নিউজ ডেস্ক: অভিযোগটা উঠছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল নাগরিক মহলে। কখনও বিরিয়ানির প্যাকেটে পোকা, কখনও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাওয়ার তৈরির অভিযোগ উঠছিল শিলিগুড়িতে। শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসল পৌরনিগম। সম্প্রতি শিলিগুড়ির এক রেস্তোরাঁর ছবি সামনে চলে আসে, যা দেখে গা গুলিয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। বেশ কয়েকদিন ধরে শিলিগুড়ি শহরজুড়ে বিভিন্ন খাবারের দোকানে অভিযান চালাচ্ছেন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তখনই ধরা পড়ে এই কাণ্ড।
শৌচাগারেই রেস্তোরাঁর ভাঁড়ারঘর
সূত্রের খবর, শিলিগুড়িতে বাঘাযতীন পার্কে এক রেস্তরায় হানা দিতেই চোখ কপালে উঠে যায় সরকারি কর্মীদের। দেখা যায় শৌচালয়ে কমোডের পাশেই রাখা বিরিয়ানি ও মাংস। কোথাও আবার আবর্জনা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিরিয়ানি। কিন্তু, বিক্রির সময় তা একেবারে সুন্দর মোড়কে মুড়ে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। ইতিমধ্যেই একাধিক দোকান, রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে পুরনিগম।
সম্প্রতি চম্পাসারির একটি হোটেলে বিরিয়ানির মধ্যে পোকা মেলে। এই নিয়ে শিলিগুড়ি পুরসভায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বঙ্গীয় হিন্দু মহামঞ্চ। পুরসভার মদতেই যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো হোটেল, রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরের দিনই অভিযানে নামে শিলিগুড়ি পুরসভা। এরপরেই শিলিগুড়ির এক রেস্তোরাঁয় ধরা পড়ে শৌচাগারে খাবার রাখার এই ছবি।
শিলিগুড়ি পার্বত্য উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার । সেই সঙ্গে দার্জিলিং জেলার অন্যতম বড় শহর। প্রচুর মানুষের বাস। বাইরে থেকেও বহু মানুষের আনাগোনা। তাই এই শহরে সবসময়ই খাবারের চাহিদা থাকে। এখানে হোটেলের ব্যবসাও বেশ লাভজনক। তাই এক চিলতে জায়গা পেলেই গড়ে ওঠে হোটেল রেস্টুরেন্ট। কিন্তু তার ভিতরে এই হাল ! এই ছবি দেখে কপালে চোখ উঠেছে অনেকের।
বারংবার একই ঘটনা
তবে এই ঘটনা প্রথম নয়, এর আগে শহরজুড়ে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে কলকাতা পৌরনিগম৷ বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে একটি খ্যাতনামা রেস্তোরাঁর জরিমানা হয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকা৷ এছাড়াও পার্ক সার্কাসের বিখ্যাত বিরিয়ানির এক দোকানে জরিমানা দিতে হয়েছে ৩ লক্ষ টাকা৷ শুধু নামজাদা দোকান নয়, ডালহৌসি চত্বরের বেশ কয়েকটি স্ট্রিট ফুডের স্টলেও মিলেছে ভেজাল মশলা। পোস্তর সঙ্গে সুজি ব্যবহার করার জন্য মোটা টাকা জরিমানা করা হয়েছে শিয়ালদহের একটি হোটেলকে। কর্পোরেশন সূত্রে খবর, অনেক হোটেলে মাছ, মাংস দীর্ঘ দিন ধরে রাখা থাকে৷ সেগুলিতে শুরু থেকে তারিখ লিখে রাখা দরকার৷ এখনও পর্যন্ত এই সমস্ত হোটেল-রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ২৫ লক্ষ টাকার মতো অর্থ কর্পোরেশনের কোষাগারে এসেছে৷
হোটেল–রেস্তোরাঁর খাবার কতখানি নিরাপদ?
কলকাতা পুরসভার সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, হোটেল–রেস্তোরাঁর খাবারে ভেজালের প্রয়োগ ক্রমবর্ধমান। পুরসভা সূত্রে খবর, গতবছর ১ এপ্রিল থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত মহানগরের উত্তর থেকে দক্ষিণের ৮৬০টি হোটেল, রেস্তোরাঁয় খাবার তৈরির উপকরণ পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৯টি নমুনায় ভেজাল মিলেছে। এর আগে ২০২৩ সালে নমুনা সংগ্রহ হয়েছিল ৯১০টি জায়গা থেকে। যার ৯১টিতে মিলেছিল ভেজাল।
গতবছর (৩০ অক্টোবর পর্যন্ত) ৯১০টি জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয় তৈরি করা খাবারের নমুনা। যার মধ্যে ৬৭টি দোকান–রেস্তোরাঁয় খাবারের মান খারাপ বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে। গত বছর এই পরীক্ষা হয়েছিল ৭৯১টি জায়গার তৈরি করা খাবার নিয়ে। যার মধ্যে ৪৩টি জায়গার খাবারের মান সন্তোষজনক নয় বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, লাভের আশায় কম দামের মশলা ও বাসি জিনিস ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। যার জেরে ভুগতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাড়ছে অসুখ। এই পরিস্থিতিতে শহর–জুড়ে ভেজাল খাবারের রমরমা রুখতে আরও বেশি করে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে পুরসভা।