নিউজ ডেস্ক: সন্ত্রাসবাদে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে ভারত। পাকিস্তান থেকে কোনও রকম সন্ত্রাসবাদী হামলা হলেই তা যুদ্ধের আহ্বান বলেই গণ্য করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এবার ‘অপারেশন সিঁদুরে’র গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে কেন্দ্রের তরফে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।
৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলের তালিকায় কারা?
জানা গিয়েছে, ৭ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে থাকবেন কংগ্রেসের শশী থারুর, বিজেপির রবি শঙ্কর প্রসাদ, বৈজয়ন্ত পান্ডা, জেডিইউ-র সঞ্জয় কুমার ঝা, ডিএমকে-র কানিমোজি করুণানিধি, এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে, শিবসেনার শ্রীকান্ত একনাথ শিন্ডে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রকের পক্ষ থেকে শনিবার এই সাত সাংসদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এরা সকলেই ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলা এবং তারপর অপারেশন সিঁদুরের কার্যকারিতার দিকটি সকলের সামনে তুলে ধরবেন।
এই প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে রয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। যেভাবে অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশে থেকেছেন সেজন্য তাকেই এই প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের এই নেতার বক্তব্য ইতিমধ্যেই প্রশংসা কুড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। এদিন কিরেন রিজিজুর ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় থারুর জানান, সরকারের কাছ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি সম্মানিত। তিনি আরও বলেন, “যখন জাতীয় স্বার্থ জড়িত থাকে এবং আমার পরিষেবা প্রয়োজন হয়, তখন আমি পিছিয়ে যাব না।”
কেন এই সিদ্ধান্ত?
পহেলগাঁও সন্ত্রাস এবং অপারেশন সিঁদুরের পর পাকিস্তানের জঙ্গিবাদের মুখোশ গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে চায় ভারত। শুধু রাষ্ট্রসংঘ নয়, সেই লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভারত থেকে প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। ওই প্রতিনিধিদলে শাসক ও বিরোধী দুই শিবিরেরই সাংসদরা থাকবেন। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, পাক সন্ত্রাস বিরুদ্ধে ভারত যে একজোট সেটা বুঝিয়ে দিতেই প্রতিনিধি দলে রাখা হচ্ছে বিরোধী দলের সাংসদদের।
উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলা থেকে অপারেশন সিঁদুর পর্যন্ত, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিটি ইস্যুতেই সরকারের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে বিরোধী শিবির। সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নও তোলা হয়নি। এবার বিদেশের মাটিতে দেশের পক্ষ রাখতে ‘বিপক্ষ’কেই ভরসা করতে চলেছে মোদি সরকার।
শনিবার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু এই সাতজনের নাম ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “এই সময়ে ভারতকে একত্রিত থাকতে হবে। ৭ সদস্যের সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল ভারতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারি দেশে যাবেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্সের বার্তা পৌছে দিলেন। এটা রাজনীতি, বিভাজনের উর্ধ্বে উঠে দেশের একতার প্রতিচ্ছবি এটা।”
কোন কোন দেশে যাবে প্রতিনিধি দল?
ভারতের প্রতিনিধি দল যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দেশে। পহেলগাঁও হামলায় অন্য দেশের যে হাত ছিল, তার প্রমাণ বিশ্বের কাছে তুলে ধরবেন তারা। আগামী ২২মে থেকে ওই অভিযান শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সাংসদদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
আগে কী ঘটেছিল?
প্রসঙ্গত, পহেলগাঁওতে জঙ্গি হামলার জেরে ২৬ জন নীরিহ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। এরপরই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত করে ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। পাকিস্তান ভারতের মাটিতে ড্রোন হামলা করার চেষ্টা করলেও তার ব্যর্থ হয়। মুখ থুবড় পড়ে পাকিস্তান। এরপর ১০ মে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
কেন ‘অপারেশন সিঁদুর’ সবচেয়ে আলাদা?
এই ধরণের হামলা ইতিহাসে প্রথমবার করা হয়েছে। এই হামলা পাকিস্তানের হৃদয়ে আঘাত করেছে যেখানে জঙ্গিরা ঘাঁটি গেড়ে ছিল। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে এই হামলা করার অর্থ হল পাকিস্তানের হৃদয়ে অভিযান চালিয়েছে ভারত। এর আগে ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে উরি এবং পুলওয়ামাতে ভারত যখন জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করছিল সেটা ছিল পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং খাইবার পাকতুনখাওয়াতে আঘাত এনেছিল। ২৫ মিনিটের এই অপারেশনে ৯ টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। এগুলির মধ্যে চারটি ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। এর মধ্যে ভাওয়ালপুর ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে। এটি ইন্দো-পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।
১৯৭১ সালের পর এই প্রথম পাঞ্জাব প্রদেশে এই ধরণের সাফল্য এসেছে ভারতের ঝুলিতে। যেভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনী পাঞ্জাব প্রদেশের জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা করেছে তাতে দিশেহারা অবস্থা পাকিস্তান সেনাবাহিনী। সব মিলিয়ে সীমান্তপারে পাকিস্তান যে সন্ত্রাসকে মদত দিচ্ছে তাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতেই এই প্রতিনিধি দল কাজ করবেন।
উল্লেখ্য, ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকার সঙ্গে বিবাদের পর প্রথম পরামর্শ নিয়েছিলেন বাজপেয়ীর কাছে। রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের প্রতিনিধি দলের সদস্য ছিলেন সেই বাজপেয়ী। সেই সৌজন্য আজকের রাজনীতিতে বিরল। কিন্তু ভারতীয় গণতন্ত্রে বারবার দেখা গিয়েছে, জাতীয় স্বার্থে একজোট হয়ে গিয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবির। অপারেশন সিঁদুরের পরও সেই একই ছবি দেখা যেতে চলেছে।