃসংবাদ জানিয়েছে বিএসএফ, জম্মু।
ভারতীয় সেনাকে কঠোর জবাব দেওয়ার নির্দেশ মোদী সরকারের
শনিবার রাত ১১ টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠকে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি জানিয়েছেন, গত কয়েক ঘণ্টায় একাধিকবার সংঘর্ষবিরক্তি চুক্তির লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। তবে চুপ করে বসে নেই ভারতীয় সুরক্ষা বাহিনী। দেওয়া হচ্ছে যোগ্য জবাবও। পুরো পরিস্থিতির উপরে তীক্ষ্ণ নজর রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে নিয়ন্ত্রণরেখা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর সেনা-সহ ভারতীয় সুরক্ষা বাহিনীকে কঠোর জবাব দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিদেশ সচিব।
সংঘর্ষবিরতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কেন এভাবে হামলা করল পাক সেনা?
বিশ্লেষকদের মতে, এর নেপথ্যে তিনটি কারণ থাকতে পারে-
প্রথমত, পাকিস্তান সেনার শীর্ষ দপ্তর থেকে সীমান্তে মোতায়েন থাকা সেনার কাছে সঠিক নির্দেশিকা জারি করা হয়নি। তাই গত কয়েকদিনের মতো শনিবারও অন্ধকার নামতেই গুলি চালিয়েছে পাক সেনা।
দ্বিতীয়ত, পাক সেনার একাংশ চায় যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে, সম্ভবত নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে। সেই অংশের নির্দেশেই শনিবার সীমান্তে গুলি চালিয়েছে পাক সেনা।
তৃতীয়ত, পাক সরকারের নির্দেশ মানতে নারাজ সেনা। তাই সংঘর্ষ বিরতি উড়িয়ে দিয়ে ভারতের উপরে হামলা করছে তারা।
পাকিস্তানকে ‘দায়িত্বশীল’ আচরণের বার্তা বিদেশ সচিবের
সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে সীমান্তে হামলার পরেই এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশসচিব বিক্রম মিসরি জানায়, ”ডিজিএমও স্তরে হওয়া সংঘর্ষবিরতি চুক্তি ভেঙে কয়েকঘণ্টার মধ্যেই ভারতে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। এটা বিশ্বাসভঙ্গ ও চুক্তিভঙ্গ। সেনা পরিস্থিতির দিকে সর্বদা নজর রাখছে। এর জবাব দিতে হবে।” তাঁর আরও বার্তা, পরিস্থিতি বুঝে পাকিস্তান দায়িত্বশীল আচরণ করুক।
পাক হামলার মধ্যেই ডোভালকে ফোন করে বার্তা পাকিস্তানের ‘বন্ধু’ চিনের
অন্যদিকে, এহেন পরিস্থিতিতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করে চিনের মত, ভারত এবং পাকিস্তান যেন শান্তি বজায় রাখে।
পাকিস্তানের এহেন হামলায় ক্ষুব্ধ ভারত
যুদ্ধবিরতি থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানের এহেন হামলায় ক্ষুব্ধ ভারত। শত্রুদের পালটা দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। এহেন পরিস্থিতিতে ফোনে ডোভালের সঙ্গে কথা বলেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। সেখানে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সাফ জানিয়ে দেন, পহেলগাঁও হামলায় যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে ভারতের। তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা জরুরি ছিল। তবে ভারত মোটেই যুদ্ধ চায় না। বরং আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনাই কাম্য।
পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি বিদেশমন্ত্রীর
প্রসঙ্গত এদিন সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের আগেই ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি হলেও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই থামাবে না ভারত। সেই কাজ আগের মতোই চলবে। এই বিষয়ে সমাজমাধ্যমে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর লিখেছিলেন, “আজ ভারত ও পাকিস্তান অস্ত্রবিরতি এবং সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে একটি সমঝোতায় স্বাক্ষর করেছে।” এরপরই তিনি যোগ করেন, “ভারত ধারাবাহিকভাবে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় এবং আপোষহীন অবস্থান বজায় রেখেছে। ভবিষ্যতেও তার অন্যথা হবে না।” অন্যদিকে, ভারতও জানিয়েছিল এরপর থেকে দেশের মাটিতে কোনও জঙ্গি হামলাকে, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা হিসাবে ধরা হবে। আর এর মধ্যেই ফের পাকিস্তানের এই হামলার খবর পরিস্থিতি বদলাতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতির বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিকেল ৫টা ৪২ নাগাদ এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “গোটা রাত দীর্ঘ আলোচনার পর দুই দেশই এই মুহূর্ত থেকে সম্পূর্ণরূপে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। সঠিক সময়ে বাস্তবজ্ঞান কাজে লাগানোয় দুপক্ষকে শুভেচ্ছা।” আর এর ঠিক তিন ঘন্টা বাদেই নিজের আসল রূপ দেখাল পাকিস্তান। উল্লেখ্য, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ ভারতীয়র মৃত্যুর পর যাবতীয় সংঘর্ষের সূত্রপাত।