নিউজ ডেস্ক: অবশেষে স্বস্তি। টানা ২২ দিন পর মুক্তি। ছাড়া পেলেন পাকিস্তানের হাতে বন্দি ভারতীয় জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ। ঘরের ছেলে দেশে ফেরায় হুগলীর রিষড়ায় খুশির হাওয়া। এতদিন উদ্বেগে ছিলেন স্ত্রী রজনী সাউ সহ বাড়ির লোকজন। এখন হাঁফছেড়ে বাঁচলেন তাঁরা।
কী হয়েছিল পূর্ণমের?
পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার বাসিন্দা পূর্ণম কুমার সাউ নিযুক্ত বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সে। কাজ করছেন ১৭ বছর। বর্তমানে তিনি ছিলেন পঞ্জাবের ফিরোজপুরে। ২৩ এপ্রিল যখন তিনি কাঁধে বন্দুক নিয়ে সীমান্তে পাহাড়া দিচ্ছিলেন, তখন অসতর্কভাবে রোদ থেকে বাঁচতে একটি গাছের নীচে আশ্রয় নেন। বুঝতে পারেননি ওই অঞ্চলটি পাকিস্তানের মধ্যে ঢুকে গেছে। সেখানে পাক রেঞ্জার্সরা তাঁকে বন্দি করে। এরকম ঘটনা আকছারই ঘটে। নিয়ম মেনে দু দেশের জওয়ানরাই তখন অন্য দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ছিল অন্য। তাই জলঘোলা হতে শুরু করে। পূর্ণমকে নিজেদের হেফাজতে রেখে দেয় পাকিস্তান। জল মাপতে শুরু করে তারা।
পূর্ণমকে নিয়ে কেন জলঘোলা?
যেদিন পূর্ণম পাকিস্তানের হাতে বন্দি হয়, তার আগের দিন অর্থাৎ ২২ এপ্রিল ঘটে গেছে পহেলগাঁও ঘটনা। পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা বেছে বেছে হিন্দুদের খুন করেছে বৈসরণ ভ্যালিতে। সকলেই সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কাশ্মীরের মাটিতে এবাবে ধর্মের নামে পর্যটক খুনের ঘটনা কার্যত বিরল। ইজরায়েল বাদে সারা বিশ্বের খুব কম জায়গাতেই এমন ঘটনা ঘটেছে। তাই পারদ চড়তে থাকে উত্তেজনার। কড়া জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় ভারত। আর এই পরিস্থিতিতেই ভারত-পাক উত্তেজনা শীর্ষে ওঠে। দু দেশের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ। ভারতের হামলায় গুঁড়িয়ে যায় পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি শিবির। তছনছ হয়ে যায় পাকিস্তানের একাধিক সেনা ঘাঁটি। দু দেশের মধ্যে এই যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ভারতীয় জওয়ান পূর্ণমকে আটকে রাখে পাকিস্তান। তাঁকে ফেরত দেওয়ার কোনও উচ্চবাচ্চই করে না তারা।
স্বামীর জন্য ব্যাকুল পূর্ণমের স্ত্রী
পাক রেঞ্জার্সদের হাতে গ্রেফতার হয়ে ওপারে আটকে থাকায় উদ্বেগ বাড়তে থাকে পূর্ণমের পরিবারে। পূর্ণমের স্ত্রী রজনী সাউ এখন অন্তঃসত্ত্বা। তাঁদের ৭ বছরের ছোট একটি ছেলে আছে। হুগলীর রিষড়ার বাড়িতে তাই উদ্বেগ বাড়তে থাকে। স্বামীর চিন্তায় পাঠানকোট ছুটে যান পূর্ণমের স্ত্রী। কথা বলেন বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে। তাঁরা পরিস্থিতির কথা জানান। বলেন, পূর্ণমকে ছাড়ানোর জন্য ওপারে যোগাযোগ করা হয়েছে। লজ করা হয়েছে অভিযোগ। কিন্তু দু দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকায় তারা কোনও উত্তর দিচ্ছে না। তবে পূর্ণমকে ফেরানোর সবরকম চেষ্টা চলছে।
সীমান্তে উত্তেজনা, রিষড়ায় উৎকন্ঠা
এরমধ্যেই ভারত পাক সীমান্ত জুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। জম্মু কাশ্মীর থেকে গুজরাট পর্যন্ত ৩,৩২৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুরু হয় সংঘর্ষ। ভারত জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়ায় হামলা চালাতে থাকে পাকিস্তান। পুরো বর্ডার এলাকা অন্ধকারে ঢেকে যায়। সন্ধে হলেই চলে ব্ল্যাক আউট। এই সময় জুড়েই উৎকন্ঠা বাড়ে পূর্ণমের পরিবারে। তারা বুঝতে পারে, সংঘর্ষ বন্ধ না হলে ঘরের ছেলের ঘরে ফেরা মুশকিল।
সংঘর্ষ বিরতিতে স্বস্তি
প্রত্যাঘাতের ৪ দিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে ধীরে ধীরে। সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি হয় ভারত পাকিস্তান। শর্ত সাপেক্ষে ইসলামাবাদকে রেহাই দেয় দিল্লি। পূর্ণমকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কথা হয় ডিজিএমও-র মধ্যে। কেন্দ্রের উদ্যোগে ভারতীয় জওয়ানকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আটারি সীমান্তে হ্যান্ডওভার
সব উৎকন্ঠার অবসান হয় ১৪ মে সকাল সাড়ে দশটায়। অমৃতসরের আটারি সীমান্তে ৪০ বছর বয়সী পূর্ণম কুমার সাউকে ভারতের হাতে তুলে দেয় পাকিস্তান সীমান্ত বাহিনী। প্রোটোকল মেনেই শান্তিপূর্ণ ভাবেই সবকিছু হয়। দেশে ফিরে স্ত্রীকে ফোন করেন পূর্ণম। বলেন, তিনি ভালো আছেন। তবে পাকিস্তানে গিয়ে একমুখ দাড়ি হয়ে গেছে। বাড়ির সবাইকে চিন্তা করতে বারণ করেন তিনি।
পরিবারের মুখে হাসি
ঘরের ছেলের দেশে ফেরার খবরে মুখে হাসি ফোটে সাউ পরিবারে। রিষড়ার বাড়িতে তখন খুশির ছোঁয়া। কদিন ধরেই এলাকায় এনিয়ে উৎকন্ঠা ছিল। বাড়িতে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু উদ্বেগ কমছিল না সীমান্তের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে। অপারেশন সিঁদুর স্থগিত হওয়াতেই মুক্তি মিলল বিএসএফ জওয়ানের। এবার ফের বন্দুক কাঁধে নিয়ে সীমান্তে পাহারা দেওয়ার পালা। তবে তার আগে অবশ্যই বাড়িতে এসে সকলের মুখ দেখা। ঘরের খাবারের স্বাদ নেওয়া। চেনা মানুষের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া। এই সবকিছুর দিকে তাকিয়েই এখন অপেক্ষায় পরিবার। অপেক্ষায় হুগলির রিষড়া।