নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে এবার নিষিদ্ধ হল শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। শনিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামি লিগ এবং দলের নেতাদের বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। তাদের যাবতীয় কার্যকলাপও নিষিদ্ধ থাকবে বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। যাতে ট্রাইব্যুনাল কোনও রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।
এতদিন ধরে আওয়ামী লিগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে কর্মসূচি পালন করে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এর পেছনে রয়েছে মৌলবাদী ও জিহাদি শক্তিও। এমন পরিস্থিতিতে রাতে জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। সেখানেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবারও শাহবাগ ব্লকেড করা হয়। বিক্ষোভে উত্তাল ছিল শাহবাগ। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা সহ তিন দফা দাবিতে বিকেল ৩টার পর শাহবাগ মোড়ে এই গণজমায়েত কর্মসূচি শুরু হয়। পরে এক ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা করা হয়।
কী জানিয়েছে ইউনূস সরকার?
ইউনূস সরকার জানিয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামি লিগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী কাজের দিনে এ নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশ মেনেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামি লিগকে। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হয়েছে।
শনিবার রাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাত সাড়ে আটটা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত এই বিশেষ সভা হয়। পরে যমুনার সামনে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সভার সিদ্ধান্ত জানান আইন বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনও বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। তিনি বলেন, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।
হাসিনার ফেরার রাস্তা বন্ধ করতেই কি আইন সংশোধনে অনুমোদন?
বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার পর, এই মুহূর্তে ভারতের আশ্রয়েই রয়েছেন হাসিনা। তাঁকে ফেরত পেতে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণের আর্জিও জানিয়েছে ইউনূস সরকার। তবে হাসিনার উপস্থিতিতেও নতুন করে বাংলাদেশে সক্রিয় হয়ে উঠতে উদ্যোগী হয় আওয়ামি লিগ। হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কথাও জানায় তারা। আর সেই আবহেই হাসিনার দলকে নিষিদ্ধ করল ইউনূস সরকার। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংশোধন ঘটানোর নেপথ্যেও আসলে হাসিনাকে জব্দ করার অভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন ও দেশ ত্যাগ করতে কার্যত বাধ্য হন। এরপর ৮ আগস্ট মহম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীসরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন।
আওয়ামী লীগ কীভাবে শুরু হয়েছিল? এর ইতিহাস কী?
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাগণ দলের আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে ২৩ জুন তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন। ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মতান্ত্রিক পথে সংগ্রাম করে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে ‘আওয়ামী লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘বাংলাদেশ’ গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে নামগুলো পরস্পর সমার্থক হয়েছে।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। হত্যা, নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ ও জননিরাপত্তা বিঘ্নসহ নানা অপরাধের দায়ে এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাবির মুখে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে আওয়ামী লীগের বহু নেতা জেলবন্দী অথবা আত্মগোপন করে রয়েছেন।