নিউজ ডেস্ক: সোশাল মিডিয়ায় ফের হানাদারি পাকিস্তানের। ভারতে অশান্তি ছড়াতে তাদের নতুন ছক। এবার আরএসএসের নামে অপপ্রচার। আরএসএস কর্ণেল সোফিয়া কুরেশির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বল ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে তারা। শুধু খবর করাই নয়, ভাঙচুরের জাল ছবিও আপলোড করেছে সোশাল মিডিয়ায়। পুলিশ তদন্তে নেমে সবকিছু স্বাভাবিক দেখে বুঝতে পারে, এটা জাল। কোথা থেকে এই তথ্য ছড়ানো হয়েছে, তার তদন্তে নেমে চোখ কপালে ওঠে তাদের।
সাইবার অ্যাটাক, শিরোনামে কুরেশি
ফের সাইবার অ্যাটাক। এবার কর্ণেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে। অপারেশন সিঁদুরের পর সারা ভারত চেনে এই কুরেশিকে। ভারতীয় সেনা বাহিনীর এই মহিলা অফিসারই এখন দেশের অন্যতম মুখ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং। এই দুজনই প্রেস ব্রিফিংয়ে তুলে ধরেছিলেন, ভারত কীভাবে নাস্তানাবুদ করেছে পাকিস্তানকে। তার পাল্টা কিছু করতে না পেরে হাত কামড়াচ্ছিল ইসলামাবাদ। তখন থেকেই সোশাল মিডিয়ায় অপপ্রচারের রাস্তায় নেমেছিল তারা। এবার ভুয়ো ছবি আপলোড করে মিথ্যে খবর ছড়ানোর চেষ্টা করল তারা।
পাক অপপ্রচার, নিশানায় আরএসএস
পাকিস্তান আরএসএসের নামে মিথ্যে খবর ছড়ানোর চেষ্টা করল। ভারতে উত্তেজনা ছড়াতে এটা তাদের নবতম কৌশল। এক্স হ্যান্ডেল বা টুইটারে একটি পোস্ট করে লেখা হয়েছিল, কর্ণাটকের বেলাগাভিতে কর্ণেল সোফিয়া কুরেশির বাড়িতে হামলা হয়েছে। আর এই হামলা করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সদস্যরা। পুলিশ এই পোস্ট দেখতে পেয়েই বিষয়টি যাচাই করে। পুরোটা অপপ্রচার দেখে তারা সতর্ক করে টুইটারকে। তখন সেই পোস্ট ডিলিট করা হয়।
কানাডা থেকে অপপ্রচার !
এক্স হ্যান্ডেলে জনৈক আনিস উদ্দিনের নামে এই পোস্ট করা হয়েছে। লোকেশন দেখা যাচ্ছে ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কানাডা। ৪০৫টি হ্যান্ডেলকে ফলো করে এই অ্যাকাউন্ট। ফলোয়ার আছে ৩১ জন। বেশিরভাগ পোস্টই পাকিস্তানকে সমর্থন করে দেওয়া। কভার ইমেজে ছবি আছে মহম্মদ আলি জিন্না ও পাক সেনা প্রধান আসিম মুনির। এছাড়াও পাকিস্তানের সেনা বাহিনীর অনেক আধিকারিকের ছবি আছে।
বেলাগাভিতে কী আছে কুরেশির?
কর্ণেল কুরেশির শ্বশুরবাড়ি কর্ণাটকের বেলাগাভিতে। কুরেশির জন্ম গুজরাটের ভদোদরায়। তাঁর স্বামীর নাম কর্ণেল তাজউদ্দিন বাগেওয়াড়ি। তাঁর বাড়ি বেলাগাভিতে। সেখানে বাড়ির লোকজন থাকেন। মাঝেমাঝে কুরেশিরাও যান সেই বাড়িতে।
সাইবার অ্যাটাকে কী আছে?
এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়, কর্ণেল কুরেশির বাড়িতে হামলা হয়েছে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছোটে পুলিশ।কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সবকিছু স্বাভাবিক। সন্দেহ হয় পুলিশের। আসরে নামেন বেলাগাভির পুলিশ কমিশনার ডঃ ভীমশঙ্কর এস গুলেদ। তিনি সেই পোস্টে উত্তর দিয়ে লেখেন, এটা ফেক নিউজ। বেলাগাভির এসপি হিসেবে বলছি, এই ফেক নিউজ অবিলম্বে ডিলিট করা হোক, না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারপরই সেই পোস্ট ডিলিট হয়ে যায়। সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে সেখানে।
ফেক নিউজের বন্যা !
সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের খবর, অপারেশন সিঁদুরের পর ঝড়ের গতিতে সাইবার অ্যাটাক হচ্ছে। এব্যাপারে ৭টি গ্রুপকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা ভারত জুড়ে ক্রিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ওয়েবসাইটের ওপর ১৫ লক্ষ বার সাইবার অ্যাটাক করেছ। এরমধ্যে বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। তবে ১৫০টি হানা তাদের সফল হয়েছে প্রাথমিক ভাবে। এগুলি সবই পাকিস্তান অ্যালায়েড গ্রুপস। এরা ম্যালওয়্যার ক্যাম্পেন চালাচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিভাগের বিভিন্ন ওয়েবসাইটেও তারা এই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপারেশন সিঁদুর চলাকালীনও নানা বিভ্রান্তকর খবর তারা প্রচার করছিল। কিছু কিছু খবর ভারতীয় মিডিয়া খেয়েও গেছে।
ডিপফেক ভিডিও
একটি ডিপফেক ভিডিও ছাড়া হয়, যেখানে দেখানো হয় ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট শিবাঙ্গি সিংকে আটক করেছে পাক সেনা। এমনকি এও বলা হয় যে, কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি প্রেস ব্রিফিং করে এটা জানিয়েছেন। যা ছিল পুরোটাই মিথ্যা। কর্ণেল কুরেশি সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, কীভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু পুরোটাই ফেক ভিডিও বানানো হয় তাঁর নাম করে। এমনকি শিবাঙ্গি সিংয়ের ছবিও দেখানো হয়। দাবি করা হয়, পাক সেনার হাতে শিবাঙ্গি সিংয়ের আটকের খবর স্বীকার করেছেন কর্ণেল সোফিয়া কুরেশি।
আসল ঘটনা কী
পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা যায়, এটা ডিপফেক ভিডিও। অরিজিনাল ভিডিওতে দেখা যায়, ৯ মে প্রেস কনফারেন্স করছেন কর্ণেল কুরেশি। তিনি ৭ তারিখে রাতে ভারতীয় সেনা কীভাবে প্রত্যাঘাত করেছে পাকিস্তানে, সেটা বলছেন। ১১ মে এয়ার মার্শাল একে ভারতী স্পষ্ট করে দেন, কোনও পাইলট পাকিস্তানের হাতে বন্দি নেই। প্রত্যাঘাত করে সকলেই নিরাপদে ভারতে ফিরেছেন। পাকিস্তানও সরকারি স্তরে এমন কোনও দাবি করেনি যে ভারতীয় পাইলট তাদের হাতে বন্দি আছে। ফলে বোঝা যায়, এই পোস্ট পুরোটাই মিথ্যা।
গুগল রিভার্স সিস্টেমে আসল তথ্য
গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় আসল সত্যটা কী। দেখা যায়, কর্ণেল কুরেশি ভারতীয় সেনার সাফল্যের কথা বলছেন। পাইলট শিবাঙ্গি সিংয়ের ছবিটা পুরনো। এটি ডিডি ইন্ডিয়া আপলোড করেছিল সোশাল মিডিয়ায় ও ইউ টিউবে। এআই বা ডিপফেক প্রযুক্তির মাধ্যমে এটাকে ম্যানুফ্যাকচার্ড করা হয়েছে। বিষয়টি এআই ডিটেকশন টুল হাইভ মডারেশনের মাধ্যমে আরও খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এটি ডিপফেক বা এআই জেনারেটেড। পিআইবি ফ্যাক্ট চেকও জানায়, কোনও ভারতীয় মহিলা এয়ারফোর্স পাইলট পাকিস্তানের হাতে বন্দি হননি। এটা পাকিস্তান পন্থী ধোঁকাবাজদের কাজ।
সতর্ক হওয়ার সময়
ফলে ভারতীয়দের সতর্ক হওয়ার সময়। এখন হাতে হাতে মোবাইল ফোন। চটজলদি খবর দেখার জন্য অনেকেই ভরসা করেন টুইটার প্লাটফর্ম। কিন্তু সেখানেই এখন কারচুপি করতে এগিয়ে এসেছে পাক সাইবার অ্যাটাকাররা। আসল যুদ্ধের ময়দানে কিছু করে উঠতে না পেরে, নকল ময়দানি জঙ্গ করতে চাইছে তারা। সজাগ থেকেই এর মোকাবিলা করার সময় এসেছে।