নিউজ ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্ট পেল নয়া প্রধান বিচারপতি। আজ, বুধবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নিলেন ভূষণ রামকৃষ্ণ গভাই। দেশের ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ নিলেন তিনি। রীতি অনুযায়ী আইন মন্ত্রক প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার কাছে তাঁর উত্তরসূরির নাম প্রস্তাবের আহ্বান করেছিল। সেই মতো বিচারপতি খান্না বিআর গাভাইয়ের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। প্রথম বৌদ্ধ হিসাবে ভারতের প্রধান বিচারপতি হলেন গাভাই। শপথগ্রহণ শেষ হওয়ার পর তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে অনেকেই।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর উপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি পদে শপথ নিলেন বি আর গভাই। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার অবসর গ্রহণের পরে তিনি দেশের ৫২ তম প্রধান বিচারপতি। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা সহ মন্ত্রিসভার অনেকে। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নাও। এছাড়াও এদিন উপস্থিত ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। তবে প্রধান বিচারপতি হিসাবে ছয় মাস মেয়াদ তাঁর। আগামী ২৩ নভেম্বর তিনি অবসর নেবেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক অবসর নেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। সকালে তিনি আদালতের ‘সেরিমনিয়াল বেঞ্চ’-এ তাঁর শেষ ভাষণ দেন। এরপরই তিনি গাভাইকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন। তাঁর কথায়, “গাভাইয়ের মতো একজন সৎ প্রধান বিচারপতিকে পেয়ে দেশ আপ্লুত। তিনি মৌলিক অধিকার এবং বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ণ রাখবেন।”
কে এই বিআর গভাই?
১৯৮৫ সালে আইনি যাত্রা শুরু হয় বিআর গভাইয়ের। তিনি প্রথমে প্রয়াত রাজা এস ভোঁসলে, প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল এবং হাইকোর্ট বিচারপতির সাথে কাজ করেন, এরপর ১৯৮৭ সালে বোম্বে হাইকোর্টে স্বাধীনভাবে আইনের কাজ শুরু করেন। বিচারপতি গাভাই সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক আইনে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি নাগপুর ও আমরাওয়তির পৌর কর্পোরেশন, আমরাওয়তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং SICOM ও DCVL-এর মতো রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন সহ বেশ কিছু নাগরিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৯২ সালে তাঁকে বোম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চে অ্যাসিসটেন্ট গর্ভনমেন্ট প্লেডার এবং অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালে একই বেঞ্চে তিনি সরকার প্লেডার এবং পাবলিক প্রসিকিউটর হন।
২০০৩ সালে তিনি বম্বে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পদে বসেন। এরপর ২০১৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে উন্নীত হন। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক যুগান্তকারী রায়ের অংশ ছিলেন বিআর গভাই। ২০০৩ সালে সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ অবলুপ্তির সিদ্ধান্তকে বহাল রাখার রায়ে ৫ বিচারপতি বেঞ্চের সদস্য ছিলেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি হয়ে দলিত শিকড় মনে করালেন গাভাই
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় দলিত হিসাবে প্রধান বিচারপতি হয়েছেন বিআর গাভাই। বুধবার শপথ নিয়েছেন তিনি। তারপরেই তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা। তাঁদের সম্ভাষণের জবাবে ‘জয় ভীম’ স্লোগান দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি গাভাই। উল্লেখ্য, দলিত অধিকার আন্দোলনের স্লোগান হিসাবে ‘জয় ভীম’ বহুল প্রচলিত। তাই এদিন প্রধান বিচারপতি হয়ে নিজের দলিত পরিচয়কে তুলে ধরলেন গাভাই। এর আগে কেজি বালাকৃষ্ণন প্রথম শিডিউল কাস্ট সম্প্রদায়ের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
অবসরের পর গাভাইয়ের পরিকল্পনা কী?
উল্লেখ্য, এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়ার আগেই অবশ্য তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, অবসরের পর আর কোনও নতুন পদ বা দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না। প্রখ্যাত রাজনীতিক আরএস গাভাইয়ের পুত্র বিচারপতি গাভাইকে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, “আমার কোনও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই । আমি অবসর পরবর্তী কোনও দায়িত্ব বা পদ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । অন্য কোনও যে কোনও দায়িত্বের অর্থ দেশের প্রধান বিচারপতির পদের নীচে, এমনকি রাজ্যপালের পদও ।”