নিউজ ডেস্ক: ১৯৭৮ সাল। ২০ ডিসেম্বর। মাঝ আকাশে বিমান অপহরণ। তখন জেল বন্দি ইন্দিরা গান্ধী। কেন্দ্রে ক্ষমতায় জনতা দল সরকার। আচমকাই বিমানের সিট থেকে ককপিটে পৌঁছে যান দু জন। ফ্লাইট ক্যাপটেনকে বন্দুক দেখিয়ে বলেন, বিমান হাইজ্যাক হয়েছে। দিল্লিতে অবতরণ না করে ফিরে চলুন। সেদিনের সেই অপহরণ কাণ্ডের পর ২ বার কংগ্রেস বিধায়ক হন ভোলানাথ পাণ্ডে। ৭১ বছর বয়সে মৃত্যু হল তাঁর। জানুন ইতিহাস।
কলকাতার বিমান অপহরণ
ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান আইসি ৪১০। কলকাতা থেকে এটি দিল্লি যাচ্ছিল। মাঝে লখনউয়ে স্টপেজ ছিল বিমানটির। সেখান থেকেই ওঠেন ভোলানাথ পাণ্ডে ও তাঁর বন্ধু দেবেন্দ্র পাণ্ডে। দুজনের মিলে বিমান ছিনতাই করেন। বিমানে মোট ১৩২ জন ছিলেন। এরমধ্যে ছিলেন এ কে সেন ও ধরমবীর সিনহা।
কী হয়েছিল সেদিন?
বিমানের ক্যাপ্টেন এম এন ভাট্টিওয়ালা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্র পাইলটদের প্রথমে নেপালে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিমানে জ্বালানি কম থাকার কথা বলে তা প্রত্যাখ্যান করায় তাঁরা তখন বাংলাদেশে উড়ে যেতে বলেন। পরে তা-ও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন পাইলট। তখন ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্র নিজেদের যুব কংগ্রেসের সদস্য বলে পরিচয় দিয়ে ইন্টারকমে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁরা অহিংসায় বিশ্বাসী, যাত্রীদের কোনও ক্ষতি হবে না। তাঁদের দাবি ছিল, জেলবন্দি ইন্দিরা গান্ধীকে মুক্তি দিতে হবে এবং ইন্দিরা-পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
দিল্লির আকাশ থেকে বারাণসীতে অবতরণ
বিমানটি বারাণসীতে পৌঁছলে ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী রামনরেশ যাদবের সঙ্গে দেখা করেন। কয়েক ঘণ্টা আলোচনা এবং ইন্দিরা গান্ধীকে মুক্তি দেওয়ার আশ্বাসের পর উড়ানটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আত্মসমর্পণ করেছিলেন দুই পাণ্ডে। ১৯৮০ সালে ইন্দিরা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ভোলানাথ এবং দেবেন্দ্রের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা হয়।
খেলনা বন্দুক দেখিয়ে ছিনতাই !
একটা খেলনা বন্দুক আর একটি বল দেখিয়ে বিমান ছিনতাই করেছিলেন দুই পাণ্ডে। সন্ধে ৫টা ৪৫ মিনিটে লখনউ থেকে রওয়ানা দিয়েছিল বিমানটি। দিল্লি বিমানবন্দরে নামার ১৫ মিনিট আগে ভোলানাথ পাণ্ডে ও দেবেন্দ্র পাণ্ডে নিজেদের সিটি থেকে উঠে পড়েন। সোজা চলে যান পাইলটের কেবিনে। সেখান থেকেই অপহরণের হুমকি দেন। তাঁরা ইন্দিরা জিন্দাবাদ, সঞ্জয় জিন্দাবাদ ধ্বনি দিতে থাকেন। নিজেদের কংগ্রেস দলের যুব নেতা বলে পরিচয় দেন। পরে ভোলানাথ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাদের ছিনতাই ছিল একটি প্রতিবাদ। উদ্দেশ্য ছিল, ইন্দিরা গান্ধীকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জনতা পার্টির সরকারের উপরে চাপ তৈরি করা।
কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বিধায়ক পদ
কংগ্রেস দলের এমনই মহিমা, ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন উত্তর প্রদেশের ওই দুই নেতা দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে উঠে এলেন। ভোলানাথ পাণ্ডে কংগ্রেসের টিকিটে উত্তরপ্রদেশ থেকে ২ বার বিধায়কও হন। উত্তরপ্রদেশের দৌবা বিধানসভা (বর্তমানে বৈরিয়া) কেন্দ্র থেকে পরপর ২ বার বিধায়ক হন ভোলানাথ পাণ্ডে। অনেকেই মনে করেন, এসবই ছিল সঞ্জয় গান্ধীর কারসাজি। দুই পাণ্ডেই ছিলেন সঞ্জয় গান্ধীর কাছাকাছি লোক।
অপহরণকারীদের কেন টিকিট?
বিমান ছিনতাইয়ের ইতিহাসে এই ঘটনা তোলা থাকলেও, অনেকেই সেদিন পাণ্ডেদের সিরিয়াসলি নেননি। ওই বিমানে ছিলেন এমার্জেন্সি পিরিয়ডের দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ কে সেন ও ধর্মবীর সিনহা। ছিলেন আরও অনেক বিশিষ্ট লোক। তাঁরা কেউই সেভাবে ভয় পাননি। তবে বিমানের এই ঘটনায় বিরক্ত হয়েছিলেন সবাই। দুই কংগ্রেস কর্মীর এ হেন কাজকর্মে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। পরে কীভাবে তাদের আবার বিধায়ক হওয়ার টিকিট দেওয়া হল, তা নিয়েও প্রশ্ন করেছিলেন প্রচুর মানুষ।
কংগ্রেসের কলঙ্ক
এমার্জেন্সি পিরিয়ডের ঘটনায় আজও যেমন অস্বস্তিতে পড়েন বহু কংগ্রেস নেতা, তেমনি সেই অপহরণ কাণ্ডের ঘটনাও এক কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে মনে করেন অনেকে। বিমান অপহরণ করে ইন্দিরা ও সঞ্জয়ের মুক্তি চাইছেন যারা, তাদের কীভাবে টিকিট দেওয় হলো, তা নিয়ে বিষ্মিত আজকের প্রজন্মও। শাসকের রূপ কি এমন হওয়া উটিত? কংগ্রেস নেতার মৃত্যুও ফিরিয়ে দিল সেই প্রশ্ন।