নিউজ ডেস্ক: ভারত যখন পাকিস্তানকে পর্যদুস্ত করে যোগ্য জবাব দিয়েছে, তখন ছিদ্র খুঁজতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কংগ্রেস? পহেলগাঁও হামলার পর প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে। এক একজন জঙ্গিকে খুঁজে খুঁজে মারার সংকল্প নিয়েছিল ভারত। সেই পথেই অপারেশন সিঁদুর। সেই সংকল্প নিয়েই ৭মে পাকিস্তানকে জবাব। একযোগে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দেয় ভারতীয় সেনা। সেনাবাহিনীর মতে, তাঁদের চোখ ছিল সাপের মণির দিকে। একেবারে শীর্ষস্তরে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়া। জঙ্গি সংগঠন লস্কর ই তৈবা, জৈশ এ মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিনকে জবাব দেওয়া। সেদিনই ভারত যা করার করে দিয়েছে। কোমর ভেঙে দিয়েছে পাক জঙ্গি সংগঠনের। কিন্তু তারপর পাকিস্তান যখন হামলা চালিয়েছে, তার জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে ভারতীয় সেনা। কোনও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি নয়, বরং বেছে বেছে পাক সেনাবাহিনীর যাবতীয় শক্তিস্থলকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে ভারতের একের পর এক অস্ত্র। চোখে সর্ষে ফুল দেখে বাঁচার জন্য কাতর প্রার্থনা জানিয়েছে পাকিস্তান। আর তাতে সাড়া দিয়ে শর্ত সাপেক্ষে সংঘর্ষ বিরতিতে সায় দিয়েছে দিল্লি। এটাই ভারতের পরম্পরা। বুদ্ধ পূর্ণিমার আগে ভগবান বুদ্ধর শান্তির পথকে চরিতার্থ করা। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতিকে মান্যতা দেওয়া। কিন্তু এখানেই কংগ্রেসের রাজনীতি।
কংগ্রেসের রাজনীতি
পাকিস্তানকে যেভাবে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে ভারতীয় সেনা, তাতে অনেকেরই মনে হচ্ছে, ওই দেশটাকে পুনর্দখল করা যেত। পূর্ব পাকিস্তানকে যেভাবে বাংলাদেশে পরিণত করা হয়েছিল, সেভাবেই ছিনিয়ে নেওয়া যেত পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে। ভারতের বর্তমান বীরত্বকে এভাবেই খাটো করার পথে নেমেছে কংগ্রেস।
ইন্দিরা স্মরণ কংগ্রেসের
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী টুইটে লিখেছেন, “ইন্দিরা গাঁধীর মতো একজন নেত্রী। ১৯৭১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন, যুদ্ধ থামাও। ইন্দিরা গাঁধী বলেছিলেন, ‘থামাব না। বাংলাদেশকে মুক্ত করে, পাকিস্তানকে যুদ্ধ করে, নিজের শর্তে যুদ্ধ থামাব’। ৯৩ পাকিস্তানি সেনা বন্দি হলে যুদ্ধ থামে। শিমলা চু্ক্তি হয় তার পর। এখন ইন্দিরা গাঁধীও নেই, সেই ভারতও নেই।” কংগ্রেস নেতাদের মতে, ‘ইন্দিরা হোনা আসান নহি হ্যায়’,। অতীতের স্মৃতির ওপর বেঁচে থাকার চেষ্টায় তারা লিখছে, ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা।
শশী থারুরের কথায় মাথা হেঁট কংগ্রেসের
কংগ্রেসের বহু নেতা যখন প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রচেষ্টাকে খাটো করে দেখাবার চেষ্টায় উঠে পড়ে নেমেছেন, তখন তার পাল্টা জবাব দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। দলীয় নেতাদের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে তিনি জানিয়েছেন, ১৯৭১ আর ২০২৫ এক নয়। দু’টো সময়ের মধ্যে তফাত রয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ” আমরা এমন একটা পরিস্থিতিতে পৌঁছেছিলাম যেখানে তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। মানুষ শান্তি চায়। সত্যিটা এটাই যে, ১৯৭১-এর ঘটনাবলি আর ২০২৫-এর ঘটনাবলি সম্পূর্ণ আলাদা। অবশ্যই পার্থক্য রয়েছে।”
এরপরই তিনি বলেন, ”আমাদের অনেক ভুগতে হয়েছে। পুঞ্চের মানুষদের জিজ্ঞাসা করুন, কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে! আমি মোটেই বলছি না যুদ্ধ থামাতে হবে। যদি যুদ্ধ চালানোর প্রয়োজন পড়ে, তাহলে চালাতেই হবে। কিন্তু এই যুদ্ধ আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই না। আমরা জঙ্গিদের শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। সেই শিক্ষা দেওয়া হয়ে গিয়েছে।”
পাশাপাশি ১৯৭১ সালে ভারতের জয়কে ‘বিরাট জয়’ বলে দাবি করে শশীর বক্তব্য, ”ইন্দিরা গান্ধী উপমহাদেশের মানচিত্র নতুন করে লিখেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি আলাদা ছিল। আজকের পাকিস্তানের পরিস্থিতি আলাদা। তাদের অস্ত্রশস্ত্র, ক্ষতি করার ক্ষমতা সবই আলাদা।”
ভাবা প্র্যাকটিস করুন
আসলে সত্যিটা তুলে ধরেছেন শশী থারুর। নিছক রাজনীতি করতে চাননি তিনি। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর দেশ। ফলে সতর্ক সারা বিশ্বই। ১৯৭১ সালে পরমাণু প্রসঙ্গ ছিল না। বাংলাদেশের মানুষও চাইছিলেন পাকিস্তানের খবরদারি থেকে দূরে থাকতে। স্বাধীন ভাবে বাঁচতে। তাতে সাহায্য করেছিল ভারতীয় সেনা। কিন্তু এখন পাকিস্তানের কি সেই অবস্থা? বিজেপি নেতাদের অনেকেই কংগ্রেস নেতাদের উদ্দেশে কটাক্ষ করে বলছেন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীও প্রতিদিন প্রেস কনফারেন্স করে বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের মনোভাব কী। ভারত কখনোই চায়নি পাকিস্তানের ওপর আঘাত হানতে। বরং নির্দিষ্ট লক্ষ্য হেনে তারা ধ্বংস করেছে পাক মদত পুষ্ট জঙ্গিদের ডেরা। মোট ৯টি ঘাঁটি বিনষ্ট করে দিয়েছে তারা। মারা গেছে শতাধিক জঙ্গি। এদের মধ্যে অনেকেই মুম্বই হামলা থেকে কান্দাহার অপহরণ কাণ্ডে জড়িত ছিল। তাদের অঙ্গুলি হেলনেই দিনের পর দিন কাশ্মীরে জঙ্গি নাশকতা চলেছে। ফলে, একেবারে ওপরে আঘাত হেনেছে ভারতীয় সেনা। এখানেই
কংগ্রেস আমলে কী হয়েছিল?
