নিউজ ডেস্ক: শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের নজরে এবার চাকরিহারারা। বিকাশভবনের সামনে শনিবারের বিক্ষোভে ‘উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালা’ নামক কর্মসূচিতে ছাত্রছাত্রী হিসাবে শিশুরা হাজির ছিলেন। ঘটনার পরেই বিকাশ ভবনের সামনে শিক্ষকদের আন্দোলনে শিশুদের শামিল করা হল কেন? এই মর্মে বিধাননগর পুলিশের কাছে জবাব তলব করল রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন।
অভিযোগ, ১৭ মে অর্থাৎ শনিবার শিক্ষকদের প্রতিবাদের সময় প্ল্যাকার্ড হাতে ছোট পড়ুয়াদেরও শামিল করা হয়, যা জুভেনাইল জাস্টিস আইন বহির্ভূত। এতে শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও ছোটরা কীভাবে আন্দোলনে অংশ নিল? পুলিশের কাছে এই জবাব চাইল শিশু সুরক্ষা কমিশন। এনিয়ে ইতিমধ্যেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলাও দায়ের হয়েছে।
শিক্ষক আন্দোলনে কেন পড়ুয়ারা শামিল?
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকাশভবনের সামনে চাকরিহারা একটি বিশেষ কর্মসূচি নেয়। যার পোশাকি নাম ‘উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালা’, সেই ‘পাঠশালা’য় ছাত্রছাত্রীরা হিসাবে উপস্থিত ছিল কচিকাচারা, যাদের প্রত্যেকেরই বয়স ১০-১২র মধ্যে। চাকরিহারাদের বক্তব্য, যেহেতু তাঁরা স্কুলে শিক্ষকতা করতে পারছেন না, তাই তাঁরা আন্দোলনমঞ্চে যারা এসেছে, তাদের পাঠ দেবে। কমিশনের বক্তব্য, যেখানে একটি বিষয়ের ওপর আন্দোলন চলছে, যেখানে ওই আন্দোলনেরই একটি কর্মসূচি এই ‘পাঠশালা’, সেখানে শিশুদের কেন অংশগ্রহণ? শিশুরা কোনওভাবেই কোনও আন্দোলনের অংশ হতে পারে না। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন। জানতে চাওয়া হবে, যারা অংশ নিয়েছিল- তাদের বয়সসীমা, তারা কীভাবে এই কর্মসূচিতে অংশ নিল ও কাদের মাধ্যমে অংশ নিল। কিন্তু প্রশ্ন, উঠছে, চাকরিহারা যাঁরা দিনভর আন্দোলনে সামিল, তাঁদের মধ্যেও অনেকে অভিভাবক, তাঁদের সন্তানরাও মাঝেমধ্যে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। আবার যে শিশু টিভি পর্দায় দেখছে, তাদেরই শিক্ষক নিগৃহীত হচ্ছে রাস্তায়, তারাও গিয়েছে দেখা করতে, তাদেরও তো সেক্ষেত্রে শিশু মনে প্রভাবই পড়ছে। সেক্ষেত্রে কমিশনের কী বক্তব্য, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়।
কোথা থেকে ঘটনার সূত্রপাত?
অস্বচ্ছ নিয়োগ, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির অভিযোগে গত এপ্রিলে ২০১৬ সালে শিক্ষক নিয়োগের গোটা প্যানেল বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। রাতারাতি চাকরিহারা হন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী। স্কুল সার্ভিস কমিশন যোগ্য-অযোগ্যের ফারাক করতে না পারায় শীর্ষ আদালত এই রায় ঘোষণা করে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরই নতুন করে আন্দোলন শুরু করেন ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা। ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ প্রকাশ-সহ একাধিক দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনের সেই আন্দোলন অন্য চেহারা নেয়। দু-আড়াই হাজার লোক জড়ো হন সেখানে। বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকতে চান তাঁরা। ব্যাপক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। সন্ধ্যার পর পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে লাঠিচার্জ করে। পালটা পুলিশের উপরও হামলা হয়। এনিয়ে দিন তিনেক ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে বিকাশ ভবনে শিক্ষকদের বিক্ষোভ। তারই মধ্যে শনিবার বিক্ষোভে শামিল হয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায় বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের। তা নজরে পড়ে শিশু সুরক্ষা কমিশনের।
বিকাশ ভবনের সামনে গণ্ডগোলের ঘটনায়,ইতিমধ্যেই ৫ জন শিক্ষক- শিক্ষাকর্মীকে তলব করল বিধাননগর উত্তর থানায়। চাকরিহারা চিন্ময় মণ্ডলের বক্তব্য, “যেটা বলা হচ্ছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কর্মীদের হুমকি দেওয়া জন্য তলব করা হয়েছে। আমাদেরই লাঠি দিয়ে মারা হল, আমরাই রক্তাক্ত হলাম, আমরাই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি, আবার আমার বিরুদ্ধেই এফআইআর!”
যদিও আন্দোলনে শিশুদের শামিল করা নিয়ে পুলিশকেই নোটিশ পাঠিয়েছেন রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস। মনে করা হচ্ছে, এসবের জেরে শিক্ষকদের আন্দোলন কিছুটা জটিলতার মুখে পড়ল।