নিউজ ডেস্ক: আমির হামজা। লস্কর ই তৈবার সহ প্রতিষ্ঠাতা। পাকিস্তানে আইএসআইয়ের নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থেকেও গুলিবিদ্ধ এই জঙ্গি নেতা। নিজের বাড়িতেই অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকধারীরা তাকে গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হামজাকে লাহোরের সেনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লস্কর প্রতিষ্ঠাতা ১৭ জনের ১জন
পাকিস্তানে ১৭ জন সন্ত্রাসবাদী মিলে লস্কর ই তৈবা গঠন করেছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল এই আমির হামজা। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় নথিভুক্ত করেছে। লস্করের প্রকাশনা সংস্থার সম্পাদকও এই হামজা। ২০ মে আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখন কী অবস্থা, তার কিছু খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে লস্কর লিংকট টেলিগ্রাম চ্যানেল তার সদস্যদের জানিয়েছে, এই ক্রাইসিসের মুহূর্তে মন শক্ত করতে হবে।
২০০৫ সালে বেঙ্গালুরু হামলায় জড়িত হামজা
২০০৫ সালে বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। সেই মডিউলের সঙ্গে যুক্ত ছিল এই আমির হামজা। ২০১৮ সালে সে লস্কর ত্যাগ করে। খোলে জৈশ এ মানকাফা বলে এক স্পিলন্টার গ্রুপ। জম্মু কাশ্মীরে সন্ত্রাস জারি রাখার চেষ্টায় ছিল এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।
কেন লস্কর ত্যাগ?
২০১৮ সালে লস্কর-অনুমোদিত দাতব্য প্রতিষ্ঠান জামাত-উদ-দাওয়া এবং ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের উপর আর্থিক চাপ বাড়ানো হলে হামজ়া লস্কর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয় বলে জানা গিয়েছে। পরবর্তীতে আমির জম্মু ও কাশ্মীর-সহ অন্যান্য স্থানে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জৈশ-এ-মানকাফা নামে একটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করে। ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, এই গোষ্ঠী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অবাধে কাজ করছে এবং বর্তমানে হামজ়ার লস্কর-ই-তৈবার নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় হামজা
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওালার বাসিন্দা ছিল হামজা। ২০১২ সালে তাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করে আমেরিকা। আফগান মুজাহিদিন নামেও সে পরিচিত। লস্কর প্রধান হাফিজ সইদের খুব কাছের লোক সে। এই হাফিজ আর আব্দুল রহমান মাক্কি মিলে হামজাকে লস্করের জেহাদি বিভাগের সেন্ট্রাল কমিটিতে যুক্ত করে।
৩ দশক ধরে জঙ্গি নাশকতায় যুক্ত
গত ৩ দশক ধরে ভারতে জঙ্গি নাশকতায় যুক্ত হামজা। ২০০০ সালের আগে থেকেই এই পাঠশালায় নাম লেখায় সে। ২০০৫ সালের বেঙ্গালুরু হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত এই হামজা। তার সঙ্গেই ছিল সইফুল্লা। সইফুল্লাকেও অজ্ঞাত পরিচয়কারী বন্দুকধারীরা পাক মাটি থেকে নিকেশ করে দিয়েছে। এইবার পালা ছিল হামজাকে সরানোর। গুরুতর আহত অবস্থাতেই সে পাক কমান্ডো হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছে।
লুকিয়ে হাফিজ-আজহার
পাকিস্তানে একের পর এক হামলার খবরে এখন দিশাহারা অবস্থা জৈশ প্রধান মাসুদ আজহার ও লস্কর প্রধান হাফিজ সইদের। তারা লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোথায় লুকিয়ে থাকলে, প্রাণে বাঁচা যাবে, সেকথা বুঝতে পারছে না তারা। বুঝতে পারছে না পাক গুপ্তচর সংস্থাও। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, প্রাণহানির আশঙ্কায় মাসুদ আজহার ও হাফিজ সইদকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এই সরিয়ে রাখলেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না তারা। কারণ, অপারেশন সিঁদুরের পর যেভাবে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করেছে ভারত, তাতে কোথায় লুকোলে প্রাণে বাঁচা যাবে, বুঝতে পারছে না তারা।আইএসআই চাইছে, পাকিস্তানেই নিরাপত্তা দিতে। কেননা, অন্য দেশ হলে সেই নিরাপত্তাও দেওয়া যাবে না।
কেন আতঙ্ক?
পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটিকে নিশানা করে আক্রমণ চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর মাধ্যমে মুরিদকেতে লস্করের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হয়। এই হামলায় একাধিক লস্কর জঙ্গি সংগঠনের সদস্যের মৃত্যুও নিশ্চিত করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। পাকিস্তানে ৪টি জঙ্গি ঘাঁটি উড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এরকম ৫টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। জঙ্গি নেতাদের একেবারে খুঁজে খুঁজে মেরেছে ভারত। এই পরিস্থিতিতেই আতঙ্কিত পাকিস্তান। আতঙ্কে জঙ্গি নেতারা।