নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও যুবকদের মধ্যে একটি ম্যাপ বিলিকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক সামনে এসেছে। দেখা যাচ্ছে গ্রেটার বাংলাদেশ নামে ওই ম্যাপের মধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য আছে।
ভারতের কোন কোন রাজ্য গ্রেটার বাংলাদেশে?
যে বিতর্কিত মানচিত্রটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিলি করা হচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ভারতের বহু রাজ্য এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সেভেন সিস্টার্স এই মানচিত্রের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই আছে বিহার, ঝাড়খন্ড, এমনকি ওড়িশাও। ওদিকে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যকেও এই ম্যাপে ঢোকানো হয়েছে। কাল্পনিক এই মানচিত্রটি ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিলি করা হচ্ছে।
পিছনে কাদের হাত?
জানা যাচ্ছে, এর পিছনে কাজ করছে তুরস্ক। একটি এনজিও-র ব্যানারে ঢাকায় এই কাজ করছে তুরস্কের একটি ইসলামী গোষ্ঠী। ওই ইসলামী গোষ্ঠীর নাম সালতানাত-এ-বাংলা। তারাই গ্রেটার বাংলাদেশ মানচিত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর আগেও উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তুলেছিল ইউনূস পন্থী অনেকে। চিনে গিয়ে কৌশলে উত্তর পূর্বাঞ্চলের কথা তুলেছিলেন মহম্মদ ইউনূসও। এবার গ্রেটার বাংলাদেশের নামে সেই চক্রান্তে নামল তুরস্ক সরকার সমর্থিত একটি এনজিও। পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মেলানোর পর এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে অস্থিরতা ছড়ানোর যে ষড়যন্ত্রে সামিল হচ্ছে তুরস্ক, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
নেপথ্যে পাকিস্তান?
খবর। শোনা যাচ্ছে, গত অগাস্টে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই, বাংলাদেশ ও তুরস্ককে কাছাকাছি আনার ক্ষেত্রে পাকিস্তান বড় ভূমিকা পালন করেছে। যার পর থেকেই ঢাকায় তুরস্কের এনজিওগুলোও দ্রুত সক্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশকে সামরিক সরঞ্জামও সরবরাহ করছে তুরস্ক। এভাবেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর তুরস্ক একটা এভিল অ্যাক্সিস তৈরি হচ্ছে।
ভারত-পাক সংঘর্ষে তুরস্কের ভূমিকা স্পষ্ট
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত যখন পাকিস্তানে প্রত্যাঘাত করে, তখন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছিল একমাত্র তুরস্ক। তারা সরাসরি পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। সেগুলি যাতে ব্যবহার করা যায়, তার জন্য সেই কাজে পারদর্শী সেনা পাঠিয়েছে পাকিস্তানে। বলা চলে, ভারতের বিরুদ্ধে ছায়া যুদ্ধ চালিয়েছে তারা। ভারত যখন তুরস্ককে সাহায্য করে মানবিক মুখ দেখিয়েছে, তখন তারা অন্যরূপ দেখিয়েছে। সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে তাদের আসল মুখ। এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে অশান্তি ছড়ানোর চক্রান্ত করছে তারা।
বিধিনিষেধ বাংলাদেশের
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই ভারত বিদ্বেষি জিগির তীব্র করেছে বাংলাদেশ। সেখানে হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে সেখানকার হিন্দু সন্ন্যাসীরা। রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতিতেও দ্বিচারিতার পরিচয় দিচ্ছে তারা। ভারতের বাজারকে নিজেদের বাজার বানিয়ে ফেলতে চেয়েছে তারা। উত্তর-পূর্ব ভারতের ছোট ছোট শহরগুলিতে ঢুকিয়ে দিয়েছে প্লাস্টিক, তৈরি পোশাক, কার্বনেটেড ড্রিংকস, রকমারি ভোগ্যপণ্য—কিন্তু ভারতের চাল, সুতা, কটন রফতানিতে তারা বসিয়ে দিয়েছে কড়া বিধিনিষেধ। এমনকি ভারতীয় পণ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে ‘বিশেষ চেকিং’।
বাংলাদেশকে পাল্টা জবাব দিল্লির
বাংলাদেশকে পাল্টা জবাব দিয়েছে দিল্লিও। এখন থেকে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকসহ বহু পণ্য কেবল কলকাতা ও নাভা শেভা বন্দর দিয়েই ঢুকতে পারবে। সীমান্ত পথে নয়। সীমান্তে ১১টি ল্যান্ড পোর্ট দিয়ে এতদিন অবাধে আমদানি চললেও, এবার সেই খেলায় লাগাম পড়ল। মুখের ওপর সপাটে ‘না’ বলেছে ভারত।দিল্লি বুঝিয়ে দিয়েছে, বন্ধুত্ব চলবে সমান শর্তে। বাংলাদেশ যদি নিজেদের ‘ভ্রাতৃত্ব’ দেখাতে না জানে, তবে ভারতও এবার তার আসল হিসেব বুঝিয়ে দেবে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাংলাদেশ যেভাবে নিজেদের ‘ক্যাপটিভ মার্কেট’ মনে করেছিল, এবার সেই ভ্রান্ত ধারণা ভেঙে চুরমার হবে।
