নিউজ ডেস্ক: ওয়াকফ আইনে ব্রেক লাগাবার প্রশ্ন নেই। বুঝিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করা পিটিশনের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সংসদে পাশ হওয়া কোনও আইন সংবিধানসম্মত হিসেবে গণ্য হয়। আদালত এখানে তখনই হস্তক্ষেপ করতে পারে যদি কোনও গুরুতর অসঙ্গতির প্রমাণ পাওয়া যায়।
৩টি বিষয়ে শুনানি দাবি কেন্দ্রের
ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে ৩টি বিষয়ে শুনানির দাবি করে কেন্দ্র। বিষয়গুলি নিয়ে পদেক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছে তারা। এই তিনটি বিষয় হলো,
১. ওয়াকফ জমির ব্যবহার
২. ওয়াকফ কাউন্সিলে অমুসলিম সদস্যদের নিয়োগ
৩. রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডগুলির কার্যক্রম ও সরকারের জমি চিহ্নিতকরণ
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানিয়েছেন, আবেদনকারীদের বক্তব্যে আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে, যা তিনটি মূল বিষয় থেকে বাইরে। তিনি আদালতকে অনুরোধ করেছেন, যেন শুনানি শুধুমাত্র ওই তিনটি বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকে।
এমনকি সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল এবং অভিষেক মণু সিংভি, যারা আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন, তাদের এই দাবি মেনে নেয়নি। তারা বলেছেন, “আইনটি ওয়াকফ জমি অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।” সিবাল আরও বলেন, “নতুন আইনে বলা হয়েছে, শুধু পাঁচ বছর ধরে ইসলামী রীতিতে বিশ্বাসী ব্যক্তি ওয়াকফ করতে পারে। এটি সংবিধানবিরোধী।”
সংশোধিত ওয়াকফ আইনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন সিবালের
শুনানির একটি পর্যায়ে সিব্বল জানান, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপের উদ্দেশ্য কখনোই ছিল না ওয়াকফ সংক্রান্ত আগের আইনগুলিতে। কিন্তু ২০২৫ সালের নতুন আইনে সেটি সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে বলে জানান সিব্বল।
ওয়াকফ কাউন্সিলের সদস্য নিয়ে প্রশ্ন সিবালের
শুনানিতে সিব্বল জানান, এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের সিংহভাগ সদস্যকেই অমুসলিম রাখার কথা বলা হচ্ছে। নতুন আইনের ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, কাউন্সিলে মুসলিম সদস্য থাকবেন ১০ জন এবং অমুসলিম সদস্য থাকবেন ১২ জন। আগে সকলেই মুসলিম ছিলেন।
খাজুরাহোও তো সংরক্ষিত সৌধ, প্রার্থনাও হয়: প্রধান বিচারপতি
আগের আইনের থেকে বর্তমানের আইনের ফারাক বোঝাতে গিয়ে সিব্বল জানান, কোনও প্রাচীন সৌধকে সংরক্ষিত করা হলেও সেটির পরিচয় বদল করা হয়নি আগে। যেটি ওয়াকফ সম্পত্তি বলে চিহ্নিত ছিল, সেটি তেমনই রাখা হয়েছিল। সেটিকে সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। সে কথা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “খাজুরাহো মন্দির একটি প্রাচীন সৌধ হিসাবে সংরক্ষিত রয়েছে। তবু লোকে সেখানে প্রার্থনা করতে যায়।” প্রধান বিচারপতি গবইয়ের প্রশ্ন, “এটি কি আপনার প্রার্থনার অধিকার কেড়ে নিতে পারে?” এই প্রশ্নের জবাবে সিব্বল জানান, ১৯৫৮ সাল অনুসারে যেগুলিকে প্রাচীর সৌধ বা সংরক্ষিত হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলি আর নতুন আইন অনুসারে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না। সে ক্ষেত্রে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে গণ্য না হলে সেখানে প্রার্থনা করা যাবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
‘মন্দিরে, দরগায় তো প্রায়শই হয়’, সম্পত্তিদান প্রসঙ্গে বললেন প্রধান বিচারপতি
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সম্পত্তি দান প্রসঙ্গে সিব্বলের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি গবই বলেন, “এমনটা তো মন্দিরেও হয়। আমি দরগায় যাই, সেখানেও এমন হয়।”
আইনের দু’টি ধারা মূল বিলে ছিল না ! দাবি সিবালের
বিরতির পর প্রধান বিচারপতির এজলাস বসলে আবার সওয়াল শুরু করেন সিবাল। আদালতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া একটি তালিকা দেখিয়ে তিনি বলেন, “একবার সম্পত্তিগুলি সংরক্ষিত হয়ে গেলে সেগুলির আর ওয়াকফ বলে বিবেচিত হবে না। এর মধ্যে সম্ভলের জামা মসজিদও রয়েছে। কোথাও কোনও দ্বন্দ্ব তৈরি হলেই সেটিকে আর ওয়াকফ বলে বিবেচনা হবে না। যে তালিকাটি রয়েছে সেটিও সম্পূর্ণ নয়।” পাশাপাশি নতুন আইনের ৩ডি এবং ৩ই ধারায় যেগুলি উল্লেখ রয়েছে, সেটি প্রকৃত বিলে উল্লেখ ছিল না বলেও দাবি সিবালের। তাঁর বক্তব্য, যৌথ সংসদীয় কমিটিতেও এগুলি নিয়ে আলোচনা হয়নি।
আদালত কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করবে..
প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, “আদালত কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করবে, যখন কোনো গুরুতর প্রমাণ পাওয়া যাবে।” এদিকে, সিবাল দাবি করেন যে, গ্রাম পঞ্চায়েত বা একক ব্যক্তি কোনো জমি নিয়ে অভিযোগ তুলতে পারে, এবং সেই জমিটি আর ওয়াকফ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে না। তিনি বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা নিজেই বিচারক হিসেবে কাজ করবেন।”
সিবাল আরও বলেন, “মসজিদ, মন্দির বা অন্য ধর্মীয় স্থানগুলির জন্য রাষ্ট্র আর্থিক সহায়তা দিতে পারে না।” প্রধান বিচারপতি গাভাইও বলেছেন, “মসজিদ বা দরগাহর জন্য সরকার কিছু অনুদান দেয়, তবে মসজিদগুলির জন্য তা সীমিত।”
শুনানির পর আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেছে। ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে আরও বিশদ বিশ্লেষণ হবে। এই মামলাটি ধর্মীয় সম্পত্তি এবং সেগুলির ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্ন তুলছে।