নিউজ ডেস্ক: ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতি শুরু হওয়ার পর আজ প্রথম ২ দেশের DGMO স্তরের বৈঠক। এদিন বিকেল ৫টা নাগাদ দুই দেশের সামরিক বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশ স্তরে (DGMO ) বৈঠক হবে। বৈঠকে ভারতের পক্ষে থাকবেন DGMO রাজীব ঘাই। বৈঠকে পাকিস্তানের পক্ষে থাকবেন পাক DGMO কাসিফ আবদুল্লাহ্।
‘আলোচনা হবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত পাওয়া নিয়ে’
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই জারি থাকবে, বৈঠকের আগেই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে ভারত। ভবিষ্যতে ভারত-পাক আলোচনা হবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ফেরত পাওয়া নিয়ে, গতকাল জানিয়েছে ভারত।
উল্লেখ্য, উনিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত পাকিস্তান সংঘাত ইস্যুতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শনিবার কথা হয় প্রধানমন্ত্রী মোদীর। সেখানে তাঁর দাবি, কাশ্মীর নিয়ে আমাদের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। বর্তমান পরিস্থিতির নিরিখে একটাই পথ রয়েছে, তা হল পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতকে ফিরিয়ে দেওয়া। এটা ছাড়া তাদের সঙ্গে আলোচনার আর কোনও পথ নেই। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘তারা জঙ্গিদের আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলে, সেই নিরিখে আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারি। এটা ছাড়া আমাদের আর কোনও বক্তব্য নেই। আর এই ইস্যুতে কোনও মধ্যস্থতাকারীরও প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি না।’
কী কী বিষয় উঠে আসতে পারে বৈঠকে?
আজকের বৈঠকে কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে সিন্ধু জল চুক্তি থেকে শুরু করে কাশ্মীর সমস্যা, সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে জল্পনা শুরু হয়েছে। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার কথা জানিয়েছিলেন ভারতীয় সেনার ডিজিএমও রাজীব ঘাই। যদি কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে তা তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে আলোচনায় নতুন কোনও যুদ্ধবিরতি চুক্তি হবে কি না? তার শর্ত কী হবে? এই সব প্রশ্নের উত্তরের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন দেশবাসী।
এর আগে শনিবার বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের ডিজিএমও ভারতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাতে স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে সমস্ত সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে দুপক্ষ। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আজ দুপুরে ডিজিএমও-স্তরের আরও একটি আলোচনার কথা রয়েছে। সেই মতোই আজ দুই দেশের ডিজিএমওরা আলোচনা করবেন। তাঁরা সীমান্ত পরিস্থিতি এবং পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরোধী লঙ্ঘন নিয়ে আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, উত্তেজনা বন্ধের বিষয়ে সমস্ত আলোচনা শুধুমাত্র ডিজিএমও স্তরেই আলোচনা হবে। তৃতীয় কোনও পক্ষ থাকবে না।
অপারেশন সিঁদুরে খতম শতাধিক পাক জঙ্গি
পাকিস্তানের ওপর ভারত কোনও হামলা চালায়নি, শুধুমাত্র হামলার যোগ্য জবাব দিয়েছে। গুঁড়িয়ে দিয়েছে জঙ্গিঘাঁটি। খতম করা হয়েছে একশোর বেশি জঙ্গিকে। রবিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানালেন ভারতের তিন বাহিনীর পদস্থ সেনাকর্তারা। একইসঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা জানালেন, বিনা প্ররোচনায় পাক সেনার হামলা চালিয়েছে। ভারতের জবাবে সীমান্তে পাক সেনার ৩৫ থেকে ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত যেভাবে আঘাত হেনেছে, তার ধাক্কা সামলাতে সময় লাগবে পাকিস্তানের। শুধুমাত্র লড়াই করার ক্ষমতা হারায়নি তারা, ভবিষ্যতে আগ্রাসন দেখানোর আগেও দু’বার ভাবতে হবে। ভারত ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, ফের আগ্রাসন দেখাতে এলে, মুখের মতো জবাব দেওয়া হবে তাদের।
প্রসঙ্গত, ভারতের ১৫টি সেনা ছাউনিকে টার্গেট করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু সব অপচেষ্টা মাঝ আকাশেই ব্যর্থ করে দিল ভারতের আকাশপ্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, S-400। আর তারপর ভারতের পাল্টা ড্রোন হামলায় বিকল হয়ে যায় চিন থেকে আনা লাহৌরের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাজধানী লাহৌরের পাশাপাশি ভারতের ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাওয়ালপিণ্ডিতে। এখানেই পাকিস্তান সেনার সদর দফতর। এছাড়াও ড্রোন হামলা চলেছে গুজরানওয়ালা, ঘোটকি, অটক-সহ একাধিক এলাকায়।
সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ
ভারত-পাক অশান্তির আবহে রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। রবিবার নবান্ন থেকে ভার্চুয়ালি জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব। সেখানেই জানানো হয়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকাগুলিতে বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে গোয়েন্দাদের। কোনওরকম সন্দেহজনক তথ্য এলে তা সঙ্গে সঙ্গে ডিজি কন্ট্রোল রুমে জানাতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে খাদ্যসচিব জেলাশাসকদের জানান, তিন মাসের খাদ্য সামগ্রী যাতে মজুত থাকে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাইরেন নিয়েও বেশ কিছু নির্দেশিকা দেওয়া হয় এ দিনের বৈঠকে। জেলায় থাকা লং রেঞ্জ সাইরেন ও শর্ট রেঞ্জ সাইরেন দ্রুত মেরামতি বা নতুন করে লাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আপাতত কোথায় কোথায় সাইরেন বসানো হবে তা নিয়ে সমীক্ষা চলছে। জেলাশাসকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আশ্রয় শিবির বা ফ্লাড সেন্টার থাকলে সেগুলি কী অবস্থায় রয়েছে তা দেখতে হবে। যেখানে নেই, সেখানে আশ্রয় শিবির কোথায় হবে, তাও চিহ্নিত করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে চলেছে অসামরিক বিমান পরিষেবা
দেশের সুরক্ষার জন্য বাড়তি নজরদারির পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পর থেকেই ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে চলেছে অসামরিক বিমান পরিষেবা। সীমান্তে উত্তেজনার কারণে যে ৩২টি বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়েছিল, সেগুলি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর, প্রয়োজনীয় NOTAM জারি করা হয়েছে।
আতঙ্ক কাটিয়ে রাতে নিশ্চিন্ত ঘুম কাশ্মীরবাসীর
পহেলগাঁও হামলার পর থেকে তো চেনা পরিবেশটাই বদলে গিয়েছিল কাশ্মীরে। কখনও পাক উসকানি, কখনও সেনার অপারেশন সিঁদুর। রাতের নীরবতা খানখান করে দিয়েছিল সেনা ভারী বুট, গুলির শব্দ, ড্রোনের আলো। সেই থেকে প্রতি রাত কেটেছে চাপা আতঙ্কে। তবে রবিবার রাতে ফের চেনা ছবিটা ফিরেছে সীমান্ত এলাকাগুলিতে। টানা ১৯ দিন পর রাতটা শান্তিতে কাটালেন উপত্যকার মানুষজন। রাজৌরি, পুঞ্চ, আখনুর-সহ নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জায়গাগুলিতে প্রথম কোনও অশান্তির আঁচ টের পাওয়া যায়নি।
আসলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতির পর আজ, সোমবার ডিজিএমও স্তরে প্রথম বৈঠক। তার আগে শান্তিপূ্র্ণ রাত্রিযাপন জরুরি ছিল। সেকথাই বলছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। সেনার তরফে জানানো হয়েছে, ”রবিবারের রাতটা জম্মু-কাশ্মীরের জন্য শান্তিপূর্ণ কেটেছে। বিশেষত আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর গ্রামগুলিতে। রাতে কোনও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেনি। সাম্প্রতিক সময়ে এটাই প্রথম শান্তিপূ্র্ণ রাত।”
পাকিস্তান ঠান্ডা হবে নাকি পুরোদমে অ্যাকশনে নামবে সেনা?
রবিবারই ভারতীয় সেনার তিন বাহিনীর বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক সাফ জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের কোনও ধরনের আগ্রাসী মনোভাব বা আচরণ বরদাস্ত করা হবে না। অপারেশন সিঁদুরে কেবল জঙ্গিঘাঁটিই ধ্বংস করা হয়েছে। পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের নিশানা করা হয়নি। পাকিস্তান ঠিক উল্টোটাই করেছে। জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু করে পঞ্জাব, রাজস্থান- সাধারণ মানুষের বাড়ির উপরে ড্রোন হামলা করার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান, যা প্রতিহত করেছে ভারত। কেন্দ্রীয় সূত্রে আগেই জানা গিয়েছিল, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। এরপর আর একটাও সন্ত্রাসবাদী হামলাকে ভারত যুদ্ধের আবাহন বলেই গণ্য করবে- একথা সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত। রবিবার ডিজিএমও রাজীব ঘাই আরও জানান, গত তিন থেকে চার দিন ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে তা যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। এই পরিস্থিতিতে আজকের আলোচনা কোন দিকে যায় সেটাই দেখার।