রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার ২৫ শতাংশ দিয়ে দিতে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের । রাজ্য সরকারী কর্মীদের স্বস্তির নির্দেশ দিল শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি সঞ্জয় করোল ও মনোজ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মীকে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দিতে হবে। এই নির্দেশের জেরে ডিএ মামলায় বড় ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বলেন, “আমরা সব রায় দেখেছি। হাইকোর্টের দু’জন বিচারপতি টাকা দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছেন। এটা সত্যি, যে এটা কোনও অধিকার নয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে টাকা দেব না। অন্তত ২৫ শতাংশ দিন।”
প্রথমে আদালত রাজ্যকে বলে, ৫০ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘভাতা দিয়ে দিন। কিন্তু তারপর রাজ্যের অনুনয়েই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেন, বকেয়া মহার্ঘভাতার ২৫ শতাংশ এখনই দিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে, ২০০৯-এর পয়লা জুলাই থেকে বকেয়া মহার্ঘভাতা পাওয়া যাবে।
মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য আবেদন করেন, কিছু একটা নির্দেশ অন্তত দেওয়া হোক, কারণ এই মামলার দিকে তাকিয়ে আছেন হাজার হাজার সরকারি কর্মী। এরপর বিচারপতিরা নির্দেশ দেন, অবিলম্বে ২৫ শতাংশ ডিএ দিতেই হবে।
যদিও এই মামলার চূড়ান্ত ফয়সালা এখনও হয়নি। আগামী অগস্ট মাসে এই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পান, রাজ্য সরকারি কর্মীরা পান ১৮ শতাংশ ডিএ। অর্থাৎ কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের তফাৎ ৩৭ শতাংশ।
শুক্রবার সর্বোচ্চ আদালতের দিকে তাকিয়ে ছিলেন অসংখ্য রাজ্য সরকারি কর্মচারী। গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে DA মামলার শুনানি থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে শুক্রবার DA মামলার শুনানি হয়। এখন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা DA পান ৫৫% হারে। গত বিধানসভা বাজেটে ৪% বৃদ্ধির পর রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এখনও পর্যন্ত DA পান ১৮% হারে। অর্থাৎ এখনও কেন্দ্র রাজ্যের মধ্য়ে DA-র ফারাক ৩৭%।
ডিএ আন্দোলনের অন্যতম মুখ ভাস্কর ঘোষ বলেন, “৫০ শতাংশ দিতে বলা হয়েছিল রাজ্যকে। কিন্তু রাজ্য তাতে রাজি হয়নি। অথচ এর থেকে অনেক বেশি খরচ করা হয় রাজ্যের অন্যান্য প্রকল্পে।” তবে এই নির্দেশকে আন্দোলনের নৈতিক জয় বলে মনে করছেন তিনি।
DA মামলার ইতিহাস ফিরে দেখা
২০১৭ সালে SAT রায় দেয়, DA দেওয়া বা না দেওয়া রাজ্য সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে! সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ওই বছর ৩০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য় সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন।
২০১৭-র ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ১৫% DA ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর DA মামলায়, ২০১৮ সালের ৩১ অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্ট রায় দেয়, DA সরকারি কর্মীদের অধিকার। কীভাবে তা দেওয়া হবে, ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করুক SAT।
২০১৯-এর ২৬ জুলাই, SAT-এর তৎকালীন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগ ও সুরেশ কুমার দাস নির্দেশ দেন, ১ বছরের মধ্যে সরকারি কর্মীদের DA মেটাতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার তা না দেওয়ায় কর্মচারী সংগঠন আদালত অবমাননার মামলা করে ফের SAT-এর দ্বারস্থ হয়।
২০১৯-এর অক্টোবরে SAT-এ রিভিউ পিটিশন দাখিল করে রাজ্য সরকার। ২০২০-র ৮ জুলাই, রাজ্য সরকারের পিটিশন খারিজ করে SAT।
তার পর রাজ্য সরকার আবেদন জানায় হাইকোর্টে। সেই মামলায় রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, বকেয়া DA মিটিয়ে দিতে হবে। এরপর, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার।