নিউজ ডেস্ক: ভারত-পাক সংঘর্ষ বিরতির নেপথ্য কাহিনী জানেন? পহেলগাঁও হামলার জেরে ৪ দিন ভারত-পাক সংঘর্ষের পর আচমকা কেন সংঘর্ষ বিরতি? এই চার দিনে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তছনছ হয়ে গেছে পাকিস্তানের বিমান কেন্দ্রের রাডার সিস্টেম। গুঁড়িয়ে গেছে একের পর এক জঙ্গি শিবির। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ৫টি জঙ্গি ঘাঁটি। যোগ্য জবাব দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে। তারা লাগাতা ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। কিন্তু ভারতের সুদর্শন চক্রের জালে তা ফেঁসে গেছে। শুধমাত্র জম্মু কাশ্মীরের সীমান্ত লাগোয়া কয়েকটি গ্রামের ক্ষতি হয়ে গেছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।এই পরিস্থিতিতেই শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করে দু দেশ। কিন্তু সন্ধে হতেই অবাক করা কাণ্ড। সীমান্ত লাগোয়া বহু জায়গায় ড্রোন হামলা চালাতে থাকে পাকিস্তান। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ভারতের বিদেশ সচিব জানান, সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। ভারত এর কড়া জবাব দেবে। ভারতীয় সেনা এর জন্য তৈরি আছে। তবে রাত দশটার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। রাত ১২টার পর পাক প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সংঘর্ষ বিরতির কথা জানান। এর জন্য আমেরিকা, চিন, তুরস্ক সহ কয়েকটি দেশকে ধন্যবাদ জানান।
দু দেশের সংঘর্ষ থামল কোন পথে?
সরকারি সূত্র মারফৎ এনডি টিভি জানাচ্ছে, শনিবার অর্থাৎ ১০মে ভোরের দিকে পাকিস্তানের এয়ার ফোর্স বেসের দিকে তাক করে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এতে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাওয়ালপিন্ডির মূল ঘাঁটি চাকলালা ও পাঞ্জাব প্রদেশের সারগোধা। পাক সেনার কাছে এই দুই ঘাঁটিই ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর পাশাপাশিই আঘাত হানা হয় জাকোবাবাদ, ভোলারি, স্কার্দুতে। ভারতের ব্রহ্মোস হামলায় পাক সেনার কোমর ভেঙে যায়। এই সব খবর পাক নেতারা জানার পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কীভাবে বাঁচা যায় সেই পথ খুঁজতে থাকেন তাঁরা।
পরমাণু কেন্দ্র বাঁচাতে ব্যাকুল পাকিস্তান
এই ব্রহ্মোস হামলার পর নিজেদের পরমাণু কেন্দ্র বাঁচাতে অধীর হয়ে পড়ে ইসলামাবাদ।তাদের মনে হয়, এবার ওই কেন্দ্রগুলিতে হামলা হবে ভারতের। পাকিস্তান প্রতিরক্ষা সংস্থার সবার কাছে হাই অ্যালার্ট সঙ্কেত পৌঁছে যায়। তা ধরা পড়ে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছেও। পাকিস্তানের চিন্তা দাঁড়ায় রাওয়ালপিন্ডির স্ট্র্যাটেজিক ইনস্টলেশন সহ পাকিস্তানের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান্স ডিভিসনের অফিসগুলি নিয়ে। সেখান থেকেই তাদের সবকিছু কৌশল কার্যকর হয়। সেগুলি বাঁচাতে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আকুল হয়ে পড়ে তারা।
হস্তক্ষেপের জন্য আমেরিকাকে আর্জি পাকিস্তানের
একের পর এক হারের সম্মুখীন হয়ে প্রাণ বাঁচাতে অধীর হয়ে পড়ে পাকিস্তান। আর কিছু উপায় না দেখে সরাসরি আমেরিকার শরণাপন্ন হয় তারা। অবিলম্বে হস্তক্ষেপর জন্য প্রার্থনা করে। সরকারি সূত্রে খবর, ভারত পাক উত্তেজনা বাড়তে দেখে আগে থেকেই দু দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেছিল মার্কিন আধিকারিকরা। কিন্তু পাকিস্তানের কাতর প্রার্থনায় তারা বিপদের আঁচ পায়। তাই দুদেশের সংঘর্ষ কীভাবে থামানো যায়, তার জন্য নির্দিষ্ট পথে হাঁটার চেষ্টা করে।
পাকিস্তানকে কড়া নির্দেশ আমেরিকারএই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকেই কড়কায় আমেরিকা। প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ ভাবধারা বজায় রাখতে, ইসলামাবাদকেই ভর্ৎসনা করে। বার্তা দেয়, অবিলম্বে ভারতের সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে হটলাইনে যোগাযোগ করতে। দেরি না করে উত্তেজনা কমানোর জন্য পাকিস্তানকেই চাপ দেয় তারা। বলা যায়, আমেরিকা সেই সময় নির্দেশ দেয় পাকিস্তানকে ভারতের কাছে আর্জি জানানো জন্য।
ভারতে ফোন পাকিস্তানের
