নিউজ ডেস্ক: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার ১৫ দিনের মাথায় পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত হেনেছে ভারত। পাকিস্তানে, বিশেষত পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে নিশানা করে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর অপরেশন সিঁদুরের পর থেকেই লাগাতার ভারতের একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটিকে নিশানা করে হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। তবে চুপ করে বসে থাকেনি ভারতও। এর পাল্টা জবাব দিতে পড়শি দেশটির আকাশসীমায় ঢুকে একের পর এক ছাউনিতে হামলা চালায় এ দেশের বায়ুসেনা। তাঁরই মধ্যে অন্যতম হল রাওয়ালপিন্ডির নুর খান এয়ারবেস অপারেশন। এই ঘাঁটিতে হামলা চালানোর পরপরই পাকিস্তান সংঘর্ষ বিরতির জন্য ভারতের কাছে কাকুতি-মিনতি করে। তবে ভারতের এই ‘অপারেশনের’ পিছনে ‘আসল নায়ক’ হলেন ভারতীয় বায়ু সেনার চিফ এয়ার মার্শাল অমরপ্রীত সিং।
অপরেশনের পরিকল্পনা
এয়ার চিফ মার্শাল সিং-ই মন দিয়ে বেছেছিলেন পাকিস্তান এয়ারবেসে আক্রমণ চালানোর জন্য তাঁর দলকে। অপারেশনের জন্য বাছাই করেছিলেন বায়ুসেনার সেরা-সেরা পাইলটদের। সিংকে পূর্ণ সমর্থন করেছিলেন অজিত ডোভাল। ‘অপারেশন সিঁদুরের’ জন্য সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন খোদ ডোভালই।
নয়াদিল্লিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের দাবি, আকাশ পথে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা পার না–করে কী ভাবে পাকিস্তানের ভিতরে বেছে বেছে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানা সম্ভব হবে, তার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করেছিলেন এয়ার চিফ মার্শাল নিজে৷ তাঁর পরিকল্পিত রণকৌশলে সিলমোহর দিয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ এর পরে প্রশাসনিক ভাবে এই অপারেশনে সবুজ সঙ্কেত দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান৷ স্থল এবং নৌবাহিনীর তরফে জানানো হয়, বায়ুসেনাকে সবরকম ভাবে সাহায্য করবে তারা৷ বাকিটা ইতিহাস৷ পাকিস্তানের চাকলালার নুর খান এয়ারবেস–সহ রফিকি, মুরিদ, সুক্কুর, সিয়ালকোট, সারগোদা, স্কারদু, জেকোবাবাদে অবস্থিত এয়ারবেসে আঘাত হানে ভারতীয় বায়ু সেনার যুদ্ধবিমান।
সেনা অফিসার মনে করেছিলেন, নুর খান এয়ারবেসে আক্রমণ চালালে গোটা বিশ্বের কাছে প্রমাণ হবে- ভারতীয় বায়ুসেনা পাক বায়ুসেনার থেকে অনেক বেশি শক্তিধর। সেই কারণেই এই পাল্টা প্রত্যাঘাত। সম্প্রতি, সাংবাদিক বৈঠক থেকে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং পাকিস্তানে যে যে বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ভারতীয় জওয়ানরা প্রত্যাঘাত করেছেন তা নিয়ে তাঁরা বিবৃতি দেন। তাঁর মধ্যেই এই সেনাঘাঁটিও ছিল।
পাক বিমানবাহিনীর এই ঘাঁটিগুলির মধ্যে চকলালার নূর খান ছাউনিটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে এর দূরত্ব বেশি নয়। এইখান থেকেই বড় বড় অপারেশন করা হয়। পাক সেনাবাহিনীর সদর দফতর রাওয়ালপিন্ডির গা ঘেঁষে এটি গড়ে উঠেছে। ফলত, এই ঘাঁটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না।
কে এই অমরপ্রীত সিং?
ভারতের বায়ুসেনা প্রধান এয়ার মার্শাল অমর প্রীত সিং। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর চাকরিজীবন শুরু হয়েছিল। ফাইটার পাইলট হিসাবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। এর আগে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ভাইস চিফ মার্শাল হিসাবে নিয়োজিত হওয়ার আগে একাধিক কমান্ডের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে এয়ার মার্শাল সন্দীপ সিংয়ের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন এয়ার মার্শাল অমর প্রীত সিং। তখন তিনি সেন্ট্রাল এয়ার কমান্ডের এয়ার অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এয়ার চিফ মার্শাল অমর প্রীত সিং সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য-
১) ১৯৮৪ সালের ২১ ডিসেম্বর বায়ুসেনার ফাইটার স্ট্রিমে কমিশন পান সিং। সেন্ট্রাল এয়ার কমান্ডের দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ইস্টার্ন এয়ার কমান্ডে সিনিয়র এয়ার স্টাফ অফিসার ছিলেন।
২) ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি, ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সিং মিগ ২৭ স্কোয়াড্রনের ফ্লাইট কমান্ডার ও কমান্ডিং অফিসার এবং একটি বিমান ঘাঁটির এয়ার অফিসার কমান্ডিং ছিলেন।
