নিউজ ডেস্ক: পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইতিমধ্যেই ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা পুলিশের জালে। এই ঘটনার পরই দেশ জুড়ে একের পর এক জায়গা থেকে জঙ্গি সন্দেহে ও নাশকতার ক্ষেত্রে জঙ্গিদের সাহায্যের অভিযোগে পর পর ধরপাকড় চলছে।
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার উত্তরপ্রদেশের যুবক
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার উত্তরপ্রদেশের যুবক। রামপুরের বাসিন্দা শাহজাদকে গ্রেফতার করল উত্তরপ্রদেশ STF। ভারত-পাক সীমান্তে চোরাচালানের মাধ্যমে ISI এজেন্টদের তথ্য পাচারের অভিযোগ শাহজাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই ব্যবসায়ী গত কয়েকবছর ধরে ঘনঘন পাকিস্তানে যাতায়াত করতেন। বেআইনিভাবে ব্যবসাও চালাতেন।
উত্তরপ্রদেশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স সূত্রে জানা গিয়েছে, মোরাদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শাহজাদকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত কয়েকবছর ধরে তিনি বারবার পাকিস্তানে গিয়েছেন। বেআইনিভাবে ব্যবসা চালাতেন দুই দেশেই। প্রসাধনী, পোশাক, মশলার মতো নানা দ্রব্য পাচারও করতেন। আর এই ব্যবসার আড়ালেই চলত চরবৃত্তি। পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে ভারতীয় টাকা এবং ভারতীয় সিম কার্ড জোগাতেন শাহজাদ। এমনকি রামপুর থেকে বহু ব্যক্তিকে পাকিস্তানেও পাঠিয়েছিলেন তিনি। এই ব্যক্তিদের ভিসার ব্যবস্থা করত আইএসআই স্বয়ং। রামপুরের বাসিন্দারা পরে কাজ করতেন আইএসআইয়ের চর হিসাবে।
হায়দরাবাদ থেকে ধৃত ২
রবিবার নিজামের শহর হায়দরাবাদ থেকে ২ সন্দেহভাজন জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। জানা যাচ্ছে, এরা আইএসআইএস-র সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। দেশের তাবড় শহর হায়দরাবাদের বুকে বিস্ফোরণের ছক ছিল এই ২ জঙ্গির, বলে জানা গিয়েছে। ধৃতদের মধ্যে একজন ২৯ বছর বয়সী সিরাজ উর রহমান, অন্যজন, ২৮ বছরের সইদ সমির। অন্ধ্রপ্রদেশের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স সেল ও তেলাঙ্গানা পুলিশ যৌথ অভিযানে নেমে এদের পাকড়াও করে। বাহিনীর কাছে গোপন সূত্রে খবর ছিল সিরাজ উর রহমানকে নিয়ে। বাহিনী জানতে পেরেছিল সে ভিজিয়ানগরমে গা ঢাকা দিয়েছে। প্রথমেই সেখানে গিয়ে সিরাজ উর রহমানকে গ্রেফতার করে বাহিনী। এরপর হায়দরাবাদের বুক থেকে সমির গ্রেফতার হয়। জানা যাচ্ছে, সন্দেহভাজনদের বাড়ি থেকে পুলিশ অ্যামোনিয়া, সালফার এবং অ্যালুমিনিয়াম পাউডার সহ বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধার করেছে।
জানা গিয়েছে, ভিজিনগরাম থেকে সিরাজ বিস্ফোরকের সামগ্রী নিয়ে এসেছিল। জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, এই ২জন বড় সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেছিল দেশজুড়ে। সিরাজ ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরির চেষ্টা করছিল, সমীর একটি লিফট অপারেটিং সংস্থায় কর্মরত। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, এই ২ জন অল হিন্দ ইত্তেহাদুল মুসলিমিন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই সংগঠনের মাধ্যমেই তাঁরা তৈরি করছিল সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা।
জেরায় জানা গিয়েছে, সৌদি আরবের আইসিস মডিউল থেকে তাদের হামলা চালানোর যাবতীয় নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল। হায়দরাবাদে কীভাবে বোমা বিস্ফোরণ করতে হবে, সেই নির্দেশও দিচ্ছিল আইসিস জঙ্গিরা। আগে তাদের ‘ডামি’ বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল বলেই জানা গিয়েছে। ওই প্ল্যান সফল হলে, আরও বড়সড় হামলার ছক ছিল।
কাশ্মীরে গ্রেফতার কারা?
জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিদের ২ সহায়ককে গ্রেফতার করেছে সিআরপিএফ ও সেনার যৌথ বাহিনী। শোপিয়ানের ডিকে পোরা থেকে এই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছে একাধিক অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। যৌথ বাহিনীর অপারেশনে দু’টি পিস্তল, চারটি গ্রেনেড, ৪৩ টি লাইভ রাউন্ড সহ একাধিক জিনিস উদ্ধার হয়েছে। এই দুই ধৃতের সঙ্গে কোন কোন জঙ্গির যোগ ছিল? এরা ঠিক কী কী কাজ করত, তা নিয়ে আরও তদন্ত চলবে বলে জানা যাচ্ছে।
হরিয়ানা থেকে গ্রেফতার একের পর এক গুপ্তচর
ভারতে থেকে, ভারতের তথ্য তুলে দিত পাকিস্তানের হাতে। পাকিস্তানের হয়ে করত গুপ্তচরবৃত্তি। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এদেশের খবর চলে যেত অন্য দেশে- এই অভিযোগেই হরিয়ানার নুহ থেকে ২৬ বছরের এক যুবক গ্রেপ্তার হয়েছে। জানা গিয়েছে যুবকের নাম আরমান। নুহ পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের বিরুদ্ধে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন কর্মীর মাধ্যমে ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য সামরিক কার্যকলাপ সম্পর্কে সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি থেকে গোপন তথ্য পাওয়ার পর আরমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযোগ, সে দীর্ঘদিন ধরে হোয়াটসঅ্যাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তথ্য পাচার করছিল। তার ফোন থেকে বেশকিছু ছবি, ভিডিও উদ্ধার করা গিয়েছে বলেও খবর সূত্রের।
একই অভিযোগে হরিয়ানা থেকেই গ্রেফতার হয়েছে দেবেন্দ্র সিং নামের এক যুবক। দেবেন্দ্র সিং পাঞ্জাবের একটি কলেজের ছাত্র৷ গত বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানের নানকানা সাহিব গুরুদ্বারে বেড়াতে গিয়েছিল সে৷ সেখানেই নাকি পাক গুপ্তচরদের সংস্পর্শে আসে দেবেন্দ্র৷ তারপর সেখান থেকে ভারতে ফেরার পরেও সে পাক গুপ্তচরদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল বলে জানা গিয়েছে৷
পাঞ্জাব থেকেও গ্রেফতার ২
এর আগে পাঞ্জাবেরই আরও ২ জনকে গুপ্তচরবৃত্তির জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ তারাও ভারতীয় সেনার বিভিন্ন ঘাঁটি সম্পর্কে ISI-কে গোপন তথ্য সরবরাহ করেছিল বলে জানা গিয়েছিল৷ তাদের নাম পালাক শের মাসিহ এবং সুরজ মাসিহ৷ এছাড়াও দেবেন্দ্র সিং-এর গ্রেফতারির কদিন আগেই পাকিস্তানের গুপ্তচরদের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য সরবরাহের অভিযোগে নউমান ইলাহি নামে বছর ২৪-এর যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছিল৷
গ্রেফতার ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা
কেউ দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে দিচ্ছেন। আর কারও বিরুদ্ধে নিজের মাতৃভূমির সঙ্গেই উঠছে প্রতারণার অভিযোগ। ইনিই ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা। পাক গুপ্তচর সন্দেহে হরিয়ানার এই বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে হরিয়ানা পুলিশ। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে যা নিয়ে এখন তোলপাড় দেশ। জ্যোতির ইউটিউব অ্যাকাউন্টে এখনও জ্বলজ্বল করছে পাকিস্তানের নানা জায়গার ভিডিও। পহেলগাঁও হামলার আগেই পাকিস্তানে গেছিলেন তিনি। অভিযোগ এই ভারতীয় তরুণী, অপারেশন সিঁদুরের সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য,এমনকী ভারতের সেনাঘাঁটি সংক্রান্ত অত্যন্ত সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ISI-কে দিয়েছিলেন।এখানেই শেষ নয়, পহেলগাঁওকাণ্ডের পর ভারতীয় সেনার প্রস্তুতি সংক্রান্ত তথ্যও পাকিস্তানের হাতে পৌঁছে দিয়েছিলেন বলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে জ্যোতির বিরুদ্ধে।
গোয়েন্দাদের নজরে ইউটিউবার প্রিয়াঙ্কাও