এই পরিস্থিতিতে ১০ মে, শনিবার বিকেলে পাকিস্তানের ডিজিএমও মেজর জেনারেল কাশিফ আবদুল্লা ভারতে ফোন করেন। এরমধ্যে পাকিস্তানের যাবতীয় জারিজুরি শেষ হয়ে গেছে। ভারত কড়া জবাব দিতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি এগোচ্ছে সরাসরি যু্দ্ধের দিকে। আমেরিকার কাছ থেকে এই পরিস্থিতিতে নির্দেশ পেয়ে পাক ডিজিএমও ফোন করেন ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইকে। ভারতীয় সময় দুপুর ৩টে ৩৫ মিনিটে এই ফোন আসে। পরে সাংবাদিকদের কাছে প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রিও এই ফোনের কথা জানিয়েছেন।
প্রথমে অবস্থানে অনড় থাকে ভারত
পাকিস্তান ফোন করলেও প্রথমে নিজেদের অবস্থানে অনড় ছিল ভারত। প্রোটোকলের বাইরে গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও কূটনৈতিকস্তরে আলোচনা চাইছিলেন না ভারতীয় অফিসাররা। ভারত স্পষ্ট করে দিতে চাইছিল, কোনও আন্তর্জাতিক চাপের কাছে তারা মাথা নোয়াবে না। মধ্যস্থতাও করবে না। এবার সরাসরি আঘাত হানা হবে পাকিস্তানের ওপর। পাকিস্তানের শক্তি কেন্দ্রে আঘাত তীব্র করা হবে।
পাকিস্তানের ফের ফোন আমেরিকায়
ভারত কথা বলতে না চাওয়ায় পাকিস্তান ফের ফোন করে আমেরিকায়। যে পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে, তাতে যুদ্ধ চরম আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা। আমেরিকা যাতে ভারতকে আলোচনায় রাজি করায়, তার জন্য আর্জি জানায় তারা। এই পরিস্থিতিতে আসরে নামেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও মার্কিন বিদেশ সচিব মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউস চিফ অব স্টাফ সুসি উইলস। মার্কিন আধিকারিকদের সূত্র মারফত একথা জানিয়েছে আমেরিকার সংবাদ সংস্থা সিএনএন।
আমেরিকার ফোন ভারতে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার আমেরিকা ফোন করে ভারতে। ২ দিন আগেই ভারতে ঘুরে গিয়েছিলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডন্ট জেডি ভ্যান্স। তাঁর সফর চলাকালীনই পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এরপর দুদেশের সংঘর্ষ বাঁধলে জেডি ভ্যান্স বলেছিলেন, এর সঙ্গে আমেরিকার কিছু করার নেই। এটা ভারত পাকিস্তানের নিজস্ব ব্যাপার।
কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সবকিছু জানান জেডি ভ্যান্স। এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ফোন করার জন্য ভ্যান্সকে বলেন ট্রাম্প। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ফোন করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত যাতে কথা বলে, তার জন্য আর্জি জানান তিনি। না হলে পরিস্থিতি চরম দিকে মোড় নিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। জেডি ভ্যান্স যখন মোদীকে ফোন করেন, তখন রুবিও ফোন করেন ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে।
প্রধানমন্ত্রী ডোভাল আলোচনা
এরপর সবার সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। হাজির ছিলেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও। সেখানেই ঠিক হয়, ডিজিএমও কথা বলবেন পাক ডিজিএমও-র সঙ্গে। তবে শর্তসাপেক্ষে হবে এই আলোচনা। ভারত ঠিক করে, ভবিষ্যতে যদি ফের কোনও সন্ত্রাস হামলা হয়, তাহলে তা যুদ্ধ বলে ধরে নেবে দিল্লি। অর্থাৎ, সন্ত্রাসবাদ হামলা হলেই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের পথ খোলা থাকবে। এই কথা প্রকাশ্যে জানিয়েও দেয় ভারত।
ভারত-পাক ডিজিএমও কথা
আমেরিকা সরাসরি কোনও মধ্যস্থতা করেনি ভারত পাক সংঘর্ষ থামাতে। তবে দুদেশ যাতে আলোচনায় বসে, তার জন্য তারা উদ্যোগ নেয়। এর ফলস্বরূপই আলোচনায় বসেন ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই ও পাক ডিজিএমও মেজর জেনারেল কাশিম আবদুল্লা। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়, বিকেল ৫টা থেকে সংঘর্ষ বিরতি পালিত হবে। সোমবার দুপুর বারোটায় ফের বৈঠকে বসবেন দুজনে। ভারত সন্ধে ৬টা নাগাদই এই সংঘর্ষ বিরতির কথা জানিয়ে দেয়। তা লঙ্ঘিত হলে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলেও জানান ভারতের বিদেশ সচিব। তবে পাকিস্তান সন্ধে থেকেই বহু জায়গায় এই সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে। ফের ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হয় ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা। তবে রাত বারোটার সময় পাক প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, সংঘর্ষ বিরতিতে যাচ্ছে পাকিস্তান। এর জন্য পাকিস্তান ধন্যবাদ জানায় আমেরিকা, চিন, তুরস্ক সহ কয়েকটি দেশকে।