৩) তিনি একজন দক্ষ ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর এবং এক্সপেরিমেন্টাল টেস্ট পাইলট এবং বিভিন্ন ফিক্সড-উইং এবং রোটারি-উইং বিমানে ৪,৯০০ ঘন্টারও বেশি পরিষেবা দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন স্তরে বিমান এবং সিস্টেম টেস্টিং প্রতিষ্ঠানেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
৪) মনমোহন সিং রাশিয়ার মস্কোতে মিগ ২৯ আপগ্রেড প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফট তেজস প্রজেক্ট ডিরেক্টর (ন্যাশনাল ফ্লাইট টেস্ট সেন্টার) এবং সাউথ ওয়েস্টার্ন এয়ার কমান্ডে এয়ার ডিফেন্স কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
৫) এয়ার মার্শালকে তাঁর ‘বিশিষ্ট’ পরিষেবার জন্য ২০১৯ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘অতি বিশিষ্ট সেবা পদক’ প্রদান করা হয়েছে।
অত্যন্ত দক্ষ ফাইটার পাইলট হিসাবে পরিচিত তিনি। সেই এয়ার চিফ মার্শাল এবার বায়ুসেনার প্রধানের দায়িত্ব নেবেন। অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এই দায়িত্ব।
জেট নিয়ে ফ্রন্টে যেতে চেয়েছিলেন এয়ার চিফ
‘ইটস টাইম টু কিল’ এই ছোট্ট মাত্র বাক্যবন্ধের এর অভিঘাত কতটা ব্যাপক হতে পারে, ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর মাধ্যমে তা ইতিমধ্যেই টের পেয়েছে গোটা পাকিস্তান৷ ভারতের, বিশেষত ভারতীয় বায়ুসেনার প্রবল প্রত্যাঘাতে কার্যত ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছে সীমান্তের ও পারের প্রায় এক ডজন ছোট বড় শহর৷ ভারতের এই প্রত্যাঘাত দেখেছে গোটা বিশ্ব।
সূত্রের দাবি, এই আবহে কী ভাবে পাক সেনাকে ‘সবক শেখানো’ হবে, তার রণকৌশল চূড়ান্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান এবং সেনাবাহিনীর তিন বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে। সূত্রের দাবি, বৈঠকের মাঝে উঠে দাঁড়িয়ে এয়ার চিফ অমরপ্রীত সিং বলেন, ‘মুঝে পারমিশন দিজিয়ে, ইটস টাইম টু কিল!’ সরকারের শীর্ষ স্তরের তরফে জানতে চাওয়া হয়, কী ভাবে এয়ার চিফ এই অপারেশন প্ল্যান করছেন। সূত্রের দাবি, এয়ার চিফ সেই সময়েই একটি তালিকা পেশ করে জানান, পাকিস্তানের কোন কোন টার্গেটে তিনি ‘হিট’ করার পরিকল্পনা করছেন এবং কেন করছেন? এই টার্গেটগুলিতে হিট করতে পারলে পাকিস্তানের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না— এ–ও জানান বায়ুসেনা প্রধান৷
সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত প্রচলিত একটি প্রবাদবাক্য হলো, ‘এ সোলজার নেভার কুইটস, এ কুইটার নেভার উইনস’। এই প্রবাদেরই সার্থক রূপায়ণ দেখা গিয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুরে’৷ সূত্রের দাবি, প্ল্যান অনুমোদিত হওয়ার পরেই এয়ার চিফ জানান, তিনি নিজে অপারেশন লিড করবেন৷ সঙ্গে থাকবেন বায়ুসেনার আরও তিন জন দক্ষ পাইলট৷ দেশের এয়ার চিফ নিজে ওয়ার রুম ছেড়ে ফিল্ড অপারেশনে যাচ্ছেন— এই দৃশ্য সেলুলয়েডের পর্দায় অবশ্যই ভালো৷ কিন্তু বাস্তবে এটা কী ভাবে সম্বব? যদি এয়ার চিফের কিছু হয়, তা হলে গোটা বিশ্বের সামনে মুখ পুড়তে পারে দেশের৷ যাবতীয় ফ্যাক্টর বিবেচনা করেই এয়ার চিফকে সনির্বন্ধ অনুরোধে ফিল্ড অপারেশনে যাওয়া থেকে নিরস্ত করা হয়, দাবি সরকারি সূত্রের৷ এর পরে নিজের বাহিনীর সেরা চার পাইলটকে ‘গো-অ্যাহেড’ সিগন্যাল দেন এয়ার চিফ৷
ঠান্ডা মাথায় গোটা অপারেশনকে লিড করেছেন এয়ার চিফ অমরপ্রীত সিং
সূত্রের দাবি, ভারতের দু’টি স্ট্র্যাটেজিক এয়ার বেস থেকে টেক অফ করে চারটি যুদ্ধবিমান, যেগুলি একের পর এক আঘাত হানে পাকিস্তানের বুকে৷ এই আঘাতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, বাঙ্কারে লুকোতে হয়েছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ় শরিফ এবং সেনাপ্রধান আসিম মুনির দু’জনকেই৷ ভারতীয় যুদ্ধবিমানের আঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাকলালার নুর খান এয়ারবেস৷ প্রবল প্রত্যাঘাতে সেখানে দাঁড়ানো দু’ডজন যুদ্ধবিমান গুঁড়িয়ে যায়৷ রানওয়েতে এত বড় বড় গর্ত হয়ে যায় যে, সেগুলি ঠিক করতে গেলে কমপক্ষে ১০ দিন সময় লাগবে৷ এই অপারেশনের সামান্য কিছু সিলেকটিভ দৃশ্য দেখেছে আমাদের দেশ৷ বাকিটা গোপনই রাখা হয়েছে৷ সরকারি সূত্রের দাবি, ঠান্ডা মাথায় এয়ার চিফ অমরপ্রীত সিং নিজে দিল্লিতে বসেই গোটা অপারেশনকে লিড করেছেন।