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচর বৃত্তি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন ভারতীয় ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা। কিন্তু জ্যোতি একা নন, এ বার গোয়েন্দাদের নজরে আরও এক মহিলা ইউটিউবার। প্রিয়াঙ্কা সেনাপতি নামে ওই ইউটিউবার আবার জ্যোতির বন্ধুও। জানা গিয়েছে, ওড়িশার বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা। জ্যোতির সঙ্গে তাঁর কী সম্পর্ক? গুপ্তচর বৃত্তির সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুরীর পুলিশ সুপার বিনীত আগরওয়াল এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে জ্যোতির বন্ধুত্ব থেকে শুরু করে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রিয়াঙ্কার ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার এবং ইউটিউবে সাবক্রাইবারের সংখ্যা ১৪ হাজার ৬০০। ওডিশা এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা নিজের পেজে তুলে ধরেন এই সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। মার্চ মাসের ২৫ তারিখে প্রিয়াঙ্কা নিজের পাকিস্তান ট্রিপের একটি ভিডিয়ো ইউটিউবে আপলোড করেছিলেন। সেখানে তিনি ভিডিয়োর টাইটেলে লিখেছিলেন, ‘ওড়িশা গার্ল ইন পাকিস্তান| কর্তারপুর করিডোর গাইড| ওড়িয়া ব্লগ।’ তবে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি প্রিয়াঙ্কাকে।
গোয়েন্দা আধিকারিকরা আরও জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্রিয়ঙ্কা সেনাপতিকে জেরা করা শুরু হয়েছে। জ্যোতির সঙ্গে তার সরাসরি বা পরোক্ষ কোনও যোগাযোগ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কী কথা হয়েছে তার জন্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে চ্যাটও। যদিও প্রিয়াঙ্কা দাবি করেছেন, জ্যোতি তাঁর বন্ধু। সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরেই তাঁদের আলাপ। ইউটিউব করার পাশাপাশি, জ্যোতি কী করতেন সে বিষয়ে কিছু জানতেন না। তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করতে রাজি তিনি।
বিহার থেকে গ্রেফতার ১
বিহারের সমস্তিপুরের মুচি সুনীল কুমারকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার অধীনে আছে। গত ৩ মে, সেনা সেনানিবাস এবং বিমানঘাঁটির তথ্য ছবি তোলার অভিযোগে অমৃতসরে পলক শের মাসিহ এবং সুরজ মাসিহ নামে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অমৃতসর কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী হরপ্রীত সিং ওরফে পিট্টু ওরফে হ্যাপির মাধ্যমে তারা আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বলে জানা গেছে।
এনআইএ-র জালে বাদুড়িয়ার তানিয়া
হারিয়ানার জ্যোতি রানির মতোই বাংলায় পাকিস্তানের আইএসআই-এর স্পাই হিসাবে কাজ করত তানিয়া পারভিন। সূত্র মারফত হয়ে জানা গিয়েছে, জ্যোতি রানির মতোই পাক সেনা ও লস্করের হয়ে কাজ করত তানিয়া। বাদুড়িয়ার কলেজ ছাত্রী তানিয়া পারভিনের ফোনেই পাক যোগের তথ্য পাওয়া গিয়েছে। জ্যোতির মতো এক্ষেত্রেও হানি ট্র্যাপ তথ্য জোরদার হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এনআইএ-র জালে বাদুড়িয়ার তানিয়া। তানিয়ার ফোন ঘেঁটে এনআইএ আধিকারিকদের হাতে উঠে এসেছে দুটো নাম। আয়েসা সিদ্দিকি ও বিলাল দুরানি। জানা গিয়েছে, পাকিস্তানে বসে আয়েসা সিদ্দিকি ও বিলাল দুরানি তানিয়াকে নির্দেশ দিত, তাকে কী করতে হবে! তানিয়ার চ্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে পাক বায়ু সেনা আধিকারিক আয়েশার উর্দি পরা ছবিও। এনআইএ-এর চার্জশিটে আয়েশাকে লস্কর কমান্ডার হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘পাক কাশ্মীর কি শেহজাদিয়া’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন ছিলেন আয়েশা। জানা যাচ্ছে, ওই গ্রুপের মাধ্যমেই পাচার হত তথ্য। জ্যোতির মতোই পাক নেটওয়ার্কের অংশ এই তানিয়া পারভিন।
জ্যোতি রানি হোক কিংবা তানিয়া পারভিন, এরা প্রত্যেকেই কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে ইউটিউব কিংবা সামাজিক মাধ্যমে অ্যাক্টিভ। সামাজিক মাধ্যমেই পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এই ধরনের মেয়েদের হানি ট্র্যাপ হিসাবে ব্যবহার করাচ্ছে। অন্তত তেমনটাই তথ্য উঠে এসেছে আধিকারিকদের হাতে।
প্রসঙ্গত ২২শে এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসী হামলা এবং পাকিস্তানের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরপরই এমন পর পর ধরপাকড় করা হচ্ছে। এর মধ্যেই কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে স্লিপার সেলগুলিকে সক্রিয় করার চেষ্টা করা হতে পারে, ফলত সেই বুঝে চলছে পাকড়াও অভিযান।