বাংলাদেশের ১৫৭ কোটি ডলারের বাণিজ্যে আঘাত
বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের রফতানিকারকদের বক্তব্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। তবে বর্তমানে ভারত যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। স্থলপথে যে পণ্য তিনদিনে রফতানি করা যায়, বন্দর দিয়ে তা পাঠাতে ২ সপ্তাহ সময় লাগবে। এতে খরচও বাড়বে।
বাণিজ্য বন্ধ চিন্তায় বাংলাদেশ
স্থলবন্দর বন্ধ হতেই টনক নড়েছে বাংলাদেশের। তারা এখন আলোচনার পথ খুঁজতে চাইছে। সমস্যা মেটাতে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, “ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে আমরা এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানি না। বিষয়টি জানার পর আমরা পদক্ষেপ করতে পারব।” একই সঙ্গে তিনি বলেন, “যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তবে দু’পক্ষ আলোচনা করব এবং তা মেটানোর চেষ্টা করব।”
৫ দশকে ভারতে অবাধ বাণিজ্য ঢাকার
গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ক্রমেই বড় হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কখনো কখনো অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও শিল্প সুরক্ষার অজুহাতে ভারত তুলা, পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করেছে। পরে তা আবার চালুও হয়। আবার বাংলাদেশী কাঁচা পাটে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপও করে ভারত। এদিকে বাংলাদেশ আগেও ভারতের সুতা আমদানিতে বেশ কয়েকবার নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরে আবার তা তুলেও নিয়েছে।
বাংলাদেশ ২০০৩ সাল থেকে ভারতে সাবান রফতানির অবাধ সুযোগ পেয়ে আসছিল। এভাবেই তারা রফতানির পরিমাণ পৌঁছয় ৩ মিলিয়ন ডলারে। কিন্তু ভারতীয় শুল্ক বিভাগ ২০০৭ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সাবান আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে অবশ্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে তা স্থগিত করা হয়। ২০১০ সালে পুনরায় বাংলাদেশ থেকে সাবান আমদানির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান সেদেশের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভারত ২০১১ সাল থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিচ্ছে। ফলে দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি চলে গেছে। বর্তমান পাল্টাপাল্টি অবস্থান কারো জন্যই ইতিবাচক না। বাংলাদেশ ভারতের ওপর অনেক পণ্যের ক্ষেত্রেই নির্ভরশীল। আবার ভারতের পণ্য রফতানির গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের ওপরও ভারতের নির্ভরশীলতা রয়েছে। বৃহৎ পরিসরে বিষয়গুলোকে দেখে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমাদের পারস্পরিক সমস্যা নিরসন করে বাণিজ্য সচল করার পথে হাঁটতে হবে। বর্তমানে যা চলছে, দুই দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতির জন্য কাম্য নয়।’
বাংলাদেশের ছায়াযুদ্ধ?
বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা বুঝতে পারছেন কোন দিকে এগোচ্ছে তাঁদের দেশ। কিন্তু ভবী ভোলবার নয়। নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে এগোতে চাইছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস। পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য সহজ করতে আগের বিধিনিষেধে ছাড় দিচ্ছেন তাঁরা। পাকিস্তানের ব্যবসাদাররা যাতে সহজে বাংলাদেশের ভিসা পান, তার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর এভাবেই ভারতের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ চালাতে চাইছে বাংলাদেশ। হাসিনার বিরোধিতা করতে গিয়ে ভারতকেই শত্রু বানিয়ে নিজেদের ক্ষতি করছে তারা। রাজনৈতিক কারণে গা ঢলাঢলি করছে পাকিস্তান আর তুরস্কের সঙ্গে। ভারতে অস্থিরতা বজায় রাখার কূট পরিকল্পনা নিয়েই এগোতে চাইছে তারা। তবে এই ভুল দ্রুত না সংশোধন করলে নিজেদেরই যে বিপদ, তা বুঝতে পারছে সেদেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা।