নিউজ ডেস্ক: অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে সংঘর্ষবিরতি শুরু হয়েছে, সেটা আপাতত চলবে। নতুন করে পাকিস্তানের ডিজিএমওর সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা বা বৈঠক করবেন না ভারতের ডিজিএমও। জানিয়ে দেওয়া হল সেনার তরফে।
ঠিক কী জানিয়েছে ভারতীয় সেনা?
সম্প্রতি সংঘর্ষবিরতি হয়ে গিয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। তারপরও সেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে বারবার হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। সেই সময় ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে সেনা কমান্ডারদের তা প্রতিহত করতে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল আরও জানান, পাকিস্তান চুক্তিভঙ্গ করতে থাকলে এক বিন্দু জমিও ছাড়বে না ভারত। তবে সেকথা মানতে নারাজ পাক দেশ। উল্টে ইসলামাবাদ সেই হামলার কথা অস্বীকার করে দাবি করেছে, ‘ভারতীয় সেনাই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করেছে।’ বিগত কিছুদিন আগেই দুই দেশের মধ্যে ডিজিএমও পর্যায়ের বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে।
সেনাবাহিনীর তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বেশ কিছু সংবাদ সংস্থার দাবি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি সংক্রান্ত সমঝোতার মেয়াদ রবিবার শেষ হয়ে যাবে৷ তবে, ১২ মে দুই দেশের ডিজিএমও-র বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সমঝোতার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কোনও সময়সীমা নেই৷” বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, আপাতত দু’দেশের ডিজিএমও-র বৈঠকে বসারও কোনও পরিকল্পনা নেই৷ সুতরাং, পূর্বের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি সমঝোতা আগামিদিনেও বজায় থাকবে৷
কেন এই সিদ্ধান্ত?
১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপটের বিস্তর পার্থক্য রয়েছে৷সংঘর্ষ বিরতির নিয়ে দু’দেশের সমঝোতার এই সিদ্ধান্তকে আগেই স্বাগত জানিয়ে এমনই মত প্রকাশ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর৷ তাঁর মতে, এই মুহূর্তে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি কোনও সামরিক সংঘাতে যাওয়া ভারতের লক্ষ্য নয়৷
আগে কী ঘটেছিল?
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জন্য পাকিস্তানের দিকে আঙুল তোলে ভারত। যদিও পাকিস্তানের দাবি, তারা কোনও ভাবেই পহেলগাঁওয়ের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়! সেই উত্তেজনার আবহেই জঙ্গিদমনে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সূচনা করে ভারত। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কশ্মীরের বেশ কয়েকটি জঙ্গিঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সীমান্তে গোলাবর্ষণের পরিমাণ বেড়ে যায়। আকাশপথেও একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালায়। চার দিন ধরে চলা এই সামরিক অস্থিরতা শেষ হয় যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে।
গত ১০ মে বিকেল ৫টা থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। ভারত ও পাকিস্তান— দুই দেশই জানায়, ডিজিএমও স্তরে আলোচনাতেই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১২ মে আবার দুই দেশের ডিজিএমও আলোচনা করেন ‘হটলাইনে’। কিন্তু তার পর থেকেই বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল, ১৮ মে (রবিবার) পর্যন্তই যুদ্ধবিরতি থাকবে দুই দেশের মধ্যে। সেই দিন আবার কথা হবে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সেনার ডিজিএমওদের মধ্যে। সেই বৈঠকেই স্থির হবে পরবর্তী পদক্ষেপ। ডিজিএমও স্তরের আলোচনার দাবি নস্যাৎ করল ভারতীয় সেনা। সংবাদ সংস্থা এনআইএ ভারতীয় সেনাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ১২ মে ডিজিএমও স্তরের আলোচনায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তাই বলবৎ থাকবে। যুদ্ধবিরতির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার কোনও তারিখ নেই।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় থাকা গ্রামগুলি৷ কুপওয়ারা, রাজৌরি, উরি এবং পুঞ্চ-সহ তিনটি জেলায় ক্ষতির পরিমাণ সবথেকে বেশি৷ ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ তার জন্য প্রশাসনিক স্তরে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে৷ স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে৷ জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখেছেন৷ স্থানীয় বিধায়ক আজাজ জানু জানান, পাক গোলাবর্ষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জম্মুর পুঞ্চ৷ সেখানে ১৪ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন৷