১৯৬৫ সালেও ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান। সেবারও তাদের জবাব দেওয়া হয়েছিল। তবে, ভারতীয় সেনাপতির সঙ্গে কোনও কথা না বলে তাসখন্দের চুক্তি হয়েছিল। হাজিবির পাস দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেটা থাকলে পুঞ্চ থেকে নৌসেরায় কোনও অনুপ্রবেশ হতে পারত না। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ১৪ দিনে ইতিহাস তৈরি করে ভারতীয় সেনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে সেই ইতিহাস পড়ানো হয়। তার পরও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে পারিনি। ৯৩ হাজার সৈন্য যুদ্ধবন্দি ছিল আমাদের কাছে। এমনটাই মনে করিয়ে দিয়েছেন অনেক প্রাক্তন সেনা কর্তা। আসলে এক একটা পরিস্থিতি এমন আসে, যে তখন সেভাবেই কাজ করতে হয়। দোষারোপের রাজনীতি করলে সেনাবাহিনীর কাজকেই খাটো করে দেখানো হয়।
যুদ্ধের ক্ষতি বুঝছে সীমান্তের বাসিন্দারা
যুদ্ধ হলে কী ক্ষতি তা টের পাচ্ছে সীমান্তের বাসিন্দারা। পুঞ্চ, রাজৌরি সহ জম্মু কাশ্মীরের ওই সব এলাকার বাসিন্দারা প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেক নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। একটা যুদ্ধ হলে দিনে কয়েক হাজার টাকা ক্ষতি হয়। ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হামলা যে ভারতেরই ক্ষতি সাধন করতে পারে, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। তিনি বলেন, “আমরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছি, পুঞ্চের জনগণকে জিজ্ঞাসা করুন, কতজন মারা গেছে। আমি বলছি না যে আমাদের যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত। যখন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কারণ থাকে, তখন আমাদের চালিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু এটি এমন যুদ্ধ ছিল না যা আমরা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমরা কেবল সন্ত্রাসীদের একটি শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। সেই শিক্ষা শেখানো হয়েছে,”
কেন্দ্রের সুরে শশী থারুর
কেন্দ্র যেমন আশ্বাস দিয়েছে প্রতিটি জঙ্গিকে খুঁজে বার করা হবে, তা বিশ্বাস করেন শশী থারুরও।
তিনি বলেন যে তিনি নিশ্চিত, সরকার পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাবে, যে হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। “এটি অপরিহার্য। এটি রাতারাতি ঘটতে পারে না, মাস, বছর সময় লাগতে পারে, তবে আমাদের এটি করতে হবে। নিরীহ ভারতীয় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করে কাউকেই পার পেতে দেওয়া উচিত নয়। তবে এর অর্থ এই নয় যে আমাদের পুরো জাতিকে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ঝুঁকিতে ফেলতে হবে,”
“পাকিস্তানের সাথে এই বিশেষ সংঘাতের ক্ষেত্রে, আরও জীবন, অঙ্গ এবং ভাগ্য ঝুঁকির মুখে ফেলার কোনও কারণ ছিল না। আমাদের ভারতীয় জনগণের সমৃদ্ধি এবং কল্যাণের উপর, বৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং অগ্রগতির উপর মনোনিবেশ করা উচিত। আমি মনে করি এই পর্যায়ে শান্তিই সঠিক পথ,”
ফলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই যেভাবে কংগ্রেস নেতারা সোশাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন, চাইছেন কেন্দ্রের যাবতীয় কীর্তিকে নস্যাৎ করতে, তা যে নীচ রাজনীতির অঙ্গ, তাই বুঝিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। দেশের প্রয়োজনে এমন রাজনীতি যে কখনোই কাম্য নয়, বরং তা দেশকে নীচের দিকে ঠেলে নামায়, তাই কার্যত মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন দলীয় নেতাদের।