নিউজ ডেস্ক: সবেমাত্র ভারত-পাক যুদ্ধের আবহ প্রশমিত হয়েছে, কিন্তু এরইমধ্যে আচমকা আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জন্য জারি হল নোটাম (NOTAM)। ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে আন্দামানের আকাশ। আগামী ২৩ ও ২৪ মে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের জন্য নোটাম জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ ওই দু দিন আন্দামানের আকাশে কোনও বিমান উড়বে না।
নোটাম কী?
নোটাম হল একটি আইনি বিজ্ঞপ্তি, যার অর্থ নির্দিষ্ট সময়ে বা দিনে বিমানগুলিকে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে দূরে থাকতে হবে। এর আগেও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময় এভাবে নোটাম জারি করতে দেখা গিয়েছে।
অন্যভাবে বলা যায়, “নোটাম” হলো একটি বিমান সংক্রান্ত জরুরি সতর্কতা, যা বিমান চালকদের তাদের যাত্রা নিরাপদ ও সফল করতে সহায়তা করে। এটি মূলত একটি স্ট্যান্ডার্ড ফর্ম্যাট অনুসরণ করে, যা বিমান ওড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।
“নোটাম” সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিয়ে গঠিত হতে পারে:
রানওয়ে বা টেকঅফ ও ল্যান্ডিং এর জন্য সতর্কতা।
বিপদজনক আবহাওয়ার পূর্বাভাস।
বিমান চলাচল পথে কোনো বাধা বা পরিবর্তন।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা বিমান চালকদের জন্য প্রয়োজনীয়।
“নোটাম” শুধুমাত্র বিমান চালকদের জন্য নয়, বরং যারা বিমান সংক্রান্ত কাজে জড়িত, তাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করে, যা বিমান ওড়ানোর সময় বিপদ বা ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কেন এই নির্দেশ?
সম্প্রতি ভারত-পাকিস্তান অশান্তির আবহে দেশে নোটাম জারি করা হয়েছিল। তবে সংঘর্ষবিরতি হওয়ার পর ফের কেন আবার সেই একই নির্দেশ? কারণ এখনও স্পষ্ট নয়, তবে সূত্রের খবর, কোনও মিসাইল পরীক্ষা করা হবে বলেই এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতের
তবে এটাই প্রথমবার নয়, এর আগে গত বছর এপ্রিল মাসে এই আন্দামান থেকেই ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা করেছিল বায়ুসেনা। সুখোই ৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান থেকে ওই মিসাইল ছোড়া হয়েছিল, যার রেঞ্জ ছিল ২৫০ কিলোমিটার।
এছাড়া ব্রহ্মোস মিসাইলও পরীক্ষা করা হয়েছিল এই আন্দামান থেকেই। ব্রাক্ষ্মস সম্পর্কে বলতে হলে বলা যায় এটি একটি দূরপাল্লার মিসাইল। একে ভূমি, সাগর এবং বিমান থেকেও প্রয়োগ করা যায়। একে তৈরি করেছে ডিআরডিও ভারত এবং এনপিওএম রাশিয়া। ব্রাক্ষ্মস নামটি হয়েছে ব্রক্ষ্মপুত্র এবং মোস্কা নদীর নাম অনুসারে করা হয়েছে।
তবে এবার কোন মিসাইল নিক্ষেপ করা হবে, সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসেনি। তবে সম্প্রতি যে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেই আবহে এই পরীক্ষা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে।
কেন আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতের?
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কারণ হলো এই দ্বীপপুঞ্জের কৌশলগত গুরুত্ব এবং ভারতের নিরাপত্তা। এটি ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ভারতের সমুদ্রীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই দ্বীপপুঞ্জ বিভিন্ন কারণে ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ-
ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব: আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারত মহাসাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক কার্যকলাপ এবং ভারত মহাসাগরে তাদের প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
নৌ-সক্ষমতা বৃদ্ধি: ভারত তার নৌ-সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এই দ্বীপপুঞ্জ ব্যবহার করে। এটি ভারতের নৌ-সেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ভারত মহাসাগরে তাদের প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে।
সীমান্ত নিরাপত্তা: এই দ্বীপপুঞ্জ ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্বাঞ্চলে সীমান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সামরিক পরীক্ষা: এই দ্বীপপুঞ্জকে সামরিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়। এখানে বিভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম পরীক্ষা করা হয়, যা ভারতের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রতিরক্ষা কৌশল: এই দ্বীপপুঞ্জ ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশল এবং সমুদ্র নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত তার নিরাপত্তা ও কৌশলগত ক্ষমতা বাড়াতে চায়। একই সাথে, এই দ্বীপপুঞ্জকে আরও শক্তিশালী করে, যা ভারতের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।